ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিকল্প নগরায়ণ

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৫ নভেম্বর ২০১৭

বিকল্প নগরায়ণ

রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকল্প শহরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান নগর বিশেষজ্ঞ বালাকৃষ্ণ মেনন। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিটিস ফোরাম : বিল্ডিং নলেজ নেটওয়ার্ক এ্যান্ড পার্টনারশিপ ফর সাসটেইনেবল আরবান ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। সেমিনারে বাংলাদেশে টেকসই নগর উন্নয়নে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী নীতিমালা প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছেন নগর ও নগর ভাবনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা। তারা নগরীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাদের নিজস্ব আয় বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেন। বাড়তি আয়ের আশায় অনেকে ঢাকায় আসেন, অনেকে আবার চাকরির কারণে গ্রামে থাকতে পারেন না। গ্রামে নেই বিদ্যুতের সুব্যবস্থা, নেই ভাল কোন চিকিৎসাসেবাও। মানসম্পন্ন স্কুল-কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও আসতে হয় ঢাকায়। তথ্যপ্রযুক্তির সেবা অনুপস্থিত গ্রাম ও অন্যান্য শহরে। যেখানে ঢাকায় সবকিছুই গতিশীল, সেখানে অন্যান্য নগর কেন যেন স্থবির। এ কারণে ঢাকায় বস্তিবাসীর সংখ্যা বেড়ে উঠছে। স্বল্প স্থানে এত মানুষকে আশ্রয় ও সেবা দেয়া কঠিন। এক্ষেত্রে রাজধানীমুখী কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। অপরিকল্পিতভাবে শহর গড়ে ওঠার ফল হিসেবেই এসব সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। এ কথা সত্য যে, আমাদের দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম রাজধানীকেন্দ্রিক। শুধু তাই নয়, সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ভাল থাকার জন্যও সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় আসে। এতে রাজধানীতে মানুষের চাপ বাড়ছে ক্রমশ। ঢাকা হয়ে উঠছে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে কর্মসংস্থানের সন্ধানে ঢাকায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ এসেছে। তাই ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমাতে অন্যান্য শহরে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের সেবা যোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থাকে। তাই নগর ও সেবা বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হচ্ছে বহুদিন ধরে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি এখনও দৃশ্যমান হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা থেকে মানুষের স্রোত কমানো সম্ভব নয়। পরিকল্পিতভাবে দেশের অন্য শহর ও গ্রামাঞ্চল গড়ে তুলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব। অধিকাংশ উন্নয়ন ঢাকাকেন্দ্রিক হবে এরকম চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের সব অংশে সমভাবে উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট নগর ও গ্রামে জনজীবনের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তুলতে হবে। নইলে ঢাকাবাসীর সঙ্গে অন্যান্য শহরে বসবাসরত মানুষের আর্থ-সামাজিক বৈষম্যও বাড়বে। ঢাকা হয়ে উঠবে আরও বসবাসের অযোগ্য শহর। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক থেকে শুরু করে শিল্প বিকেন্দ্রীকরণে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনায় আনতে হবে ব্যাপক পরিবর্তন। ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন চিন্তা পরিহারপূর্বক শহর ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সুচিন্তিত উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকার সঙ্গে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে নিশ্চিত করতে হবে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন। সেজন্য ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিকল্প শহরে কর্মসংস্থান প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বড় শহরের ওপর চাপ কমাতে ছোট ছোট শহরেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে।
×