ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিদ্বন্দ্বিতা ম্যাচে ভিক্টোরিয়ান্সের হার ৪ উইকেটে, টানা দ্বিতীয় জয় নাসিরবাহিনীর

কুমিল্লাকে হারিয়ে চমক অব্যাহত সিলেটের

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

কুমিল্লাকে হারিয়ে চমক অব্যাহত সিলেটের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরের দ্বিতীয়দিনেই টান টান উত্তেজনার ম্যাচের দেখা মিলল। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলো সিলেট সিক্সার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মধ্যকার ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটে ম্যাচ জিতে নিল সিলেট সিক্সার্স। শেষ ওভারে জিততে ৬ বলে ১০ রানের দরকার ছিল। নুরুল হাসান সোহান ব্যাট হাতে নেমে ‘ছক্কা-বাউন্ডারি’ হঁাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। টানা দুইদিনে দুই ম্যাচ জিতে গেল সিলেট সিক্সার্স। নবাগত দলটি দারুণ ঝলক দেখাচ্ছে। শনিবার ঢাকা ডাইনামাইটসকে হারানোর পর রবিবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকেও কুপোকাত করেছে দলটি। বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ঢাকাকে যখন ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে সিলেট তখনই বোঝা গেছে; নবাগত দলটি এবার চমক দেখাবে। এবার বিপিএলের দ্বিতীয়দিনেই সেই চমক ধরেও রেখেছে দলটি। নাসির হোসেনের নেতৃত্বে টানা দুই ম্যাচেও জিতল। নিজ ভূমে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলার সুযোগ পেয়ে দুই ম্যাচেই জিতে গেল। হাতে আছে এখনও আরও দুটি ম্যাচ। যদি সেই দুই ম্যাচেও জিততে পারে সিলেট তাহলে পয়েন্ট তালিকায় শুরুতেই নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নেবে। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রবিবার হওয়া সিলেট-কুমিল্লা ম্যাচটিতে সিলেট টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঢাকার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচেও টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে সাফল্য পেয়েছিল সিলেট। রান অতিক্রম করাতেই বেশি আত্মবিশ্বাসী দলটি। আর তাইতো কুমিল্লা ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪৫ রান করার পর সিলেট ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯.৫ ওভারে ১৪৮ রান করে জিতে। একটা সময় গিয়ে সিলেটের হারের শঙ্কাও জাগে। শেষদিকে দুই ওভারে ১৬ রান দরকার থাকে। ১৯তম ওভারে ৬ রান হয়। আবার একটি উইকেটও হারায় সিলেট। শেষ ওভারে জিততে ১০ রান দরকার। এমন মুহূর্তে ডোয়াইন ব্রাভো বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই শুভাগতকে আউট করে দেন। উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। ৫ বলে যখন জিততে ১০ রানের দরকার এমন মুহূর্তে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন নুরুল হাসান সোহান। তখন ম্যাচ সিলেটের নিয়ন্ত্রণেই চলে আসে। ৪ বলে ৪ রান দরকার থাকে। পরের দুই বলে ১ রান করে হয়। ২ বলে জিততে যখন ২ রান দরকার, পঞ্চম বলে গিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন সোহান (১১*)। দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ৩ বল খেলার সুযোগ পেয়েই ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন সোহান। অবশ্য শুরুতেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন প্রথম ম্যাচের ম্যাচসেরা উপুল থারাঙ্গা ও আন্দ্রে ফ্লেচার। ঢাকাকে যেভাবে ভুগিয়েছেন থারাঙ্গা ও ফ্লেচার। ঠিক তেমনি কুমিল্লাকেও ভুগিয়েছেন। তারা দুইজন এমনভাবে খেলছিলেন যেন কুমিল্লাকেও বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দেবে সিলেট। কিন্তু ৭৩ রানে গিয়ে ফ্লেচার (৩৬) আউট হওয়ার পর একটু ঝিমিয়ে পড়ে সিলেট। এরপর এক এক করে ৮৩ রানে সাব্বির রহমান রুম্মন, ১০২ রানে আবারও হাফসেঞ্চুরি করে ম্যাচসেরা হওয়া উপুল থারাঙ্গা (৫১) ও ১১৮ রানে নাসির হোসেন আউট হওয়াতে সিলেটের জয় পাওয়া নিয়ে একটু সংশয় তৈরি হয়। জিততে যখন ৭ বলে ১০ রানের দরকার এমন মুহূর্তে টানা দুই বলে ইংল্যান্ডের রস হোয়াইটলি ও শুভাগত হোম আউট হয়ে যান। ৫ বলে জিততে তখন দরকার ১০ রান। ব্যাট হাতে নামেন সোহান। দেখান তার ব্যাটিং ঝলক। সেই ঝলকে টানা দুই ম্যাচে জয় তুলে নেয় সিলেট সিক্সার্স। শুরুতেই কুমিল্লা দুর্বল দলে পরিণত হয়ে যায়। আইকন ক্রিকেটার ওপেনার তামিম ইকবাল ইনজুরির জন্য খেলতে পারছেন না। আবার জাতীয় দলের পাকিস্তানী কোন ক্রিকেটারও খেলতে পারছেন না। এরপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলসে রক্ষা মিলেছে। স্যামুয়েলসের ৬০ রানে দেড় ’শ রানের কাছাকাছি যায়। দুই ওপেনার লিটন ও ইমরুলও দুর্দান্ত শুরুই করেছিলেন। ৩৬ রান পর্যন্ত এ দুই ব্যাটসম্যান এগিয়ে যান। কুমিল্লার যখন উইকেট পড়ছিল না তখন ত্রাতা হয়ে আবার আবির্ভাব ঘটে সিলেটের অধিনায়ক নাসির হোসেনের। ইমরুলকে আউট করে দেন নাসির। এরপর ৪৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় কুমিল্লা। সেখান থেকে স্যামুয়েলস ও কাপালী মিলে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৮৬ রান হতেই দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করা কাপালীও সাজঘরে ফেরেন। স্যামুয়েলস তবুও উইকেট আঁকড়ে থাকেন। কুমিল্লার নেতৃত্ব দেয়ার কথা তামিমের। তামিম না থাকলে ইমরুলের অধিনায়কত্ব করার কথা শোনা গিয়েছিল। কিন্তু আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবীর কাঁধে সেই দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়। কাপালীর আউটের পর নবী ব্যাট হাতে নামেন ঠিকই। কিন্তু ঝলক দেখাতে পারেননি। তবে স্যামুয়েলসের ভাল সঙ্গ দিয়েছেন। ১১৪ রানে গিয়ে নবী আউট হওয়ার পর স্যামুয়েলস ও ডোয়াইন ব্রাভো মিলে ১৪০ রানের কাছাকাছি চলে যান। মনে করা হচ্ছিল দল ১৫০ রানও টপকে যাবে। কিন্তু ১৩৭ রানে স্যামুয়েলস (৬০) আউটের পর ব্রাভো (১১*) চেষ্টা করেও দলকে দেড় ’শ রানে নিতে পারেননি। ৫ রান কম হয়েছে। কুমিল্লার এই ৫ রানের আক্ষেপই থাকছে। সিলেট যে ১ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে গেছে। স্কোর ॥ সিলেট-কুমিল্লা ম্যাচ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস ১৪৫/৬; ২০ ওভার (লিটন ২১, ইমরুল ১২, স্যামুয়েলস ৬০, বাটলার ২, কাপালী ২৬, নবী ৫, ব্রাভো ১১*, সাইফউদ্দিন ১*; তাইজুল ২/২২, সানটোকি ২/৩০)। সিলেট সিক্সার্স ইনিংস ১৪৮/৬; ১৯.৫ ওভার (থারাঙ্গা ৫১, ফ্লেচার ৩৬, সাব্বির ৩, নাসির ১৮, হোয়াইটলি ১০, শুভাগত ৭, প্লানকেট ১*, সোহান ১১*; ব্রাভো ২/৩৪)। ফল ॥ সিলেট সিক্সার্স ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ উপুল থারাঙ্গা (সিলেট সিক্সার্স)।
×