ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাবাকে হত্যার সময় দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন করা হয়’

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৫ নভেম্বর ২০১৭

‘বাবাকে হত্যার সময় দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন করা হয়’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পিতাকে হত্যার সময় দেখে ফেলায় মেয়েকেও খুন করে খুনী শাহীন মল্লিক। আর এভাবেই পরকীয়া প্রেমের জেরে রাজধানীর বাড্ডায় বাবা-মেয়ের জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। মায়ের পরকীয়া প্রেমের বলি হয় শিশু নুসরাত জাহান। শনিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন গুলশানের উপকমিশনার এ কে এম মোস্তাক আহমেদ খান। তিনি আরও জানান, গত ২ নবেম্বর সকাল ছয়টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের কাছে ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর পাঠান ভিলা নামের চারতলা বাড়ির তৃতীয় তলায় খুন হন জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে বাড্ডা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাত জাহান (১০)। ওইদিনই সন্দেহভাজন হিসেবে আরজিনাকে আটক করা হয়। জামিলের ভাই শামীম বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলার আরেক আসামি শাহীন মল্লিককে (২৬) তার স্ত্রী মাসুমাসহ ৩ নবেম্বর খুলনার বটিয়াঘাটা থেকে আটক করা হয়। মূলত আরজিনার সঙ্গে একই বাড়িতে বসবাস করতে গিয়ে শাহীনের প্রেম থেকে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হয়। বিষয়টি এক পর্যায়ে আরজিনার স্বামী জামিল শেখ জেনে যায়। শাহীন ও আরজিনা বিয়ে করতে সম্মত হয়। আর স্বামী জামিলকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক আরজিনাদের বাসায় থাকা প্রেমিক শাহীনের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক আরজিনা তার স্বামী জামিল, মেয়ে নুসরাত জাহান ও একমাত্র ছেলে আলফিকে নিয়ে একই খাটে শুয়ে পড়ে। আর কৌশলে ঘরের দরজা খুলে রাখে। শাহীন তার স্ত্রীর সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে। গত ১ নবেম্বর রাত একটার দিকে শাহীন আগ থেকেই হত্যার উদ্দেশ্যে আনা কাঠের লাঠি নিয়ে আরজিনাদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। শাহীন সোজা জামিলের মাথায় আঘাত করতে থাকে। এ সময় মেয়ে নুসরাত বিষয়টি দেখে ফেলে। নুসরাত বলে, আব্বুকে মারছ কেন? ততক্ষণে শাহীন জামিলকে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলে। জামিল মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকে। এ সময় আরজিনা আর শাহীন রুম থেকে বের হয়। ঘটনাটি নুসরাত দেখে ফেলেছে, এখন কি করা যায়। এ নিয়ে পরামর্শ করতে থাকে। নুসরাতকে তারা রুম থেকে বাইরে এনে বোঝায়। বোঝানোর পরও তাদের মনে সাঁই দিচ্ছিল না। তাদের মনে সন্দেহ ছিল, নুসরাত কোন না কোন দিন তার পিতাকে হত্যার বিষয়টি প্রকাশ করে দিতে পারে। এক পর্যায়ে তারা নুসরাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত পাকা করে। প্রথমে মা আরজিনা রাজি ছিল না। শাহীনের বক্তব্য, বাঁচতে হলে, সাক্ষীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এজন্য নুসরাতকে হত্যা করতে হবে। এছাড়া আর কোন পথ নেই। এরপর নুসরাতকে রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে রুমে নিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পিতাকে হত্যার সময় ছেলে আলফি জেগে ছিল। কিন্তু তিন বছরের ছোট শিশু ঘুমের ঘোরে আবার শুয়ে পড়ে। আলফি বিষয়টি বুঝতে না পারার কারণে তাকে হত্যা করেনি তারা। ঘরে যাওয়ার পর বিষয়টি শাহীনের স্ত্রী জানতে পারে। শাহীন তার স্ত্রীকে বলে, বাঁচতে হলে পালাতে হবে। এরপর অজানা আশঙ্কায় স্বামীর কথামত তারই সঙ্গে পালিয়ে যায়। আরজিনা প্রেমিক শাহীনের সঙ্গে বিয়ের পর সংসার করতে তার নিহত স্বামী জামিলের রেখে যাওয়া ও সুদে লাগানো টাকা পয়সা তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেই টাকায় প্রথমে সংসার পাতার কথা ছিল। এরপর তারা অন্যত্র চলে যেত। পুলিশ জানায়, আরজিনার বাড়ি সাভারে। আর তার স্বামী জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জের বনগ্রামে। জামিল তেজগাঁওয়ে অবস্থিত একটি ওষুধ কোম্পানিতে চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৮ বছর ধরে বাড্ডা এলাকায় বসবাস করছিলেন তিনি। এক সময় গুলশানে একজনের গাড়ি চালাতেন। মাসিক সাত হাজার টাকায় তিন মাস আগে বাড্ডার ময়নারবাগের ওই বাসায় ভাড়ায় ওঠেন। জামিলের স্ত্রী আরজিনা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক প্রেমিক শাহীনকে মাসিক তিন হাজার টাকায় তাদের বাসায় সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেন। স্বামীকে আরজিনা বোঝায়, তিন হাজার টাকা বাড়তি এলে সংসার চালাতে সুবিধা হবে। আসলে এটি ছিল প্রেমিক শাহীনকে একই বাসায় রাখার জন্য আরজিনার পূর্বপরিকল্পনা।
×