ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিকে দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিল গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৫ নভেম্বর ২০১৭

সুচিকে দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে নিল গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে শনিবার জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা আউং সান সুচিকে দেয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করেছে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষায় উদ্যোগ না নেয়ায় কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত শুক্রবার। ২০০৯ সালে সুচিকে ফ্রিডম গ্লাসগো সম্মাননায় ভূষিত করে গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল। ওই সময়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী হিসেবে তিনি গৃহবন্দী ছিলেন। সুচির সম্মাননা প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলেছেন গ্লাসগোর লর্ড প্রভোস্ট এবং স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির রাজনীতিক ইভা বোলান্দার। তিনি বলেন, আমি এবং আমাদের নেতা কাউন্সিলর সুসান এইটকেন সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে আউং সান সুচির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। এতে আমরা তার চোখের সামনে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি সম্পর্কে আমাদের শহরের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য তার প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। এই চিঠির যে প্রতিক্রিয়া আমরা পেয়েছি তা হতাশাজনক ও দুঃখজনক। গ্লাসগো সিটি কাউন্সিল জানিয়েছে, তাদের ইতিহাসে এভাবে প্রত্যাহার একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে সুচির ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত হালকাভাবে নেয়া হয়নি। সুচির ব্যাপারে এর আগে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় শেফিল্ড শহরের কর্তৃপক্ষ। ইচ্ছাকৃতভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট উপেক্ষার কারণে তার ‘ফ্রিডম অব শেফিল্ড’ সম্মাননা বাতিল করা হয়। শেফিল্ডের কাউন্সিলর সুরাইয়া সিদ্দিক বলেন, বার্মার রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান মানবিক সঙ্কটের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর সুচির সম্মাননা প্রত্যাহার করেছে। আমি আনন্দিত এ কারণে যে, সুচির সম্মাননা প্রত্যাহারে আমার কাউন্সিলের দলগুলো ঐক্যবদ্ধ ছিল। এর আগে গত অক্টোবরের গোড়ারদিকে সুচিকে দেয়া ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ খেতাব প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় অক্সফোর্ডের সিটি কাউন্সিল। গণতন্ত্রের জন্য আপোসহীন লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে আউং সান সুচিকে ‘ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড’ সম্মাননায় ভূষিত করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহরের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সুচি আর এই পুরস্কারের যোগ্য নন বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তাই তারা সুচির সম্মাননা ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিটি কাউন্সিলে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সুচি আর এ সম্মাননার উপযুক্ত নয়। কারণ, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির নেত্রী আউং সান সুচি তার মানবতা দেখাতে পারেননি। তাই তাকে দেয়া সম্মাননা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একের পর এক ব্রিটিশ শহরগুলোর এমন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুচির ভাবমূর্তির জন্য নিঃসন্দেহে একটা বড় ধাক্কা। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসনও সুচিকে দেয়া সম্মাননা স্থগিত করেছে। বার্মার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের সময় তাকে ওই সম্মাননা দেয়া হয়েছিল। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে মূল ভবনের প্রবেশদ্বার থেকে সুচির একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে নেয় অক্সফোর্ডের একটি কলেজ। অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুচির প্রতিকৃতির জায়গায় একটি জাপানী চিত্রকর্ম বসানো হবে। কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেঞ্জামিন জোনস বলেন, সুচির প্রতিকৃতি একটি ‘নিরাপদ স্থানে’ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে জাপানী চিত্রশিল্পী ইয়োশিহিরো তাকাদার চিত্রকর্ম ‘কিছু সময়ের জন্য প্রদর্শিত হবে।’ সেন্ট হিউ কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন আউং সান সুচি। গৃহবন্দী হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রী তিনি গ্রহণ করেন ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় ছয় লক্ষাধিক মানুষ পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বার্মার সেনাবাহিনীর আচরণকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে।
×