ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এগারো দিনের এশিয়া সফরে ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৫ নভেম্বর ২০১৭

এগারো দিনের এশিয়া সফরে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহান্তে ১১ দিনব্যাপী এশিয়া সফরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা ধরনের বিচার বিশ্লেষণ চলছে। তার এই দীর্ঘ সফরকে ১৯৯১ সালে জর্জ এইচডব্লিউ বুশের ম্যারাথন এশিয়া সফরের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। খবর ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটরের। মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ আমেরিকান জনগণ তাদের দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এশিয়ার গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। কারণ এই এশিয়াতেই অতি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি ও সম্ভাবনাময় কয়েকটি দেশ আছে যারা বিশ্বের ৪০ শতাংশের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু আগেকার যেসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট এশিয়া নীতিতে গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করে গেছেন ট্রাম্প তা থেকে বেশ ভিন্ন রীতি অনুসরণ করছেন। যার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বৈদেশিক নীতিসহ অন্যান্য তৎপরতাকে অনেকে আন ‘প্রেডিক্ট্যাবল’ (আগে থেকে বলা যায় না) বলে বর্ণনা করেছেন। যেমন বারাক ওবামার সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রভাব বিস্তার হতো ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি চুক্তির মাধ্যমে। এ এলাকায় আসিয়ান জোটভুক্ত ১২ দেশের সঙ্গে সম্পাদিত এই টিপিপি চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রশাসন এ অঞ্চলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হতো। টিপিপি চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল এ অঞ্চলে চীনের ক্রম সম্প্রসারমান রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির গতি কিছুটা হলেও চাপের মুখে রাখা। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে টিপিপি থেকে তার দেশের নামই প্রত্যাহার করে নিলেন। এর পরিবর্তে চীনের প্রভাব রুখতে তিনি কোন পথ ধরে অগ্রসর হবেন তা নিয়ে বিশ্লেষকরা গলদঘর্ম হচ্ছেন। অনেকের মনে এই প্রশ্নও জেগেছে যে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কী বৃদ্ধি পাচ্ছে না ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে? তবে এ এলাকার অর্থনীতির চেয়ে ট্রাম্প রাজনৈতিক ইস্যুকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন তা কয়েকটি ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে গেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সম্প্রতি ট্রাম্পের পরামর্শক্রমে রেক্স টিলারসন আসিয়ান দেশভুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ফোন করে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকের ৫৫ মিনিটই ব্যয় হয় উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক স্টিমসন সেন্টারের পরিচালক ব্রায়ান আইলার বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরও অনেক সমস্যাকে পাস কাটিয়ে শুধু উত্তর কোরিয়া নিয়ে আলোচনা করায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তবে ওয়াশিংটনের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আসন্ন এশিয়া সফরকালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেসহ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের রূপরেখা ইতোমধ্যেই তৈরি করা হয়ে গেছে। এই রূপরেখায় নতুন একটি নাম যুক্ত হয়েছে এবং তা হচ্ছে ভারত। টিলাসনের সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে ভাতরকে অগ্রাধিকার দিয়ে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে। অথচ এর আগে ওবামা প্রশাসন বা তারও আগে এ অঞ্চলের নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বলা হতো। কেউ কেউ বলেন, এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে পরিচালিত মার্কিন নীতিতে ভারতকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছেÑ এই বার্তাই ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তবে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নীতির চূড়ান্ত রূপরেখা জানা যাবে আগামী ১০ নবেম্বর ভিয়েতনামের দানাং-এর এ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচী নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ১১ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই সফরে ট্রাম্প জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সে যাবেন। গত ২৫ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের এটাই দীর্ঘতম সফর। সফরে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে জোটবদ্ধতা তুলে ধরার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চীনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পূর্ব এশিয়ায় রওনা হওয়ার আগে শুক্রবার ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দেশটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঙ্গরাজ্য হাওয়াইতে পৌঁছান। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ডের একটি ব্রিফিংয়ে অংশ নেন ট্রাম্প। এখান থেকে তার পার্ল হার্বারে ১৯৪১ সালে জাপানি বোমাবর্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের নিহত নৌসেনাদের স্মরণে নির্মিত ইউএসএস এ্যারিজোনা মেমোরিয়াল পরিদর্শনে যান। শনিবার হাওয়াই থেকে ট্রাম্প দম্পতি জাপানের উদ্দেশে রওনা হন। সেখান থেকে তারা দক্ষিণ কোরিয়া যাবেন। দক্ষিণ কোরিয়া সফরকালে ট্রাম্প ডিমিলিটারাইজড জোন (ডিএমজি) নামে পরিচতি দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন না; গত সপ্তাহেই তার সহকারীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। সেখানে না গেলেও সিউলের দক্ষিণে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রিতে যাবেন তিনি।
×