ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেলওয়ার হোসেন

অভিমত ॥ পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী

প্রকাশিত: ০৩:০২, ৬ নভেম্বর ২০১৭

অভিমত ॥ পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী

আমরা স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কীর্তিমান মানুষের আত্মজীবনী পড়ে অনুপ্রাণিত হই। তাদের আত্মজীবনী আমাদের বিভিন্নভাবে আলোড়িত ও আলোকিত করে। মহৎ হতে শেখায়। জীবনে তা এক অমূল্য শিক্ষা হিসেবেই থেকে যায় আমৃত্যুকাল। যা উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত গতানুগতিক ধারার বহু পাঠ্যবই পড়েও অর্জন করা যায় না। আমরা এমন এক পরম সৌভাগ্যবান জাতি যারা বঙ্গবন্ধুর মতো বিরল কৃতিত্বের এক ক্ষণজন্মা পুরুষকে পেয়েছি। যিনি আমাদের জাতির পিতা। ইতিহাসের বরপুত্র। এই সৌভাগ্য পৃথিবীর সব জাতির ভাগ্যে জোটে না। প্রশ্ন আসে, এই ক্ষণজন্মা ও প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষটি সম্পর্কে আমরা মুক্তিযুদ্ধপূর্ব অথবা বর্তমান নতুন প্রজন্ম কতটুকুই বা জানি? আমরা প্রতিবেশী দেশের কীর্তিমান পুরুষ গান্ধী, নেতাজী, এপিজে আবুল কালামের আত্মজীবনী পড়ি। কিন্তু আমরা কতজন বঙ্গবন্ধুর বিরল কীর্তিগাথা পড়ার ব্যাপারে চিন্তা বা স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ বোধ করি? বঙ্গবন্ধুর চিরশত্রু যারা তারাও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ে তার সততা, মহত্ত্ব, ত্যাগ ও অসাধারণ জীবনাচারের কথা জেনে চোখের পানি ফেলেছেন এবং প্রশ্নাতীতভাবে একবাক্যে সবাইকে বইটি পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। এরপর বইটি সম্পর্কে কি আর বাড়তি বাক্য ব্যয় করা চলে? বর্তমান সমাজে সর্বস্তরে নৈতিকতার করাল ধসের কারণে যখন প্রায় সবকিছুই নষ্টদের দখলে চলে গেছে তখন আলোচিত এই বইটি গোটা জাতির বর্তমান ও উত্তর প্রজন্মের জন্য একটি আলোকবর্তিকার নিশানা হয়ে কাজ করতে পারে। পাকিস্তান আমলে আমরা স্কুলের পাঠ্যবইয়ে পাকিদের প্রিয় নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বা কায়েদে আযমের আত্মজীবনী পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। স্বাধীনতার পর আমরা বাংলাদেশীরা তাকে বর্জন করলেও পাকিস্তানে এখনও তিনি বহাল তবিয়তে অর্থাৎ চির নমস্য হয়েই আছেন জাতির জনক হিসেবে। আর আমরাই উপেক্ষা করেছি জাতির জনককে। কেন? বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী কেন বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না এবং কেনইবা সকল শিক্ষার্থী অন্যান্য পাঠ্যবইয়ের মতো তা বিনামূল্যে পেতে পারে না? সর্বাগ্রে এ দায়িত্বটি গিয়ে পড়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তিনি বর্তমানে রয়েছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তার পিতা জাতির জনক নিজ জাতির কাছে উপেক্ষিত ও অনুল্লেখযোগ্য থাকবে কেন? যে জাতিকে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের হাজার বছরের অন্ধকারের পথ থেকে আলোর পথে নিয়ে গেছেন, তিনি কি প্রদীপের নিচে এভাবেই পড়ে থাকবেন? আমরা আত্মপ্রবঞ্চক জাতি হলে এটা মেনে নিতে পারি। কিন্তু আমরা তা নই। বাংলাদেশ, বাঙালী জাতি ও বঙ্গবন্ধু শব্দ তিনটি মাত্র একটি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির ঊষালগ্নের আগে থেকেই। জাতির ধমনীতে বইছে যে বীর মহাপুরুষের রক্তধারা, তাকে কি আমরা উপেক্ষিত হতে দেবে এত সহজেই? তাই প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি দাবি রইল, বিষয়টি নিয়ে শুধু তাৎক্ষণিকভাবে নয়, বার বার সময় নিয়েই ভাবুন। জাতির অবক্ষয় রোধ, শুভ্র মানস গঠন ও ইতিহাসকে জানা ও বোঝার প্রয়োজনেই বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পাঠ্যবইয়ে সংযোজন হওয়া প্রয়োজন। পরিবারের একজন শিক্ষার্থীর হাত হয়ে এই বই গোটা পরিবার ও পাড়াগাঁয়ের মানুষের কাছেও পড়ার জন্যে এক অপরিহার্য রসদ হয়ে উঠবে এবং ইতিহাস বিকৃতির বিপরীতে তা এক স্থায়ী ও মজবুত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। এ কাজটি আরও বেশি শক্তিশালী, কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ফল এনে দিতে পারে, যদি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসনির্ভর একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায়, যার পক্ষে আমি দাবি জানিয়ে আসছি যুগকাল ধরে। লেখক : সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক [email protected]
×