ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Taslima Afroz (Eity);###;M.Sc.-Zoology, Entomology (First Class 1st), ;###;B.Sc.-Horn?s-Zoology (First Class 9th);###;Achieved: Best Teacher Award, Lecturer in Zoology, Arambagh High School &;###;College, Arambagh, Motijheel, Dhaka -1000.;###;Mob: 01717-2

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ জীববিজ্ঞান

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ৭ নভেম্বর ২০১৭

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ জীববিজ্ঞান

(প্রথম অধ্যায়: জীবন পাঠ) আজকের আলোচনা: জীবের শ্রেণিবিন্যাস, শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য, জীবজগৎ ও এর শ্রেণিবিন্যাস জীবের শ্রেণিবিন্যাস: জানা, বোঝা এবং শেখার সুবিধার্থে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন উদ্ভিদের প্রায় চার লক্ষ (৪,০০,০০০) ও প্রাণীর প্রায় তের লক্ষ (১৩, ০০,০০০) প্রজাতির নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে। তবে এ সংখ্যা চূড়ান্ত নয়, কেননা প্রায় প্রতিদিনই আরও নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা সংযুক্ত হচ্ছে। অনুমান করা হয় যে ভবিষ্যতে সব জীবের বর্ণনা শেষ হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি। এই অসংখ্য জীব (উদ্ভিদ+প্রাণি)কে সুষ্ঠুভাবে বিন্যাস করা বা সাজানোর প্রয়োজনের তাগিদেই শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। শ্রেণিবিন্যাস: পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে জীবজগতকে বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠিতে শ্রেণীবদ্ধ করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে শ্রেণিবিন্যাস বলা হয়। শ্রেণিবিন্যাসে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রেখেছেন সুইডিশ প্রকৃতিবিদ ক্যারোলাস লিনিয়াস (১৭০৭-১৭৭৮)। তিনি সর্বপ্রথম জীবের পূর্ণ শ্রেণিবিন্যাসের এবং নামকরণের ভিত্তি প্রর্বতন করেন। শ্রেণিবিন্যাসের লক্ষ্য: মূলত একটাই। তা হচ্ছে এই বিশাল ও বৈচিত্র্যময় জীবজগতকে সহজভাবে অল্প পরিশ্রমে এবং অল্প সময়ে সঠিকভাবে জানা। শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য: ১. প্রতিটি জীবের দল ও উপদল সম্বন্ধে জ্ঞান আহরণ করা। ২. জীবজগতের ভিন্নতার প্রতি আলোকপাত করে আহরিত জ্ঞানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকে সং্িক্ষপ্তভাবে উপস্থাপন করা। ৩. প্রতিটি জীবকে শনাক্ত করে তার নামকরণের ব্যবস্থা করা। ৪. সর্বোপরি জীবজগৎ ও মানব কল্যাণে প্রয়োজনীয় জীবসমূহকে শনাক্ত করে তাদের সংরক্ষণে সচেতন হওয়া। জীবজগৎ ও এর শ্রেণিবিন্যাস: শ্রেণিবিন্যাসের প্রর্বতক সুইডিশ প্রকৃতিবিদ Carolus Linnaeus (ক্যারোলাস লিনিয়াস) অসংখ্য নমুনা জীবের বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করে তিনি জীবজগতকে দুটি রাজ্যে ভাগ করেন: উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণিজগৎ যা লিনিয়াস-এর সময়কাল থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিবেচনা করা হতো। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বর্তমানে কোষের উঘঅ ও জঘঅ এর প্রকারভেদ, জীবদেহে কোষের বৈশিষ্ট্য, কোষের সংখ্যা ও খাদ্যাভ্যাসের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে আর.এইচ.হুইট্টেকার (R.H. Whittaker) ১৯৬৯ সালে জীবজগতকে Five Kingdom (পাঁচটি রাজ্য) এ ভাগ করার প্রস্তাব করেন। পরবর্তীতে Margulis (মারগুলিস) ১৯৭৪ সালে আর.এইচ.হুইট্টেকার (R.H. Whittaker) এর শ্রেণিবিন্যাসের পরিবর্তিত ও বিস্তারিত রূপ দেন। তিনি সমস্ত জীবজগতকে দুটি Super Kingdom (সুপার কিংডম) এ ভাগ করেন এবং পাঁচটি জগতকে এই দুটি সুপার কিংডমের আওতাভুক্ত করেন। চিত্র: জীবজগতের শ্রেণিবিভাগ সুপার কিংডম Super Kingdom: - ১: প্রোক্যারিওটা (Prokaryota): এরা আদিকোষ (নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয়) বিশিষ্ট এককোষী, আণুবীক্ষণিক জীব। Kingdom (রাজ্য)-১: Monera(মনেরা): বৈশিষ্ট্য: ১. এরা এককোষী, ফিলামেন্টাস (একটির পর একটি কোষ লম্বালম্বিভাবে যুক্ত হয়ে ফিলামেন্ট গঠন করে), কলোনিয়াল । ২. কোষে ক্রোমাটিন বস্তু থাকে কিন্তু নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা, প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা ইত্যাদি নেই কিন্তু রাইবোসোম আছে। ৩. কোষ বিভাজন দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। ৪. খাদ্যগ্রহণ পদ্ধতি প্রধানত শোষণ। তবে কেউ কেউ ফটোসিনথেসিস বা সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করে উদাহরণ: Nostoc(নীলাভ সবুজ শৈবাল), Escherichia coli (ব্যাকটেরিয়া) প্রভৃতি। Super Kingdom (সুপার কিংডম) -২: Eukaryota (ইউক্যারিওটা): এরা প্রকৃতকোষ (নিউক্লিয়াস সুগঠিত) বিশিষ্ট এককোষী বা বহুকোষী জীব। এরা এককভাবে অথবা কলোনি আকারে দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। করহমফড়স (রাজ্য)-২: চৎড়ঃরংঃধ (প্রোটিস্টা): বৈশিষ্ট্য: ১. এরা এককোষী বা বহুকোষী, একক বা কলোনিয়াল (দলবদ্ধ) বা ফিলামেন্টাস। ২. কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে, ক্রোমাটিন বস্তু নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা পরিবৃত্ত থাকে। ক্রোমাটিন বস্তুতে উঘঅ, জঘঅ ও প্রোটিন থাকে। কোষে সকল ধরণের অঙ্গাণু থাকে। ৩. খাদ্য গ্রহণ শোষণ, গ্রহণ বা ফটোসিনথেটিক পদ্ধতিতে ঘটে। ৪. মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটে এবং কনুজেগশনের মাধ্যমে অর্থাৎ জৈবনিকভাবে ভিন্ন কিন্তু গঠনগতভাবে এক, এইরুপ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে। কোন ভ্রূণ গঠিত হয় না। চিত্র: অসড়বনধ চিত্র: চধৎধসবপরঁস চিত্র: উরধঃড়স উদাহরণ: ঊহঃধসড়বনধ (অ্যামিবা) চধৎধসবপরঁস (প্যারামেসিয়াম), উরধঃড়সং (এককোষী ও বহুকোষী শৈবাল) প্রভৃতি। করহমফড়স (রাজ্য)-৩: ঋঁহমর (ফানজাই): অধিকাংশই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী। ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত। বৈশিষ্ট্য: ১. দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম (সরু সুতার মতো অংশ) দিয়ে গঠিত। ২. এগুলোর নিউক্লিয়াস সুঠিত। কোষপ্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত। ৩. খাদ্যগ্রহণ শোষণ পদ্ধতিতে ঘটে। ৪. হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে। উদাহরণ: ঝধপপযধৎড়সুপবং (ইষ্ট), চবহরপরষষরঁস (প্যানিসিলিয়াম), অমধৎরপঁং (মাশরুম) প্রভৃতি। করহমফড়স(রাজ্য)-৪: চষধহঃধব (প্লানটি): এরা সপু¯পক, আর্কিগোনিয়েট অর্থাৎ আর্কিগোনিয়াম বা স্ত্রীজনন অঙ্গ বিশিষ্ট উদ্ভিদ। প্রধানত স্থলজ, তবে অসংখ্য জলজ প্রজাতি আছে। বৈশিষ্ট্য: ১. এরা প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোক সংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ। ২. এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। ৩. এদের ভ্রুণ সৃষ্টি হয় এবং তা থেকে ডিপ্লয়েড পর্যায় শুরু হয়। ৪. এদের অ্যানাইসোগ্যামাস অর্থাৎ আকার, আকৃতি অথবা শরীরবৃত্তীয় পার্থক্য বিশিষ্ট ভিন্নধর্মী দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন হয়। প্লানটিকে আবার চার ভাগে ভাগ করা হয় যা ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো: প্লানটি মসবর্গীয় উদ্ভিদ ফার্ণবর্গীয় উদ্ভিদ নগ্নবীজী উদ্ভিদ আবৃতবীজী উদ্ভিদ চিত্র: অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং (কাঁঠাল গাছ) চিত্র: ঘুসঢ়যধবধ হড়ঁপযধষর (শাপলা) উদাহরণ: উন্নত সবুজ উদ্ভিদ (যেমন: কাঁঠাল গাছ (অৎঃড়পধৎঢ়ঁং যবঃবৎড়ঢ়যুষষঁং), শাপলা (ঘুসঢ়যধবধ হড়ঁপযধষর)) প্রভৃতি। করহমফড়স (রাজ্য)-৫: অহরসধষরধ (অ্যানিমেলিয়া): বৈশিষ্ট্য: ১. এরা নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট ও বহুকোষী প্রাণী। ২. এদের কোষে কোনো জড় কোষপ্রাচীর, প্লাস্টিড ও কোষগহবর নাই। প্লাস্টিড না থাকায় এরা হেটারোট্রফিক অর্থাৎ পরভোজী। ৩. এরা খাদ্য গলাধঃকরণ করে, দেহে জটিল টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান। ৪. এরা প্রধানত যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। পরিণত ডিপ্লয়েড পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীর জননাঙ্গ থেকে হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট উৎপন্ন হয়। ৫. ভ্রণ বিকাশকালীন সময়ে ভ্রণীয় স্তর সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : প্রোটোজোয়া ব্যতীত সকল অমেরুদন্ডী এবং মেরুদন্ডী প্রাণী ( মানুষ Homo sapiens, রয়েল বেঙ্গল টাইগার Panthera tigris) প্রভৃতি। ২০০৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টমাস কেভলিয়ার-স্মিথ (ঞযড়সধং ঈধাষরবৎ ঝসরঃয) প্রোটিস্টাকে প্রোটোজোয়া (চৎড়ঃড়ুড়ধ) ও ক্রোমিস্টা (ঈযৎড়সরংঃধ) নামে দুইটি ভাগে ভাগ করেন এবং মনেরাকে ব্যাকটেরিয়া রাজ্য হিসেবে পুনঃনামকরণ করেন। এভাবে তিনি জীবজগতকে মোট ছয়টি রাজ্যে ভাগ করেছেন। এই বিষয়ে তোমরা উপরের শ্রেণিতে আরও বিস্তারিত জানবে।
×