ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শতাধিক দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে

আগামী ৬ ডিসেম্বর শুরুহচ্ছে ‘ডিজিটালওয়ার্ল্ড’ প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ নভেম্বর ২০১৭

আগামী ৬ ডিসেম্বর শুরুহচ্ছে ‘ডিজিটালওয়ার্ল্ড’ প্রদর্শনী

ফিরোজ মান্না ॥ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী ৬ ডিসেম্বর। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে (বিআইসিসি) পঞ্চমবারের মতো তথ্যপ্রযুক্তির এই মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে দেশী-বিদেশী শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। আগামী ৬ ডিসেম্বর সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭’ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। প্রদর্শনী শেষ হবে ৯ ডিসেম্বর। আয়োজক সংস্থা তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে। আয়োজনে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)। এবারের প্রদর্শনীর প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘আগামীর জন্য প্রস্তুত’ (রেডি ফর টুমোরো)। মূলত এ প্রতিপাদ্য তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতিকেই প্রতিফলিত করে। বাংলাদেশ এখন আর অনুসরণকারী নয় বরং ভবিষ্যত বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। দেশে তৈরি হয়েছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। দক্ষ মানব সম্পদ আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজন প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অনেক দূর এগিয়েছি। আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের পলিসি সহায়তা এবং প্রণোদনা প্রদান করছি। হার্ডওয়্যার সংযোজন ও উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালে শুল্ক অব্যাহতি দিয়েছি। কয়েকটি ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ জনবল তৈরি করা হয়েছে। দক্ষ জনবল তৈরির কাজ অব্যাহত রয়েছে। ২০২১ সালের আগেই দেশে ৭০ হাজারের বেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সৃষ্টি হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশে এ খাত থেকে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার টার্গেট বাস্তবায়ন হবে বলে আমি মনে করি। আইসিটি-ইকোসিস্টেমের সব অনুষঙ্গে আমরা এখন প্রস্তুত। দেশবাসীকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মহাযজ্ঞে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী পলক। একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সামনে যেমন অফুরান সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে তেমনিভাবে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন করছে। এ সব সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার মাধ্যমে নিয়ত পরিবর্তনশীল তথ্যপ্রযুক্তির বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে আমাদের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সাইবার সিকিউরিটি, বিগ ডাটা এনালাইটিকসহ তথ্যপ্রযুক্তির চলমান ও ভবিষ্যত ধারায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। আর এসব বিষয়ের ওপর সম্যক ধারণার জন্য ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের আয়োজন। পলক বলেন, বাংলাদেশকে প্রযুক্তি খাতের আদর্শ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি উৎপাদন-সংযোজনে ব্যবহৃত হয় এমন কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের বিদ্যমান শুল্ক প্রায় শূন্যের কাছে নিয়ে গিয়েছি। ৯৪ ধরনের কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশে আগেকার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শুল্ক এখন মাত্র ১ শতাংশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইটি-আইটিএস ও হার্ডওয়্যার খাতে রফতানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। ফলে এ খাতে আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে দেশীয় হার্ডওয়্যার শিল্পের বিকাশ ও এই শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশে এখন বিশ্বখ্যাত স্যামস্যাং কনজ্যুমার ইলেক্ট্রনিক্স কারখানা স্থাপন করেছে তেমনিভাবে দেশী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনও তাদের মোবাইল সংযোজন কারখানার যাত্রা শুরু করেছে। এছাড়াও দেশে মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা স্থাপনের জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে সিম্ফোনি, আমরা টেকনোলজিস, এলজি ও হুয়াওয়ে। ফলে দেশী প্রযুক্তি পণ্যের বিশাল চাহিদা মেটাতে আর আমাদের আমদানি করতে হবে না। আমরা এখন সংযোজন ও উৎপাদন শুরু করেছি। আশা রাখি, বাংলাদেশ আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে শুধু উৎপাদনই করবে না, রফতানি করতেও সক্ষম হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, এবারের মেলা বৃহৎ পরিসরে ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। চার দিনব্যাপী এ আয়োজনে গুগল-নুয়ান্সসহ খ্যাতিমান তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। অনুষ্ঠিত হবে ২৪টি সেমিনার। এসব সেমিনারে দেশী-বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা বক্তব্য রাখবেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইটি ক্যারিয়ার-বিষয়ক সম্মেলনের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে থাকবে ডেভেলপার সম্মেলন। প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য প্রদর্শনীতে সফটওয়্যার শোকেসিং, ই-গবর্নেন্স এক্সপো, স্টার্টআপ জোন, কিডস জোন, মেড ইন বাংলাদেশ জোন ও ইন্টারন্যাশনাল জোন ছাড়াও আইসিটি সংশ্লিষ্ট বেশকিছু প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। মেলার পার্টনার হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার এ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্য), ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ), বাংলাদেশ উইমেন ইন আইটি (বিআইডব্লিউটি), সিটিও ফোরাম। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সবার প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসইট www.digitalworld.org.bd এর মাধ্যমে মেলায় প্রবেশের জন্য অগ্রণী রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
×