ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্স, দ্রুততম বালক-বালিকা সুলতান-রূপা, দ্রুততম কিশোর-কিশোরী হাসান-দিশা

গতির লড়াইয়ের চার বিজয়ী-বিজয়িনীর ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৭ নভেম্বর ২০১৭

গতির লড়াইয়ের চার বিজয়ী-বিজয়িনীর ভাবনা

রুমেল খান ॥ ‘মাদার অব গেমস’ মানেই এ্যাথলেটিক্স। আর সেই গেমসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিসিপ্লিন ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। রুদ্ধশ্বাস গতির দৌড়ে কে হন বিজয়ী বা বিজয়িনী, তার দিকেই সবার কৌতূহলী দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে। সোমবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অপরাহ্ণে শেষ হলো জাতীয় জুনিয়র এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার ৩৩তম আসর। এতে সমাপনী দিনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ইভেন্ট (আগেরদিন হয়েছিল ১৪ ইভেন্ট)। দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট ছিল বালক-বালিকা এবং কিশোর-কিশোরীর ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। এতে স্বর্ণপদক জেতে বালক বিভাগে সুলতান আহমেদ, বালিকা বিভাগে রূপা খাতুন এবং কিশোর বিভাগে হাসান মিয়া এবং কিশোরী বিভাগে দিশা সুলতানা। এদের মধ্যে একমাত্র সুলতানই হচ্ছে নাটোর জেলার, আর বাকি সবাই বিকেএসপির। মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ সুলতান স্বর্ণ জেতে ফটোফিনিশে। অথচ এর আগেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বিকেএসপির নাদিম মোল্লাকে। নাদিম সঙ্গে সঙ্গেই গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়ে ফেলে! পরে এই ভুল শোধরানো হয়। এখন দেখা যাক, কে কিভাবে স্বর্ণ জিতল আর কার কেমন অনুভূতি, লক্ষ্য, প্রস্তুতি। ফটোফিনিশে ট্র্যাকের সুলতান হলো সুলতান ॥ ‘দৌড় শেষ করেই বুঝতে পারলাম আমিই প্রথম হয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম বিজয়ী হিসেবে নাদিম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছে আর ছবি ওঠাচ্ছে, তখন খুব খারাপ লেগেছে। পরে জানা গেল ফটোফিনিশে (১১.৪০ সেকেন্ড) আমিই প্রথম। যাহোক, এমনটা হতেই পারে।’ অপ্রত্যাশিত ফটোফিনিশে ট্র্যাকের সুলতান বনে যাওয়া নাটোরের গুরুদাসপুরের কুব্জিপুরের ছেলে সুলতান আহমেদের অভিব্যক্তি। এই আসরে ২০০ মিটার স্প্রিন্টেও স্বর্ণ জিতেছে সুলতান। গত আসরে ১০০ মিটার জিতেছিল রৌপ্যপদক। বড় ভাই মাহবুবুর রহমান ছিলেন স্প্রিন্টার। মূলত তাকে দেখেই এ্যাথলেটিক্সে আসার প্রেরণা পায় উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র সুলতান। কৃষক বাবা দবিরউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে সুলতানের লক্ষ্য অলিম্পিক খেলা। জাতীয় জুনিয়রে অংশ নেয়ার আগে সে দু’মাস ধরে রোজ দু’বেলা করে অনুশীলন করেছে নাটোর জেলা স্টেডিয়ামে। এজন্য রোজ তাকে ভাতা দেয়া হতো আড়াই শ’ টাকা। ‘আত্মবিশ^াস ছিল ১০০ মিটারে আমিই জিতব। এজন্য এলাকাবাসীর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য যুব গেমসেও অংশ নিয়ে স্বর্ণ জিততে চাই।’ উসাইন বোল্টের ভক্ত সুলতানের ভাষ্য। সুলতানের পায়ে দেখা যাচ্ছিল কম দামী রানিং শু। তার কোচ মিজানুর রহমান জানান, সুলতানের বাবার স্বল্প আয়। তাই ছেলেকে দামী শু কিনে দিতে পারেননি। তাছাড়া এই আসর শুরুর আগে ফেডারেশন দু’বার তারিখ পরিবর্তন করে। ফলে প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটে এবং এ্যাথলেটদের মনোবলেও চিড় ধরে। রূপা জিতল তিন সোনা ॥ রূপা জিতল তিন সোনা। বাক্যটি গোলমেলে মনে হচ্ছে? রূপা খাতুন জিতল তিন সোনা। এবার নিশ্চয়ই পরিষ্কার? হ্যাঁ, বালিকা বিভাগের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জেতে (১২.৬০ সেকেন্ড) রূপা। এছাড়া ২০০ মিটার এবং ৪ গুণীতক ১০০ মিটারেও সোনা জেতে রূপা। এখানেই শেষ নয়। লং জাম্পে জেতে রৌপ্যপদক। যদিও এই ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছিল সে। স্বর্ণ জিতেছিল ২০০ মিটারেও। তবে ১০০০ মিটারে জিতেছিল রৌপ্য। ১০০ মিটারে গতবারের ব্যর্থতা এবার সাফল্য রূপান্তর করেছে নবম শ্রেণীর ছাত্রী এবং ২০১৫ সালে বিকেএসপি ভর্তি হওয়া রূপা। এ্যাথলেটিক্স নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘আমি দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত এ্যাথলেটিক্স নিয়ে ট্রাই করব। যদি উন্নতি করি,তাহলে এটা চালিয়ে যাব। নইলে এ্যাথলেটিক্স ছেড়ে দিয়ে পড়াশোনায় মন দেব।’ আরও যোগ করে, ‘এ খেলায় ফ্যাসিলিটিস ও টাকা-পয়সা নেই বলে মেয়েরা আসতে চায় না।’ এ্যাথলেটিক্সে আসার আগে ফুটবল খেলত রূপা। আগামীতে ১০০ মিটারে নাজমুন নাহার বিউটির টাইমিংয়ের বাংলাদেশী রেকর্ড ভাঙ্গা এবং দ্রুততম মানবী হওয়াই রূপার এখনকার ধ্যান-জ্ঞান। দিশার আশা ॥ ১২.৮০ সেকেন্ড টাইমিং করে এবারে দ্রুততম কিশোরী দিশা সুলতানা। এর আগে এই ডিসিপ্লিনের বালিকা ইভেন্টে ১৩.২০ সেকেন্ড নিয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিল মানিকগঞ্জের ঘিওরের মেয়ে দিশা। ছোটবেলা থেকেই এ্যাথলেটিক্স ভালবাসত ও স্কুলের খেলাগুলোতে নিয়মিত ভাল রেজাল্টও করত। এজন্য দ্বিতীয় কোন খেলা বেছে নেয়ার কথা ভাবেনি। ‘আত্মবিশ্বাস ছিল জেতার। ভবিষ্যতে টাইমিংয়ের আরও উন্নতি করতে চাই।’ স্বর্ণজয়ের পর দিশার প্রতিক্রিয়া। যদিও এ বছরের মার্চে অস্ট্রিয়ায় স্পেশাল অলিম্পিক খেলতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়ে মাসখানেকের মতো খেলার বাইরে ছিল। সেখান থেকে কামব্যাক করে সোনা জেতাটা নিঃসন্দেহে কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করেছে দিশা। কোচ মতি আলমের এই শিষ্যার ভাষ্য, ‘অলিম্পিক নয়, আমার লক্ষ্য এসএ গেমসে অংশ নিয়ে ভাল ফল করার। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। শেলি এ্যান-ফ্রেজারের ভক্ত দিশার বাবা বাচ্চু মিয়া একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। ২০১৩ সালে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া দিশা এখন উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ১০০ মিটারের চেয়ে ২০০ মিটার স্প্রিন্টই বেশি পছন্দ দিশার। পরীক্ষা হল থেকে ট্র্যাকে নেমে স্বর্ণ হাসানের ॥ ২০১৬ আসরে বালক বিভাগের জয়ী হাসান মিয়ার টাইমিং ছিল ১০.৭০ সেকেন্ড, যা ছিল জাতীয় রেকর্ড। মজার ব্যাপার এবার কিশোর বিভাগে ১০.৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে একই ইভেন্টে জাতীয় রেকর্ড করে স্বর্ণ জিতল কুমিল্লার মুরাদনগরের সীমানাপারের ছেলে হাসান। ‘টার্গেট ছিল আরও ভাল টাইমিং করার। তবে ইলেকট্রনিক টাইমিং ছাড়া ভাল টাইমিং করা সম্ভব নয়।’ স্বর্ণজয়ের পর এমনই ছিল বিকেএসপির স্প্রিন্টার হাসানের প্রতিক্রিয়া। এবার ৪ গুণীতক ১০০ মিটারেও দলগত স্বর্ণ জিতেছে সে। সোমবার ছিল হাসানের জেএসসি পরীক্ষা। সাভার ক্যান্টনমেন্ট থেকে পরীক্ষা শেষ করে বেলা ১২টায় রওনা হয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে পৌঁছেই ট্র্যাকে নেমে পড়ে স্বর্ণ! ‘অনেক কষ্ট হয়েছে এভাবে আসতে। কিন্তু স্বর্ণ জিতে সব কষ্ট ভুলে গেছি।’ পাঁচ ফুট সাড়ে চার ইঞ্চির অধিকারী হাসানের অভিব্যক্তি। ২০১৬ আসরে হাসান বালক বিভাগে জিতেছিল তিনটি সোনা। ১০০ মিটারে প্রয়াত মাহবুব আলমের রেকর্ড ভাঙ্গার স্বপ্ন দেখা হাসান। এজন্য সে চায় ধাপে ধাপে এগোতে।
×