ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কট্টরপন্থীদের চাপে রাখার কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৭ নভেম্বর ২০১৭

কট্টরপন্থীদের চাপে রাখার কৌশল

যুগ যুগ ধরে সৌদি আরবের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যে ব্যাপক ক্ষমতা প্রয়োগ করে আসছিল, সে দেশের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচীর দরুন তা আর সম্ভব হবে না বলে ঘরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমস। আধুনিক ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনার অধিকারী যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ইতোমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, সৌদি আরব এতদিনকার কট্টরপন্থী ওয়াহাবী মতবাদ পরিহার করে উদার বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে। এর অংশ হিসেবে তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছেন এবং ধর্মীয় কারণে কেউ যাতে নিগৃহীত বা নির্যাতিত না হয় সেজন্য তিনি ‘ধর্মীয়’ পুলিশের গ্রেফতারি ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছেন। নারীরা এখন থেকে জনজীবনে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে, এমনকি তারা পুরুষদের মতো স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা উপভোগ করতে পারবে। যুবরাজ মুহাম্মদের বিশ্বাস যে, কট্টর ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আক্রান্ত সৌদি সমাজ ও রাজনৈতিক পরিম-লে যদি এসব পরিবর্তন আনা যায় তবে সৌদি জনজীবন মোল্লাদের ক্রমহ্রাসমান প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে উদারনৈতিক ভাবধারা অনুসরণ করতে সক্ষম হবে। বর্তমানে সৌদি আরবে যে ওয়াহাবী মতাদর্শের রাজতন্ত্র চলছে তা অত্যন্ত কট্টর ও আপোসহীন ইসলামী ভাবধারায় আক্রান্ত। সে দেশের মানুষ যে খুশি মনে এদের অনুশাসন বা নিয়ম-কানুন মেনে চলছে তা নয়; বরং সর্বত্র ইমাম ও ধর্মীয় পুলিশের সতর্ক নজরদারির মধ্যে তারা সারাক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকে। সৌদি আরবে ইসলাম ছাড়া প্রকাশ্যে অন্য কোন ধর্মের আচার অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ। এছাড়া নারী-পুরুষের ‘অবৈধ’ মেলামেশার জন্য শিরোñেদ এবং তুচ্ছ কারণে কঠোর দ-ের বিধান রয়েছে। যেমন পিতার অবাধ্যতা বা স্বধর্ম পরিত্যাগ করার জন্য কঠোর বেত্রাঘাত ও কারাদ-ের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটে থাকে। কারও জিনিস চুরির জন্য হাত কাটার ঘটনাও নিয়মিতভাবে হয়ে থাকে। সেখানে মদ্যপান নিষিদ্ধ এবং প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার বিধান চালু আছে। মেয়েদের সর্বাঙ্গ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখার নির্দেশ একেবারে শুরু থেকে কার্যকর আছে। সব মিলিয়ে সেখানকার ইসলামী প-িত ও ধর্মীয় পুলিশের খবর সংগ্রহ ও নজরদারির জন্য এক গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইসলামী অনুশাসন প্রধানত রাজধানী রিয়াদের উত্তরে বুরাইদা নামক শহর যা রক্ষণশীল ইমাম ও মুসলিম প-িতদের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত, সেখান থেকে জারি করা হয়। শনিবার মুহাম্মদ বিন সালমানের আদেশে ১৭ জন রাজপরিবারের সদস্য, বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও ধর্মীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেককে দুর্নীতির অভিযোগে গৃহবন্দী বা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়াও অনেক কট্টরপন্থী ইমাম ও আলেমকে আটক করা হয়েছে। যারা এখনও আটক হয়নি তাদের অন্য ধর্ম সম্পর্কে শ্রদ্ধাপূর্ণ ও সহনশীল আচরণ করতে বলা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মধ্যে এ নিয়ে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে যে, এটি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের ধর্মীয় উদারনীতির ফসল, না এর ভেতরের রাজনীতি তাকে এসব কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে। সবাই প্রায় একবাক্যে এ সিদ্ধান্তে উপনীত যে, শনিবারের ধরপাকড় মূলত রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। কারণ ওয়াহাবী মতবাদপুষ্ট সৌদি রাজতন্ত্র মূলত কট্টরপন্থী আলেম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের সমর্থনের ওপর ভিত্তি করেই রচিত। তাই স্বীয় রাজনৈতিক ভিত শক্তিশালী করার জন্য বিরোধীদের ধর্মীয় ভিত্তি দুর্বল করার লক্ষ্যে তিনি এসব পদক্ষেপ নেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে পিতা সালমান সৌদি সিংহাসনে বসার পর থেকেই ৩২ বছর বয়স্ক মোহাম্মদ বিন সালমান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তাকে ইয়েমেনে যুদ্ধ পরিচালনাসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি যুবরাজ পদে অধিষ্ঠিত হন। রাজপরিবারের অনেক যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ ভাইদের বঞ্চিত করে তাকে যুবরাজ করায় ঘরে-বাইরে অন্তর্দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। তাই নিজেকে নিরঙ্কুশভাবে ক্ষমতার অধিকারী করার জন্য দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে রাজপরিবার ও মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের বরখাস্ত এবং গ্রেফতার করা হয়। এরও আগে যুবরাজ মুহাম্মদ দেশের প্রধান তিনটি নিরাপত্তা বাহিনীকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসেন। কিন্তু সৌদি আরবের মতো কট্টর রক্ষণশীল সমাজে রাতারাতি এ পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। এর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া মারাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে বলে তাদের ধারণা। কপ্টার দুর্ঘটনায় যুবরাজ মনসুর নিহত ॥ সৌদির এক প্রিন্স বেশ কয়েকজন সহকর্মীসহ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন। ইয়েমেন সীমান্তের কাছে রবিবার এ ঘটনাটি ঘটে বলে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে। খবর বিবিসির। সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আসির প্রদেশের ডেপুটি গবর্নর প্রিন্স মনসুর বিন মুকরিন কয়েকজন কর্মকর্তাসহ হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করার সময় সেটি বিধ্বস্ত হয় বলে আল ইখবরিয়া নিউজ চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদপত্র ওকাজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই কর্মকর্তারা ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী আসিরের উপকূল ঘুরে দেখার সময় তাদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। তারা ওই এলাকায় একটি তদারকি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
×