ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. এম হাসিবুল আলম প্রধান

৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৩:০৪, ৬ নভেম্বর ২০১৭

৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যা মুক্তিপাগল বাঙালী জাতির অভূতপূর্ব জাগরণের শ্রেষ্ঠতম কবিতা হিসেবে বিবেচিত তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে। জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইউনেস্কো ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ এই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে’ অন্তর্ভুক্ত করেছে। গত ৩০ অক্টোবর ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কথা প্যারিসে অবস্থিত ইউনেস্কোর সদর দফতরে প্রকাশ করেন। ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড (এমওডব্লিউ) কর্মসূচীর উপদেষ্টা কমিটি মোট ৭৮টি দলিলকে রেজিস্টারে যুক্ত করার পক্ষে মত দেয়। এগুলোর অন্যতম ৭ মার্চের ভাষণ। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীর নানা দেশের ৪২৭টি অতি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হলো বাঙালী জাতির হৃদস্পন্দন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা ৭ মার্চের ভাষণ। বাঙালী জাতির মর্যাদা বিশ্ব দরবারে আবারও এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাল। এই বৈশ্বিক তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্যের মর্যাদা লাভের ফলে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব মুহূর্তে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ও বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনামূলক তথ্য সংবলিত পৃথিবীসেরা সাহসিক এবং নান্দনিক বক্তৃতার কথা। এই বক্তৃতা পৃথিবীর দেশে দেশে শোষিত, নির্যাতিত ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রেরণা এবং সংগ্রামের অফুরন্ত উৎসের এক অনন্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। যে ভাষণ শুনে আবেগাপ্লুত স্মৃতিকাতর বাঙালী নিজের অজান্তেই বারবার ফিরে যায় একাত্তরের উত্তাল রেসকোর্স ময়দানে। সেই ভাষণের আন্তর্জাতিক সাফল্যের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির জনকের অসাধারণ নেতৃত্বের গুণ সম্মোহনী ক্ষমতা ও জীবন সংগ্রাম এবং শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালীর জেগে ওঠার ইতিহাসটি বিশ্ববাসী অবাক নয়নে দেখবে। দেরিতে হলেও ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করায় ইউনেস্কো এবং এর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ এবং বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ জনতার সামনে যে তেজোদ্বীপ্ত জ্বালাময়ী কাব্যিক ভাষণ দিয়েছিলেন তা বাঙালীর মনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। বাঙালীকে স্বাধীনতা লাভের জন্য উন্মত্ত করেছিল। বাংলার মানুষ বর্ণ, গোত্র ও ধর্ম ভুলে গিয়ে দেশের জন্য হাসিমুখে জীবন দিতে শপথ নিয়েছিল। ৭ মার্চের গোটা ভাষণটি ছিল অলিখিত। বাঙালীর শোষণ ও বঞ্চনা নিয়ে বুকে জমা কষ্টের কথাগুলোই এমন তেজোদীপ্ত ও অপূর্ব বাগ্মিতায় শেখ মুজিব বলেছিলেন যে, পুরো ভাষণটি বাঙালীর একটি মহাকাব্যে পরিণত হয়েছিল। রাজনীতির কবিই শুধু এরকম ব্যঞ্জনাময় অনন্য ভাষণ দিয়ে বিশ্ব দরবারে ইতিহাস হয়ে থাকেন। এজন্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতা হিসেবে শেখ মুজিব সম্পর্কে নিউজ উইকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ‘Poet of Politics’ অর্থাৎ রাজনীতির কবি। রাজনীতির কবি বলেই তো তিনি পাকিস্তানের জেলের মধ্যে বন্দী থেকেও ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সমগ্র বাঙালী জাতিকে আলোড়িত ও আন্দোলিত করতে পেরেছিলেন এবং তাঁর নামেই সমগ্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালীর জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ওইদিন সব পথ ধরে মানুষের জনস্রোত এসে মিশেছিল রমনার রেসকোর্স ময়দানে। শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, নারী, যুবক-যুবতী, কিশোর, ভবঘুরে ও বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষের ঢল নামে ময়দানে। এদিন জাতি, ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে বাঙালীর ঐক্যের মিলন ঘটেছিল এবং দুপুর থেকেই রেসকোর্স ময়দানে সমবেত লাখো জনতার স্লেøাগান ছিল ‘জয়বাংলা’। বঙ্গবন্ধু সভামঞ্চে আসা মাত্রই ‘শেখ মুজিবের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর, মুজিব ভাইয়ের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘মা-বোনেরা অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, বাঁশের লাঠি তৈরি কর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ ও ‘ আমার দেশ-তোমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল জনতা আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে। প্রচ- রোদ উপেক্ষা করে লাখো জনতা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে প্রিয় নেতার বক্তৃতা শুনতে। ওই জনসভায় সেদিন কোন সভাপতি ছিলেন না, ছিলেন না অন্য কোন বক্তাও। বেলা ৩:২০ মিনিটে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট পরিহিত বাঙালী জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন। প্রায় ১৯ মিনিটের একটি ভাষণ দিয়ে বাঙালীর জন্য এক অমর কাব্যগাথা তিনি রচনা করেন। বাঙালীর আবেগ, দ্রোহ ও স্বাধীনতার দাবিকে মাথায় রেখে যে ভাষাশৈলী এবং শব্দ তিনি ভাষণে ব্যবহার করেছেন তা পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ বক্তা ও রাজনীতিবিদের পক্ষেই কেবল সম্ভব। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জিল্লুর রহমান খানের মূল্যায়ন স্মরণ করা যায়। তিনি লিখেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান এমন এক রাজনৈতিক নেতা, যিনি ক্যারিশম্যাটিক এবং একই সঙ্গে একান্তই স্বদেশীয়। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহÑ এরা সবাই পাশ্চাত্যে শিক্ষা লাভ করেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পড়াশোনা করেছেন গোপালগঞ্জ, কলকাতা ও ঢাকায়। তিনি যা চাইতেন জনগণ সেটাই করতেন। তিনি একজন সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম প্রধান ক্যারিশম্যাটিক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ১১০৮টি শব্দ সংবলিত অপূর্ব হৃদয়গ্রাহী এ ভাষণে যেমন ছিল বাঙালীর ২৩ বছরের বঞ্চনার ইতিহাস, রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করার ইতিহাস, ছিল নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করার পরও বাঙালীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠার ইতিহাস, ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম কেন বাঙালীর জন্য অনিবার্য তার ইতিহাস। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি সংবলিত দিকনির্দেশনা দিয়ে বাঙালীকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বানও প্রতিধ্বনিত হয়েছে কাব্যিক এ ভাষণে। এ ভাষণের আর একটি অনন্য দিক ছিল ঈরারষ ফরংড়নবফরবহপব-এর সরাসরি নির্দেশনা। ৭ মার্চ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সে সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, ওইদিন কি ঘোষণা দেবেন বঙ্গবন্ধু এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। আগের দিন (৬ মার্চ) ইকবাল হল থেকে সব ছাত্র আমার কাছে এসে দাবি করল, কাল (৭ মার্চ) যেন স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। রাতে ৩২ নম্বরে গেলাম। বঙ্গবন্ধু বাসার উপরতলায় ছিলেন। অনেকের মাঝে স্বাধীনতার ডাক দেয়া নিয়ে দ্বিমতও রয়েছে। তাদের মতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেই তো দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে না। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘চুপ থাক’। টপিক্যাল ওয়েতে বঙ্গবন্ধু আমাকে চোখ টিপ দিলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘যথাসময়ে সঠিক কথাটাই বলব আমি।’ সত্যিই ইতিহাসের মহানায়ক সেদিন সঠিক কথাটাই বলেছেন, বাঙালীর জন্য সেদিন যা নায্য তাই বলেছেন। তিনি অতি বিপ্লবীদের উগ্রতার রাশ টেনে ধরলেন, নিজেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পরিচিত না করায় সুযোগ-সন্ধানীদের হতাশ করলেন, আবার একই সঙ্গে স্বাধীনতার ডাকও দিলেন। আর পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবে তিনি ওইদিন সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব দরবারে কেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হবেন? তাই তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। অবশেষে ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পৃথিবীর সকল মানবতাকে পদদলিত করে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর পাকিস্তানীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বর্বরোচিত হত্যাকা- চালাল। ২৬ মার্চ প্রত্যুষে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা ওয়্যারলেস বার্তার মাধ্যমে চট্টগ্রামে দলীয় নেতা জহুর হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্ব¡পূর্ণ নেতা ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে যায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বক্তৃতার শুরুতেই কোনরকম আনুষ্ঠানিক সংবোধন ছাড়াই ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি’ এই বলে বক্তৃতা শুরু করেন। তাঁর এই বাক্যের মধ্যেই ছিল বাংলার সকল ধর্মের ও বর্ণের মানুষকে আপন করে তাদের দুঃখ-কষ্টের সঙ্গে নিজের দুঃখ-কষ্টকে ভাগ করে নিয়ে তাদের সঙ্গে একাকার হয়ে যাওয়া। এরপর তিনি বললেন, ‘নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ সম্পূর্ণভাবে আমাকে ও আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব। এ দেশের মানুষ অর্থনীতি, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় ২৩ বছরের করুণ ইতিহাস বাংলার অত্যাচারের, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।’ এই বাক্যগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালীদের শোষণ, নিপীড়ন ও বারবার রক্তে রঞ্জিত করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের আবেগকে সঞ্চারিত করেন লাখো মানুষের জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি বর্তমানে আমাদের সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে ধন্যবাদ জানাই যে, তারা সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন-২০১১-এর ৫০ ধারা বলে ১৫০ অনুচ্ছেদটিকে নতুনভাবে প্রতিস্থাপিত করে এবং যেটি এখন পরিবর্তিতরূপে বর্তমান সংবিধানে বহাল রয়েছে। সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সংবিধানের পঞ্চম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, ষষ্ঠ তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং সপ্তম তফসিলে বর্ণিত ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং দলিল, যা উক্ত সময়ের জন্য ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলী হিসেবে কার্যকর হবে। সংবিধানের এই সংশোধন অনুযায়ী বর্তমান সংবিধানে পঞ্চম তফসিলে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা কর্তৃক প্রদত্ত অমূল্য ভাষণটি সন্নিবেশিত আছে। তারপরও এরকম মহামূল্যবান ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ মূলত খোলা হয় পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে। ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এই ভাষণের মাধুর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং বাঙালী জাতির সংগ্রামের ইতিহাস এখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বহু ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে, যেমনটি হয়েছে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে। ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ায় এই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আজ বাংলাকে প্রতিনিয়ত জানছে বিশ্বের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী। তারা সহজেই বুঝতে পারবে বাঙালীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত বড় মাপের বিশ্ববরেণ্য নেতা এবং কেন তিনি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। লেখক : প্রফেসর, আইন বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
×