রুমেল খান ॥ এ্যাথলেটিক্সকে বলা হয় ‘মাদার অব গেমস’। আর সেই গেমসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিসিপ্লিন হচ্ছে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট। অনুর্ধ ১০ সেকেন্ডের রুদ্ধশ্বাস দৌড়ে কে হন বিজয়ী সেটা জানতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গত পাঁচ বছর ধরেই হাজির থাকেন যেসব দর্শক তারা প্রতিবারই বিজয়ী হিসেবে স্বর্ণপদক গলায় ঝুলাতে মঞ্চে উঠতে দেখেছেন একজন স্প্রিন্টারকেই। তিনি মেজবাহ আহমেদ। বাংলাদেশের দ্রুততম মানবের খেতাবটা ধরে রেখেছেন বছর পাঁচেক ধরেই। সেই গতিতারকা মেজবাহ্র শুক্রবার ছিল শুভ জন্মদিন। ২২ বছর পূর্ণ করে ২৩-এ পা রাখলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই এ্যাথলেট।
জাতীয় মিটে তিনটি, সামারে দুটি এবং বাংলাদেশ গেমসে একবার দ্রুততম মানব হওয়া মেজবাহর প্রথম দ্রুততম মানব হওয়ার ক্ষণটি ছিল ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে। সর্বশেষ দ্রুততম মানব হয়েছেন এ বছরের জুলাই সামার চ্যাম্পিয়নশিপে। স্বর্ণপদক জিতেই দারুণ এক রেকর্ডের সমকক্ষতা অর্জন করেন। সাবেক জাতীয় স্প্রিন্টার মোশাররফ হোসেন শামীমের টানা ছয়বারের জাতীয় পর্যায়ে দ্রুততম মানব হওয়ার রেকর্ডটি স্পর্শ করেন। কিভাবে এই খেলায় আসলেন বাগেরহাটের ছেলে মেজবাহ? আসলে তার রক্তে-মাংসেই আছে এ্যাথলেটিক্স। মা শাহিনা বেগম এবং মামা মনজুর ছিলেন এ্যাথলেট। তাদের দেখেই এই খেলায় আসতে উদ্বুদ্ধ হন ১৯৯৫ সালের ৩ নভেম্বর পৃথিবীতে আসা মেজবাহ। তাদের দুটি স্বপ্ন ছিল মেজবাহকে ঘিরে। দুটোই পূরণ করেছেন তিনি। মামা চাইতেন মেজবাহ যেন দ্রুততম মানব হন। মামার স্বপ্ন পূরণ করেছেন ২০১৩ সালেই। আর মা চাইতেন ছেলে অলিম্পিকে খেলুক। মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন মেজবাহ ২০১৬ রিও অলিম্পিকে অংশ নিয়ে। তার সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন মা-বাবা। আর ট্র্যাকে মেজবাহকে ঘষে-মেজে শাণিত করেছেন প্রখ্যাত সাবেক এ্যাথলেট এবং বর্তমানে কোচ আবদুল্লাহ-হেল-কাফি। নিজের শিষ্যের জন্মদিন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কাফি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘জনকণ্ঠের মাধ্যমে মেজবাহকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দোয়া করি সে আরও এগিয়ে যায়, আরও সাফল্য পায়। যদি সে শামীম স্যারের সবচেয়ে বেশিবার দ্রুততম মানবের খেতাব জেতার রেকর্ড এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মাহবুব আলমের সেরা টাইমিংয়ের রেকর্ড ভাঙ্গতে পারে তাহলে খুবই খুশি হব।’ কেন, এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জেতার কথা বললেন না যে? কাফির ব্যাখ্যা, ‘বাস্তবতার নিরিখেই ওই প্রসঙ্গে কিছু বলিনি। কেননা সাফে স্বর্ণ জেতা খুবই কঠিন হবে মেজবাহর জন্য। কেননা তার বয়স ও ফর্ম এখন পড়তির দিকে। তবে এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন যদি তাকে সঠিক গাইডেন্স ও উন্নত ট্রেনিং দেয় তাহলে হয়তো সাফে পদক জিতবে সে, কিন্তু স্বর্ণপদক নয়।’
একই কথা বললেন মেজবাহও, ‘সাফে পদক জেতাই কঠিন। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ। এক্ষেত্রে ফেডারেশনের নতুন কমিটির কার্যক্রমের দিকে তাকিয়ে আছি। আগামী ২০১৮ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়াতে কমনওয়েলথ গেমস খেলতে যাব। তার কদিন আগেই সেখানে গিয়ে ট্রেনিং নেয়ার কথা রয়েছে।’ জন্মদিন প্রসঙ্গে মেজবাহ বলেন, ‘ফেসবুক এবং ফোনে পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে প্রচুর বার্থডে উইশ পেয়েছি, পাচ্ছি। এখন আমি ক্যাম্পে আছি। সবাই মিলে ৩৫ জন। তারা আমাকে সন্ধ্যায় কেক কেটে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। এই প্রথম জন্মদিন পালন করলাম ক্যাম্পে।’
ক্যারিয়ার নিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে কতটা ফারাক? ‘এ পর্যন্ত যা অর্জন করেছি তাতে আমি সন্তুষ্টই।’ যার কারণে এই সুন্দর ধরণীতে আসা, জন্মদিন পালন করাÑ সেই মায়ের সঙ্গে ফোনে কি কথা হলো? ‘সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে মায়ের ফোনেই। আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালেন। দোয়া করলেন। সবকিছুর খোঁজ নিলেন। অদ্ভুত এক ভাললাগায় মনটা ভরে গেল।’ আবেগী কণ্ঠস্বর মেজবাহর।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: