ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিশেহারা কৃষক

যশোরে ভাইরাসে বেগুন ক্ষেত উজাড়

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৪ নভেম্বর ২০১৭

যশোরে ভাইরাসে বেগুন ক্ষেত উজাড়

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরের বৃহত্তর সবজি উৎপাদন এলাকা সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও বারিনগর ইউনিয়নে ‘স্ট্রোক’-এ আক্রান্ত হয়ে বেগুন গাছ মরে ক্ষেত উজাড় হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ‘তুলসী পড়া’ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ফলন বন্ধ হয়ে গেছে। শিম ক্ষেতেও দেখা দিয়েছে মড়ক। বর্তমান সময় পর্যন্ত বিঘাপ্রতি যেখানে তিন লাখ টাকার বেগুন ও ৫০ হাজার টাকার শিম উৎপাদন হওয়ার কথা সেখানে দুই হাজার টাকার সবজিও কৃষকরা পাননি। এলাকার মাঠে মাঠে এখন কৃষকের হাহাকার। কৃষি বিভাগ স্ট্রোককে ব্যাকটেরিয়াল উইলড ও তুলসী পড়াকে এক ধরনের ভাইরাস বলছে। চুড়ামনকাটি ও বারিনগর ইউনিয়ন সবজি জোন বলে খ্যাত। সবজি উৎপাদনে এই জোনের অন্যতম গ্রাম শাহবাজপুর। এই গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবারের সবাই সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। সবজি চাষী কামরুল ইসলাম জানান, গ্রামটিতে প্রায় এক হাজার বিঘা জমিতে সবজি চাষ হয়। এই গ্রামে কৃষিজাত ফসলের মধ্যে সবজিই প্রধান। সুদূর অতীতকাল থেকে এখানে সবজি চাষ হয়ে আসছে। এখানকার ভূমি প্রকৃতি সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। গ্রামবাসীর যশ খ্যাতি অর্থনৈতিক অগ্রগতি সবই সবজিকে ঘিরে। কিন্তু হালে এর চাষাবাদ করতে গিয়ে কৃষকরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ছেন। নানা রকম রোগ বালাইয়ের কারণে তারা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। যশোর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসিত ঘোষ জানান, সদর উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে তিন হাজার ৬৮৫ হেক্টরে। এরমধ্যে শিমের চাষ হয়েছে ৯২০ হেক্টরে। ৩৬০ হেক্টরে হয়েছে বেগুনের চাষ। এছাড়া বাঁধাকপি ৬৪০ হেক্টর, ফুলকপি ১১৬ হেক্টর, মূলা ৫১০ হেক্টর, পটল ৩১০ হেক্টর এবং আলুসহ অন্যন্য সবজি ৭৫৪ হেক্টর। প্রায় সমপরিমাণ সবজি চাষ হয় গ্রীষ্ম মৌসুমেও। আবাদকৃত শীতকালীন সবজির মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ হলো বেগুন ও শিম। এই দুটি সবজি ‘স্ট্রোক’ ‘তুলসী পড়া’ ও মড়কে সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। অসিত ঘোষ জানান, স্ট্রোক বলে কোন রোগের কথা তার জানা নেই। তবে এবারের অতি বর্ষণ বেগুন গাছের মড়কের অন্যতম কারণ হতে পারে। তুলসী পড়া রোগটা এক ধরনের ভাইরাস। ক্ষেতের কোন একটি গাছ আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই গাছটি কেটে ফেলে পুড়িয়ে অথবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। কামরুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচেক হলো বেগুনে স্ট্রোক রোগ দেখা দিচ্ছে। এই রোগে আক্রান্ত গাছ দু-একদিনের মধ্যে মরে যাচ্ছে। যে ক্ষেতে একবার এই রোগ দেখা দিচ্ছে সেই ক্ষেত আর রক্ষা পাচ্ছে না। এবার এই রোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেমন মানুষ হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বেগুন গাছের ঠিক তেমনটাই হচ্ছে। বিকেলে যে গাছটা সবুজ সতেজ দেখা যায় সকালে সেই গাছটাই দেখা যায় ঢলে পড়তে। আর দিন পার না হতেই গাছটি শুকিয়ে মরে যায়। মানুষের স্ট্রোকের সঙ্গে বেগুনের এই রোগের মিল থাকায় কৃষকরা একে স্ট্রোক বলে থাকেন। গোটা এলাকা জুড়ে রোগটা এই নামেই পরিচিত। স্ট্রোকের প্রতিষেধক জানা না থাকায় কৃষকরা নীরব দর্শক হয়ে গাছের মড়ক দেখছেন আর হাহুতাশ করে কাটাচ্ছেন। তুলসী পড়া প্রতিরোধে কীটনাশক কোম্পানির মাঠকর্মীদের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত ক্ষেতে সুইটপ্রিন্ট ও টাইপিট নামের ওষুধ স্প্রে করছেন। কামরুল ইসলাম এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। কিন্তু ক্ষেতের গাছগুলো সবই একে একে মরে যাচ্ছে। তিনি এক বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছেন। তার অবস্থাও একই রকম। মড়ক লেগে শিম গাছ মরে যাচ্ছে। শাহবাজপুর মাঠে আবাদ হয়েছে বেগুন, শিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, পটোল, আলু প্রভৃতি। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশের আবাদ হয়েছে বেগুন ও শিমের। যা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা শুধু কামরুল ইসলামের নয়। গ্রামের সবিনুর রহমান, শিমুল হোসেন, আবু হানিফসহ সব সবজি চাষী একই বিপর্যয়ের শিকার।
×