ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসেছে পাঁচ দিনের রাসমেলা

কুয়াকাটায় পুণ্যস্নানে ভক্তের ঢল

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৫ নভেম্বর ২০১৭

কুয়াকাটায় পুণ্যস্নানে ভক্তের ঢল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৪ নবেম্বর ॥ রক্তিম লাল আভা ছড়ানো সূর্য বিশাল সাগরের জলরাশির বুক চিরে আলো দিতেই উলুধ্বনিতে সরগম হয়ে যায় প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সাগরপার। হাজার হাজার নর-নারী রাসভক্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন পূজায়। সাগরে পুণ্যস্নানে নেমে পড়েন এসব পুণ্যার্থী। শুধু নিজে নয়, স্বামী-সন্তান থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসেন হাজারো পরিবারের গৃহকর্ত্রী। সারাবছরের পঙ্কিলতা দূর হয়ে যায়- এমন বিশ্বাস নিয়েই প্রতি বছরের মতো এ বছরও হাজার হাজার রাসভক্ত পুণ্যার্থী মিলিত হয় কুয়াকাটা সৈকতে। রাতভর এ ক্ষণটির জন্য অপেক্ষা রাসভক্ত পুণ্যার্থীর। কুয়াশায় ঢাকা শনিবারের ভোরের এ দৃশ্য সব শ্রেণীর মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। মৃদু শীতল পরশে মাখা ছিল আবহাওয়া। তা উপেক্ষা করে পূর্ণিমার এ তিথিতে ভক্তদের সমাগমে কুয়াকাটা সৈকত মুখরিত হয়ে যায়। শুক্রবার রাতভর এসব পুণ্যার্থী কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় রীতিতে অংশগ্রহণ করেন। রাতভর এক মনে চলে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য পাওয়ার চেষ্টা। শত বছরের ঐতিহ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের এ রাসমেলা এখন পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। শুক্রবার রাতে রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মাছুমুর রহমান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র ও রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কলাপাড়ার ইউএনও তানভীর রহমান, কুয়াকাটা পৌর মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা, জেলা প্রশাসন ছাড়াও পুলিশ প্রশাসন এবং কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্বচ্ছ চাঁদের আলোয় ভরা আকাশে ফানুস উড়িয়ে দেন আয়োজকরা। শনিবার প্রত্যুষে পুণ্যস্নান শেষে এসব দর্শনার্থী কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিলিত হন। রাস উৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপনে কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে প্রতি বছরের মতো এ বছরও পাঁচ দিনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে হাজার হাজার ভক্ত স্নান শেষে রাধাকৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন। শ্রীকৃষ্ণের অলৌকিক ক্ষমতাবলে কংস রাজাকে বধ করে মানবকুলকে রক্ষা করেন। পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে হিংসা, হানাহানি, বিদ্বেষ মোচনের লক্ষ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ় করতে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে নিয়ে বৃন্দাবনের তমাল ও কদমকুঞ্জে পূর্ণিমার এ তিথিতে নিষ্কাম প্রেমে মিলিত হয়ে এক উপাখ্যানের রচনা করেন, যা তখন থেকে রাস উৎসবে পরিণত হয়। গলাচিপা স্টাফ রিপোর্টার গলাচিপা থেকে জানান, রামনাবাদ মোহনায় শনিবার ভোরে হাজারও পুণ্যার্থীর ¯œানের মধ্য দিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার হরিদেবপুর রাধামাধব সেবাশ্রমে শুরু হয়েছে তিনদিনের রাসোৎসব। এর আগে শুক্রবার রাতভর রাধামাধব মন্দির আঙিনায় পরিবেশিত হয়েছে রাসলীলা পালাকীর্তন। শনিবার সূর্য ওঠার আগ থেকেই রামনাবাদ মোহনায় ¯œানের উদ্দেশে হরিদেবপুর রাধামাধব মন্দিরের উদ্দেশে বিভিন্ন শহর ও গ্রামাঞ্চল থেকে মানুষের ঢল নামে। মানুষ আসে ঢাকডোল বাজিয়ে। সুন্দরবনের রাস উৎসব শেষ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, দুবলার চরের আলোরকোলে ১৩৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনব্যাপী রাস উৎসব শনিবার সকালে পুণ্য স্নানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। এদিন সূর্যোদয়ের আগে হাজার হাজার পুণ্যার্থী সাগরের প্রথম জোয়ারে স্নান করে তাদের মনোবাসনা পূরণের প্রার্থনা করেন। সূর্যোদয়ের আগে সাগরের জোয়ারের জলে পুণ্যস্নান করলে পাপমোচন হয়ে থাকে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
×