ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরা সিটি কলেজ

অধ্যক্ষসহ বারো শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৫ নভেম্বর ২০১৭

অধ্যক্ষসহ বারো শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির অভিযোগ

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষসহ ১২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে একইসঙ্গে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কলেজের একাধিক শিক্ষক একইসঙ্গে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও অধ্যক্ষ একজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ায় কলেজের অভ্যান্তরীণ অনিয়ম ও কোন্দলের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মিম সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৩ বছর আগের কর্মস্থল ঝাউডাঙ্গা কলেজ থেকে এমপিওভুক্তির চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দুটি কলেজের হাজিরা খাতায় গত ৬ বছরের তার উপস্থিতির স্বাক্ষর রয়েছে বলে দাবি করেছেন দুই কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাইদ ও খলিলুর রহমান। এই কলেজের একাধিক শিক্ষক বিভিন্ন সরকারী কলেজেও শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষসহ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠেছে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে। সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ১১ সালে যোগদেন মিম সাইফুল ইসলাম। এর আগে তিনি ঝাউডাঙ্গা কলেজে একই বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদেন ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। সিটি কলেজে যোগ দেয়ার সময় তিনি ঝাউডাঙ্গা কলেজে পদত্যাগপত্র জমা না দিয়েই সিটি কলেজে যোগ দেন বলে দাবি সিটি কলেজ অধ্যক্ষের। এরপর থেকে তিনি ৬ বছর ধরে দুটি কলেজের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আসছেন। সম্প্রতি ঝাউডাঙ্গা কলেজে ঐ পদে এমপিওভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি সিটি কলেজে পদত্যাগ না করেই ঝাউডাঙ্গা কলেজ থেকে অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে এমপিওর জন্য কাগজপত্র তৈরি করে সুপারিশসহ কলেজ সভাপতি এমপির কাছে পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ঝাউডাঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান তার কলেজে সাইফুল ইসলামের উপস্থিতি রয়েছে বলে দাবি করে বলেন, আইনগত সমস্যা না থাকলে তাকে এমপিওভুক্ত করা হবে। তবে এ বিষয়ে মিম সাইফুল ইসলাম ঝাউডাঙ্গা কলেজের খাতাপত্রে তার স্বাক্ষর নেই দাবি করে শনিবার বলেন, তিনি ঝাউডাঙ্গা কলেজে পদত্যাগ করেই সিটি কলেজে যোগ দেন। সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রুনা লায়লা গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সিটি কলেজে শূন্যপদে যোগদান করেন। এর পরপরই তার এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) পাঠান কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ। সিটি কলেজে কর্মরত অবস্থায় চলতি বছরের পহেলা মার্চ শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের ৪৩ নং হেঞ্চি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি সিটি কলেজে ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই সঙ্গে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেছেন। চলতি বছরের পহেলা মে এমপিওভুক্তির খবর পেয়ে তিনি গত ১৫ জুন প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি নেন। ১২ জুন তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক মাসের বেতন নয় হাজার ৭০০ টাকা সোনালী ব্যাংক শ্যামনগর শাখার মাধ্যমে ফেরত দেন। চাকরিবিধি অনুযায়ী একইসঙ্গে দু’টি শূন্যপদে চাকরি করতে হলে একটি পদে অব্যাহতি নিয়ে অন্য পদে যোগদান করার নিয়ম থাকলেও রুনা লায়লা তা করেননি বলে অভিযোগ। সিটি কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মুরাদ মাহমুদ চুকনগরের মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজে, সমাজ কল্যাণ বিভাগের প্রভাষক গৌর চন্দ্র ম-ল চুকনগরের মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজে, কৃষি ডিপ্লোমা শাখার প্রভাষক আব্দুল জলিল শহরতলীর কদমতলায় একটি মেডিক্যাল ইনস্টিটিউটে, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আজিম খান শুভ সাতক্ষীরা সরকারী মহিলা কলেজে, রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের আবু জাফর সাতক্ষীরা সরকারী মহিলা কলেজে, উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান দাঁতভাঙ্গা কলেজে, বাংলা বিভাগের প্রভাষক আশরাফুল হক ছফুরন্নেছা মহিলা কলেজে, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুন কুমার সরকার ইসলামিয়া মহিলা কলেজে চাকরি করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ইসলামী শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক আমিমুল এহসানসহ কয়েকজন মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়ে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদ শনিবার বলেন, তিনি কলেজ সভাপতির অনুমতি নিয়েই ননএমপিও ডিবিখান হোমিও কলেজে পার্টটাইম শিক্ষকতা করেন। অন্য শিক্ষকদের একাধিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস সিটি কলেজে পদত্যাগ না করেই আশাশুনি সরকারী কলেজে যোগ দিয়ে সেখানে চাকরি করছেন। তাকে নোটিস দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে এই মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
×