ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উপসচিবরাও গাড়ির লোন পাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা, ভাতা ৫০ হাজার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

উপসচিবরাও গাড়ির  লোন পাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা, ভাতা ৫০ হাজার

তপন বিশ্বাস ॥ সরকারী গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ ২৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করেছে সরকার। একই সঙ্গে প্রতি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচও ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আগে যুগ্ম সচিব থেকে উর্ধতন কর্মকর্তারা এ সুযোগ পেতেন। এখন থেকে উপসচিবরাও এই সুবিধা পাবেন। এ লক্ষ্যে প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা ২০১৭ (সংশোধিত) সম্প্রতি জারি করেছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ জহির উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কয়েক মাস ধরে কাজ করে গাড়ি ক্রয় বাবদ ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের পাশাপাশি প্রতি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচও ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবের আলোকে সম্প্রতি নীতিমালাটি সংশোধন করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিবছর গাড়ি দাম বাড়ছে। কিন্তু সরকারী গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ অনেক দিন ধরে বাড়ান হয়নি। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আমি যখন গাড়ি ক্রয় করি তখন ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। এরপর এটি বাড়িয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়। এখন এটি ৩০ লাখ করা হয়েছে। তবে শুরুতে এর পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রতিটি গাড়ির জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ ও চালকের বেতনসহ আনুষঙ্গিক খরচের টাকাও বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় এখন থেকে উপসচিবদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাদেরও প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালায় যুক্ত করা হবে। এছাড়া প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০১৪ তে বলা ছিল- বাজারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যুক্তিসঙ্গত সময় অন্তর অন্তর সরকার বিশেষ অগ্রিমের পরিমাণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে। সেই আলোকে সরকারী কর্মকর্তাদের গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সরকারী যানবাহন অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকারী গাড়ি পাওয়ার যোগ্য কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। আগে সরকারের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব এবং এসব পদের সমমর্যাদাপূর্ণ পদধারী কর্মকর্তারা এতদিন গাড়ির জন্য সুদমুক্ত ঋণ পেতেন। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তা, যারা যুগ্ম প্রধান এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব (ড্রাফটিং) তাদেরও এ সুবিধা দেয়া হয়। এখন থেকে এ সুযোগ পাবেন উপসচিবরাও। ফলে উপসচিব পর্যায়ের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা এবার নতুনভাবে এ তালিকা যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু অবশিষ্ট ২৭টি ক্যাডার এর বাইরে রয়ে গেছে। এ নিয়ে তথ্য, কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে মারাত্মক ক্ষোভ রয়েছে। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এখন সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ সবিধা বেড়েছে। আমাদের সময়ে বেতন ভাতা অনেক কম ছিল। আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ২০০৮ সালে অবসরের সময় আমি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে যে বেতন পেতাম, এখন নতুন চাকরিতে ঢুকেই একজন বিসিএস অফিসার সেই বেতন পাচ্ছেন। স্বচ্ছ জীবনযাপন করতে পারছেন। একই সঙ্গে এখন থেকে উপসচিব হলেই সরকারের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এছাড়া গাড়ির কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণ পাচ্ছে সরকারী কর্মকর্তারা। আমাদের সময় সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনারও সুযোগ ছিল না।
×