ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্সে তোফায়েল

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিন

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত জার্মান-অস্ট্রেলিয়ান এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কনফারেন্সে যোগদানরত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার অমানবিক আচরণ করছে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তাদের হত্যা, ধর্ষণসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা পূর্বেরসহ এখন প্রায় ১০ লাখ। এ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে বিতারিত রোহিঙ্গাদের একান্তই মানবিক কারণে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় প্রদান করেছেন। তাদের বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসাসহ যথাসম্ভব সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। নানা কৌশলে মিয়ানমার সরকার বিষয়টিকে বিলম্বিত করছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো প্রয়োজন। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম সেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানে যে ৫ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সমস্যা সমাধানে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হয়। অস্ট্রেলিয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ আশা করে। বাণিজ্যমন্ত্রী রবিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে ক্রাউন টুওয়ার্স হোটেলে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে একান্ত বৈঠকের সময় এসব কথা বলেন। তিনি এ সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি পত্র হস্তান্তর করেন। তোফায়েল আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে, সেজন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতি বাংলাদেশ কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এয়ার কার্গো চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন বিমান বন্দরের নিরাপত্তা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল। অস্ট্রেলিয়া কার্গো উড়োজাহাজ চলাচল চালু করতে পারে। বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করে উভয় দেশের বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এ মুহূর্তে দু’দেশের বাণিজ্য প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ক্রাউন টুওয়ার্স হোটেলে ক্রাউন কনভেনশন সেন্টারের দি অস্ট্রা-২ তে অনুষ্ঠিত ‘জার্মান এশিয়া প্যাসিফিক বিজনেস এ্যাসোসিয়েশন (ওএভি) ব্রেকফাস্ট : ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ বিষয়ক সেশনে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা প্রদান করেন। সেশনে বক্তৃতা প্রদানের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি বিগত কয়েক বছর ধরে গড়ে ৭ ভাগের বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এমডিজি সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ৩০তম অর্থনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি ছিল ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তুলছে। বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
×