ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি আগামী নির্বাচনে না এলে মুসলিম লীগে পরিণত হবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৫ নভেম্বর ২০১৭

 বিএনপি আগামী নির্বাচনে না এলে মুসলিম লীগে পরিণত হবে ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ যে কোন পরিস্থিতিতে বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে। যদি না আসে তাহলে বিএনপি অস্তিত্ব হারিয়ে সঙ্কুচিত হয়ে মুসলিম লীগে পরিণত হবে। শনিবার চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা হাইলধর উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা, দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হওয়ায় দশম নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি। আগামী নির্বাচনের আগেও তারা একই দাবি তুলেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে সংবিধান অনুসরণ করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওবায়দুল কাদের বিএনপির আন্দোলনের জোর নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এর পাশাপাশি বিএনপি নেতাদের এলোমেলো বিভিন্ন বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, বিএনপি মূলত একটি এলোমেলো পার্টি। তাদের সমর্থিত বুদ্ধিজীবী জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি মাজাভাঙ্গা, বিশৃঙ্খল একটি দল। এ দলের একেক নেতা একেক সময়ে একেক রকম বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি গেল সপ্তাহে খালেদা জিয়ার গাড়ির বহর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ফেনী অতিক্রমের সময় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে দলটির সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দলকে দায়ী করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বেগম জিয়া ফেরার সময় শ্রমিক দল তাদের দলে নেতাকর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আওয়ামী লীগের কোন লোক সেখানে ছিল না। তাহলে বুঝতে হবে কারা আগুন দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ফেনীতে যদি হামলা আওয়ামী লীগ করে তাহলে সাংবাদিকদের ওপর পড়বে কেন। আর ওই ঘটনায় বিএনপির একজন নেতাকর্মীও আহত হয়নি। মূলত বিএনপি সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে নিউজের হেডলাইনে আসার জন্য। তিনি বলেন, এ হামলা বিএনপির পূর্বপরিকল্পিত। সমাবেশে মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে যখনই বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিত তখনই বাবু ভাই এগিয়ে আসতেন। আওয়ামী লীগের বিপদে আপদে সব সময় বাবু ভাই সবার সামনেই থাকতেন। তিনি দলের অনেককে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সহযোগিতা করতেন। কিন্তু কখনও তা প্রকাশ করতেন না। এ সময় মন্ত্রী উপস্থিত জনতার কাছে আগামী নির্বাচনে আখতারুজ্জামান চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান বর্তমান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে মনোনয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন কিনা জানতে চাইলে উপস্থিত জনতা মুহুর্মুহু করতালি ও স্লোগান আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ। এদিকে, দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগেও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, রাজনৈতিক ও দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে শনিবার পালিত হয়েছে। মরহুমের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারার হাইলধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ফাতেহা, মিলাদ ও আলোচনা সভা ও মেজবানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু রাজনীতির পাশাপাশি শিল্প উদ্যোক্তাও ছিলেন। দেশে বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তাও তিনি। দীর্ঘ সময় জুড়ে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আসীন ছিলেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চার দফায়। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪৫ সালে আনোয়ারার হাইলধর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে চলাকালে তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাবসন কমিটির সদস্যও ছিলেন। তিনি দু’দফায় চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এর প্রেসিডেন্ট, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর প্রেসিডেন্ট, ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পালন করেন। ৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
×