ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা ইস্যু

সিপিএ সম্মেলনের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৫ নভেম্বর ২০১৭

সিপিএ সম্মেলনের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

সংসদ রিপোর্টার ॥ পহেলা নবেম্বর থেকে শুরু হলেও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশন-সিপিএর ৬৩তম সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে আজ রবিবার। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত সিপিএর ৬৩তম সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ও সিপিএর ভাইস প্যাট্রোন শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর বিকেলে সারাবিশ্ব থেকে আগত জাতীয় সংসদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার ও জনপ্রতিনিধিদের সামনে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরা হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তবে এরই মধ্যে গত ১ নবেম্বর থেকে হোটেল রেডিসন ব্লুতে সিপিএর স্মল ব্রাঞ্চের সদস্য দেশগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্মল ব্রাঞ্চ হচ্ছে সিপিএভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশে ৫ লাখ বা তার নিচে জনগোষ্ঠীর বসবাস। এসব দেশের সমস্যা ও সমাধানে বড় দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় এসব সম্মেলনে। রবিবার থেকে শুরু হওয়া সিপিএর নির্বাহী কমিটির বৈঠকের প্রথমদিন অর্থাৎ আজ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিপিএ সম্মেলনে আগত বিদেশী অতিথিদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলী। সিপিএভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সামনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্ব জনমত গঠনের প্রচেষ্টা চালাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও সিপিএর নির্বাহী কমিটির ৮টি সেমিনারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কেউ বিষয়টি উত্থাপন করতে পারেন বলে একাধিকবার জানিয়েছেন সিপিএ চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরই মধ্যে সিপিএভুক্ত ৫২ দেশের মধ্যে ৪৪টি দেশের ১১০টি ব্রাঞ্চের জনপ্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, আরও প্রতিনিধি এখন পর্যন্ত আসছেন। শনিবার হোটেল রেডিসন ব্লুতে অনুষ্ঠিত ১ থেকে ৪ নবেম্বর পর্যন্ত সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চের বিভিন্ন প্লানারি সেশনের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম ও ফজিলাতুন নেছা বাপ্পী। সিপিএ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত করা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সিপিএ চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হবে মূল পর্ব। এরপর পরিবেশন করা হবে স্বাগত নৃত্য। প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মেলন উপলক্ষে সিপিএর প্যাট্রোন রানী এলিজাবেথের পাঠানো বাণী পাঠ করবেন স্পীকার। এরপর ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি’ শীর্ষক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনের পর মনোজ্ঞ নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। সিপিএ মহাসচিব আকবর খান ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখবেন ইয়থ পার্লামেন্টের একজন প্রতিনিধি। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিপিএ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন এবং সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। সম্মেলন উপলক্ষে একটি স্মারক ডাকটিকিটও অবমুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী। দক্ষিণ প্লাজায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বিকেল থেকেই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিএর একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও দুর্নীতি দূর করার প্রস্তাব ॥ ঢাকায় অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) ৬৩তম সম্মেলনের প্রথম পর্যায়ে স্মল ব্রাঞ্চেস থেকে দুর্নীতি দূর করা, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির কাজে স্বচ্ছতা, নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করা, জলবায়ু দূষণরোধে কার্যকর ভূমিকা নেয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ওঠে এসেছে। গত ২ নবেম্বর শুরু হওয়া স্মল ব্রাঞ্চেস’র বিভিন্ন সেমিনার শেষে শনিবার রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে আয়োজিত সাংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সিপিএ মিডিয়া কমিটির সদস্য তানভীর ইমাম এমপি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি এ তথ্য জানান। আজ ৫ নবেম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বিতীয় পর্বের সম্মেলন শুরু হবে। প্রস্তাবগুলো সেখানে সিপিএ’র নির্বাহী কমিটিতে উত্থাপন করা হবে। সিপিএ অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি দেশের জনসংখ্যা ৫ লাখের নিচে। এসব দেশকে সিপিএর স্মল ব্রাঞ্চ হিসেবে গণ্য করা হয়। ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি বলেন, কমনওয়েলথ উইমেন পার্লামেন্টারিয়ানদের (সিডব্লিউপি) স্টিয়ারিং কমিটির যে বৈঠকগুলো ছিল সেখান থেকে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। সিপিএর আওতায় ৫২টি দেশের মধ্যে ১২টি দেশে কোন নারী সংসদ সদস্য নেই। অথচ সারাবিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এ অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে কিংবা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত না করে উন্নয়ন আশা করা যায় না। এমন একটা পৃথিবী চাই যেখানে নারী ও পুরুষের সমতা থাকবে। এ জন্য কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নারীদের সংসদে দেখতে চাই। সিডব্লিউপি থেকে এ সুপারিশ এসেছে। তিনি বলেন, সিডব্লিউপি প্রতিনিধিদের নিয়ে শুক্রবার জাতীয় মহিলা সংস্থায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক নারীরা অর্থনৈতিকভাব সফল হচ্ছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারও তাদের দেখানো হয়। শনিবার সিডব্লিউপির প্রতিনিধিরা টঙ্গীতে পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেন। মিডিয়া কমিটির আরেক সদস্য তানভীর ইমাম এমপি বলেন, শুক্রবার দ্বিতীয় প্লানারি সেশন থেকে চারটি সুপারিশ এসেছে। এর প্রথমটি ছিল সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চেস নিজেদের এবং বিশ্বের অন্যদেশগুলোকে কারিগরি সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা ইন্টারশিপের মাধ্যামে উৎসাহিত করা। দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ছিল সিপিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্পদ এবং অভিজ্ঞতা বিনিমিয়ের মাধ্যমে নিজ অধিক্ষেত্রে কাজ করে যাবে। তৃতীয়টি ছিল সিপিএ নিয়মিতভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দাতা সংস্থার সঙ্গে স্মল ব্রাঞ্চেস দেশগুলোর বৃহত্তর পরিসরে সহযোগিতা করে যাবে। আর চতুর্থ সুপারিশ ছিল সিপিএর সংসদ ও এমপিদের জন্য সহযোগিতামূলক সেবা ও সুযোগ তৈরিতে দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করবে। এ প্রসঙ্গে ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি বলেন, তৃতীয় দিনের সেশনে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত সুপারিশের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে আইন প্রণেতারা ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনটি সুপারিশ উল্লেখ করার মতো। একটি হল-রাষ্ট্র রাজনীতি ও সম্প্রদায় থেকে যে কোন মাত্রার দুর্নীতি দূর করতে আইন প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবশ্যই রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সম্প্রদায় থেকে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। পরের প্রস্তাব ছিল সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে উচ্চতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের বিপরীতে আইন প্রণয়ন করা। এছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে স্থাপন এবং কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের যে কাঠামোগুলো রয়েছে এর ভিত্তিতে আইন প্রতিষ্ঠা করা। শুধু আইন প্রণয়নই নয়, তা যেন অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য তানভীর ইমাম ও কাজী নাবিল আহমেদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×