ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৯ নবেম্বর উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা ও মোদি

স্টিল অবকাঠামোয় নির্মিত হলো দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৫ নভেম্বর ২০১৭

স্টিল অবকাঠামোয় নির্মিত হলো দ্বিতীয় ভৈরব ও তিতাস সেতু

মাকসুদ আহমদ, ভৈরব থেকে ফিরে ॥ স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এই প্রথম কোন স্টিল অবকাঠামোর বৃহত্তম রেল সেতু নির্মাণ করল রেল কর্তৃপক্ষ। মেঘনা নদীর ওপর তৈরি করা এই দ্বিতীয় ভৈরব সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮৪ মিটার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিস্তা নদীর ওপর ২১৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে তিতাস সেতু। এ দুটি স্টিল কাঠামোর সেতু ও সংযোগ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৫৯ দশমিক ২০ কোটি টাকা। ২০২০ সালে আখাউড়া- লাকসাম ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই রেলপথে আরও দুই ঘণ্টা সাশ্রয় হবে এবং পুরোদমে এসব সেতুর ফলপ্রসূতা পাওয়া যাবে। আগামী ৯ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতু দুটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেলপথ মন্ত্রী মোহাম্মদ মুজিবুল হক। উল্লেখ্য, এই রুটে ৮৪টি ট্রেন চলাচলে আরও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে এমন আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, ইরকন-এফকন’স জেভি এবং গ্যানন এফএলসিএফ কন্সট্রাকশন কোম্পানি এই সেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্ট এই সেতুর ফাউন্ডেশন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে । প্রতিটি ১১০ মিটার মূল স্প্যান বসাতে তৈরি করা হয়েছে ১০টি পাইল ফাউন্ডেশন। এক একটি পাইল ফাউন্ডেশনে রয়েছে ৬টি পাইল। পিলারকে ঘিরতে আবার ২৫ মিলিমিটার চওড়া ইট গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। মিটারগেজ ও ব্রডগেজ এই দুই ধরনের রেল লাইন এই সেতু দুটিতে বসানো হয়েছে। অপরদিকে, গত ৪ অক্টোবর ঢাকার ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার/ক্যারেজ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার/লোকো জয়দুল ইসলামসহ একটি টিম নবনির্মিত এই সেতু ও সংযোগ রেল পথ চলাচলের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও চলনক্ষম কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। গত শুক্রবার পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সূবর্ণ এক্সপ্রেস ও নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন পরিচালনা করেছেন রেলের উর্ধতন কর্মকর্তারা । জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল ট্র্যাকে উন্নীত করতে মেঘনা নদীর ওপর দ্বিতীয় ভৈরব রেল সেতু এবং তিস্তা নদীর ওপর দ্বিতীয় তিতাস রেল সেতু নির্মাণে একনেকে ২০১০ সালে অনুমোদনের পর পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি হয়েছে ২০১১ সালের ১৭ নবেম্বর। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, রেল সচিব ফজলে কবীর ও রেলের ডিজি মোহাম্মদ আবু তাহের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে। আর ভারতের পক্ষে ভারতীয় হাই কমিশনের রেলওয়ে উপদেষ্টা মিস চন্দ্রিমা রাও । তখন বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে খায়রুল আলম ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অমিতাভ দত্ত ও এ কে ব্যানার্জী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঢাকার রেল ভবনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যৌথভাবে ভারতের স্টুপ কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেড এবং স্কট উইলসন প্রাইভেট লিমিটেড এই চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করে। সে অনুযায়ী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেতু দুটি নির্মাণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই , বিস্তারিত নক্সা প্রণয়ন, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি ও নির্মাণ কাজের তদারকি শুরু করে। ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর আওতায় এই সেতু দুটি নির্মাণ হওয়ার কাজ শুরু হয়। তখন এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সময় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৬ মাস বা তিন বছর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সেতু দুটির চুক্তি থেকে শুরু করে শেষ করা পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর সময় লেগেছে। অপরদিকে, ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর রেললাইনের সংযোগসহ দ্বিতীয় ভৈরব সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ রেলওয়েসহ ভারতের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইরকন ও এফকনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভারতের ঋণ সহায়তায় ৫৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আড়াই বছরে এ দুটি প্রতিষ্ঠান এই সেতু ও সংযোগ রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল। তখন বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন রেলের প্রকল্প বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও ভারতের পক্ষে ইরকনের মহাব্যবস্থাপক যোগেশ চন্দ্র মিশ্র। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রেলপথমন্ত্রী মোহাম্মদ মুজিবুল হকসহ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, রেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রেলওয়ে উপদেষ্টা চন্দ্রিমা রাও। এ দুটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯৫৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭০০ টাকা ভৈরব সেতু ও সেতুর উভয় দিকে ১১ কি মি সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৩০ মাসের চুক্তিতে এসব সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি নানা জটিলতার কারণে। ২০২০ সালের জুনে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এ রেল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৩৫ ভাগ। এতে ঢাকা- চট্টগ্রামের মধ্যে রেলপথে যোগাযোগ আরও ২ ঘণ্টা সাশ্রয় হবে। এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক জনকণ্ঠকে জানান, এই দুটি সেতু আগামী ৯ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজধানী ও বাণিজ্যিক রাজধানীর মধ্যে রেল যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে ও স্বল্প সময়ে দ্রুততম সেবা দেবে রেল কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। রেলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সময়ও কম লাগবে। এখানে উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রেলের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন হলে রেলওয়েতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
×