ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি মামলায় ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় পেল সরকার

সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত-এ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত-এ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধস্তন (নিম্ন) আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপীল বিভাগ। এদিকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরি সংক্রান্ত শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশের ‘সুরাহা করতে’ আপীল বিভাগের সঙ্গে বসতে চান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আগামী বৃহস্পতিবার এ আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি আরও বলেছেন, ছুটি শেষে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত। আমি আগেও বলেছি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দেশে ফিরে আসা এবং দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত। এখন আবারও তাই বলছি। সিনহাকে বেঞ্চে বসার বিষয়ে সরকার বিরত করেনি। বরং তার বিরুদ্ধে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠায় তার সহকর্মীরা তার সঙ্গে বসতে রাজি হননি বলে তিনি ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছেন। এটা দেশবাসীর জানা উচিত। নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট প্রকাশে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপীল বিভাগ। রবিবার রাষ্ট্রপক্ষের করা চার সপ্তাহের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আদালতের আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ মামলায় আমরা আবারও ৪ সপ্তাহ সময় নিয়েছি। আদালতকে জানিয়েছি, এ বিষয়ে আলোচনার জন্য আইনমন্ত্রী ওনাদের সঙ্গে বসতে চান। আগামী বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হতে পারে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যেভাবে চাইতেন, রুলসটা যেভাবে হোক, তাতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় নানা রকম কার্টেল হওয়ার একটা বিষয় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তাই সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে জিনিসটা কিভাবে সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি হতে পারে সরকার সে চেষ্টা করছে। শনিবার আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ ধরনের কথা হয়েছে।’ গত ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের ৪ সপ্তাহ সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। এরও আগে গত ২০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপীল বেঞ্চ শুনানি শেষে গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়িয়ে ছিলেন। তার আগে গত ৬ আগস্ট দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেনের মামলায় (বিচার বিভাগ পৃথককরণ) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। আপীল বিভাগের এ নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রীমকোর্টে পাঠায়। গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিকালে আপীল বিভাগ খসড়ার বিষয়ে বলেন, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিল ১৯৮৫ সালে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালার হুবহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। এর পর সুপ্রীমকোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। গত ১৬ জুলাই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত শেষে এ সংক্রান্ত গেজেট শীঘ্রই প্রস্তুত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী। পরে ফের ২৭ জুলাই বিকেলে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করে খসড়াটি হস্তান্তর করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত ছুটি শেষে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত বলে মন্তব্য করেছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রবিবার সুপ্রীমকোর্টে নিজ কার্যালয়ে এ মন্তব্য করেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার দেশে ফিরে আসা এবং দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত। এখন আবারও তাই বলছি। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করলে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে এসে দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত ব্যাপার। তিনি বলেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে বেঞ্চে বসার ব্যাপারে সরকার বিরত করেনি। বরং তার বিরুদ্ধে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠায় সহকর্মীরা তার সঙ্গে বসতে রাজি হননি বলে, তিনি ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছেন। এটা দেশবাসীর জানা উচিত। আমি আগেও বলেছিলাম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দায়িত্ব গ্রহণ সুদূর পরাহত। আজকেও বলছি। কারণ অন্য বিচারপতিরা যদি উনার সঙ্গে না বসতে চান তাহলে তিনি কিভাবে বিচার করবেন? গত ১৩ অক্টোবর রাতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া যান প্রধান বিচারপতি। এর আগে অবকাশকালীন ছুটি শেষে গত ২ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্ট খোলার আগের দিন অসুস্থতার কথা জানিয়ে এক মাসের (৩ অক্টোবর থেকে ১ নবেম্বর) ছুটিতে যান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আর বিদেশে যেতে আরও দশ দিনের (২ থেকে ১০ নবেম্বর) ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। গত ২ অক্টোবর আপীল বিভাগের কর্মে প্রবীণ বিচারক বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ওই এক মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতির সিনহার ছুটি বেড়ে যাওয়ায় বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার দায়িত্বকালও ১০ নবেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এদিকে, বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে বাসভবনের গেটে সাংবাদিকদের একটি লিখিত বক্তব্য দিয়ে যান প্রধান বিচারপতি। পর দিন এক বিৃবতিতে সুপ্রীমকোর্ট প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সংবলিত দালিলিক তথ্যাদি আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্থলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
×