ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনী জটিলতা

বিআরটিসির আন্তর্জাতিক রুটে বাস অপারেটর নিয়োগ আটকে গেছে

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৬ নভেম্বর ২০১৭

বিআরটিসির আন্তর্জাতিক রুটে বাস অপারেটর নিয়োগ আটকে গেছে

রাজন ভট্টাচার্য ॥ আইনী জটিলতায় আটকে গেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) আন্তর্জাতিক রুটে বাস অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া। ফলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাঁচ রুটে অত্যাধুনিক বাস নামানোর প্রক্রিয়া অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে জনস্বার্থে রুলের গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে বাস নামানোর প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ায় আশাবাদী বিআরটিসি কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কেউ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে উচ্চ আদালতে টেন্ডারের স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট আবেদন করা করিয়েছে। অথচ নতুন বাস নামানোর ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া নেয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি যাত্রীরা উন্নত সেবাও পাচ্ছেন না। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, জনস্বার্থে বাড়তি ভাড়া ঠেকাতেই রিট আবেদন করা হয়েছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবার লক্ষ্যে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা, আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা, ঢাকা-আগরতলা-ঢাকা এবং ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি রুটে দুই বছরের জন্য বাস অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় বিআরটিসি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের পাঁচ জুলাই খোলা দরপত্র আহ্বান করা হয়। পাঁচটি বাস কোম্পানি টেন্ডারে অংশ নেয়। এসব বাস কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গ্রীন লাইন পরিবহন, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, রয়েল কোচ সার্ভিস, এনআর ট্রাভেলস ও শ্যামলী পরিবহন। গত ৩০ জুলাই দরপত্র খোলার কথা ছিল। এরপর বিআরটিসির পক্ষ থেকে সময় বাড়িয়ে ৩০ আগস্ট করা হয়। কিন্তু যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংগঠন ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি’ ভাড়া নির্ধারণের অজুহাত দেখিয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন দাখিল করে। যাত্রী অধিকার সংরক্ষণে বাড়তি ভাড়াসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত করে ১৩ জুলাই রিট আবেদনে দুই মাসের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাস নামানো প্রক্রিয়া থেমে গেছে। বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, নতুন বাস নামানোর সঙ্গে ভাড়ার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আদালত বিষয়টি আমলে নেয়ায় বিআরটিসির পক্ষ থেকে রুলের জবাব দেয়া হবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে ভাড়া অনেক আগে থেকেই নির্ধারণ করা রয়েছে বলে জানান বিআরটিসির কর্মকর্তারা। যদিও বাস প্রদর্শনের জন্য টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি ইস্যুর প্রক্রিয়ায়ও এগিয়ে এসেছিল বিআরটিসি। এছাড়া ঢাকা-সিলেট-শিলং-গুয়াহাটি-ঢাকা রুটটি চলতি বছরের ছয় জুন চালু হয়, যার ভ্রমণ ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকা-খুলনা-কলকাতা-ঢাকা রুট চালু হয় চলতি বছরের ২২ মে। এ রুটে যাত্রীপ্রতি একমুখী ভাড়া এক হাজার ৪০০ রুপী নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, বিআরটিসি আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবার যে টেন্ডার আহ্বান করেছে তা শুধুমাত্র বাস অপারেটর নিয়োগের জন্য। এর সঙ্গে যাত্রী ভাড়ার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সমিতির রিট আবেদনের কারণে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। পাশাপাশি যাত্রীরাও উন্নত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। এজন্য অবশ্য পরিবহন কোম্পানির একাধিক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, বিশেষ মহলের স্বার্থরক্ষার জন্য যাত্রী কল্যাণ সমিতি আদালতের আশ্রয় নিয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিআরটিসির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারও। এছাড়া যেসব পরিবহন কোম্পানি টেন্ডারে অযোগ্য হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে পুরো প্রক্রিয়াটি নষ্ট করতে রিট আবেদন করিয়ে থাকতে পারে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, প্রটোকল নিয়ম অনুযায়ী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও ত্রিপুরা সরকার ইতোমধ্যে নতুন অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আইনী জটিলতায় বিআরটিসি তাদের কাজ শেষ করতে পারছে না। এ কাজ শেষ করা সম্ভব হলে বিলাসবহুল ইউরো-২, ইউরো-৩ এয়ার সাসপেনসশ মডেলের আধুনিক বাস নামিয়ে উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। রিট আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক রুটে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ৯০২ টাকা ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও শুরু থেকেই যাত্রীদের পকেট কেটে বাড়তি বাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাছাড়া গাড়িতে যাত্রীদের নাস্তা দেয়ার কথা থাকলেও চলমান পরিবহনগুলোতে তা দেয়া হচ্ছে না। দেশের ভেতরে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি দিনের পর দিন নৈরাজ্য চালাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক রুটে এ রকম নৈরাজ্য চলতে পারে না। তিনি বলেন, ত্রিপুরার বাস কোম্পানি নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া নিলেও আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে দিনের পর দিন। ঢাকা-কলকাতা পর্যন্ত ১১ ডলার ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও বেনাপোল পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে ৯০২ টাকা। তিনি বলেন, টেন্ডারে নতুন যেসব গাড়ি চাওয়া হয়েছে সেগুলোর মান খুবই খারাপ। আন্তর্জাতিক রুটে লক্কড়-ঝক্কড় বাস চললে দেশের বদনাম হবে। তাই টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্থগিতাদেশ চেয়ে রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আশা করি ভাড়া নির্ধারণে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা পাব। তিনি বলেন, দুই মাসের মধ্যে বিআরটিসি রুলের জবাব দিলে যে কোন সময় রিটের শুনানি হতে পারে। আমরা শুনানির অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, আমরা তো টেন্ডার প্রক্রিয়া ও বাস নামানোর বিরুদ্ধে নই। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি মাত্র। জানতে চাইলে বিআরটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মোঃ আলমাছ আলী বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক রুটে নতুন বাস চালুর ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি যুক্ত নয়। ভাড়ার বিষয়টি নির্ধারণ করা আছে, যা পুরোপুরি আলাদা বিষয়। তিনি বলেন, তবুও রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তা বিবেচনায় নিয়েছে। আমরা রুলের জবাব দিয়েছি। এতে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে।
×