ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্সিলর প্রার্থীদের আগাম প্রচার

বরিশাল নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে নির্বাচনী আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বরিশাল নগরীর ৩০ ওয়ার্ডে নির্বাচনী আমেজ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত না হলেও সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি বসে নেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ৩০জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১০জন নারী কাউন্সিলরসহ নতুন মুখের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে তারা মাঠে সরব থেকে নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বরিশালসহ রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হবে দলীয় প্রতীকে। তাই এ নির্বাচনগুলোর দিকে রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর বাড়তি নজর থাকবে। সূত্রে আরও জানা গেছে, আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর প্রথমসভা থেকে কর্পোরেশনের মেয়াদ শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ছয় মাসের মধ্যে যে কোনদিন ভোট গ্রহণ করা যায়। সেই হিসেবে আগামী বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবরের মধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই নির্বাচনী ডামাডোল বাজবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। তবে আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মে থেকে জুন মাসে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নির্বাচনের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ৩০জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১০জন নারী কাউন্সিলরগণ ও নতুন মুখের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ওয়ার্ডের কেউ মারা গেলে, অসুস্থ হলে, দোয়া-মিলাদ কিংবা সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিগত দিনে অনেক কাউন্সিলর কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেখা না মিললেও বর্তমানে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। কেবল নিজ ওয়ার্ডেই নয় পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডেও কেউ বিপদগ্রস্ত হলে তার সহযোগিতায় হাত বাড়াচ্ছেন কেউ কেউ। বিগত ঈদ-উল আজহা, দুর্গাপূজা ও স্মাটকার্ড বিতরণে নতুন মুখের প্রার্থীদের পাশাপাশি বর্তমান কাউন্সিলররাও প্রচার প্রচারণায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। পাড়া-মহল্লায় বিশাল আকৃতির বিলবোর্ডে জনগণের পাশে থাকার নানা শ্লোগান দিয়েও কেউ কেউ নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। ঈদ শুভেচ্ছা ও দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও তোরণ নির্মাণের মধ্যদিয়েই নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে পুরো নগরীতে। কাউন্সিলররা অবশ্য শুভেচ্ছা ব্যানারের পাশাপাশি বাড়তি প্রচারণা চালাচ্ছেন স্মাটকার্ড বিতরণ নিয়ে। ওয়ার্ডগুলোতে স্মাটকার্ড বিতরণের সময় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। দল বেঁধে কাউন্সিলর কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা কাক ডাকা ভোর থেকে ভোটারদের স্মাটকার্ড পেতে সহযোগিতা করেছেন। ওয়ার্ডগুলোর নির্দিষ্টস্থানে স্মাটকার্ড বিতরণকালে নানাভাবে ভোটারদের মন জয়ের জন্য প্রচার প্রচারণা করেছেন প্রার্থীদের সমর্থকরা। নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন টানা ২৪ বছর কমিশনার ও কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালনকারী পাঁচজন কাউন্সিলর। এদের মধ্যে ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলতাফ মাহমুদ সিকদার, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একেএম মুরতজা আবেদীন, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হাওলাদার ও ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ জাকির হোসেন জেলাল। এ চারজনের পাশাপাশি ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বর্তমান প্যানেল মেয়র-২ মোশারেফ আলী খান বাদশা তিনবার ও তার স্ত্রী একবার মিলিয়ে এ ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রয়েছেন পারিবারিকভাবে। ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনে এ পাঁচজন তৎকালীন পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ওইসব ওয়ার্ডে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় টানা চারবার জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। এদের বাইরে টানা হ্যাট্রিক করা ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র কেএম শহীদুল্লাহ, ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির, ২৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির, ৫নং ওয়ার্ডের মাইনুল হক এবং দুইবার নির্বাচিত ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান গাজী হিরু, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান টিপু, ১৯নং ওয়ার্ডের গাজী নঈমুল হোসেন লিটু ও নতুন মুখের কাউন্সিলর হিসেবে ১নং ওয়ার্ডের সৈয়দ সাইদুল হাসান মামুন রয়েছে শক্ত অবস্থানে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে এসব প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও এসব কাউন্সিলররা দিন-রাত সমানতালে ওয়ার্ডবাসীকে সময় দিচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা, রাজনীতিতে উচ্চপদে আসীন থাকায় তাদের কর্মীরা বাড়তি সুবিধা নিয়ে কাজ করতে পারছেন। এছাড়া ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল চৌধুরী রেজভীর মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে এনামুল হক বাহার নির্বাচিত হয়েছেন। এ ওয়ার্ডে মরহুম রেজভীর বড় ভাই ইমরান চৌধুরী জামাল সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরু করেছেন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে ১০নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের হ্যাট্রিক কাউন্সিলর রাশিদা পারভীন, দুইবার নির্বাচিত সংরক্ষিত ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিনা বেগম, সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহানারা বেগম এবং সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। অপর ওয়ার্ডগুলোতে বর্তমান সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। সূত্রমতে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা কাউন্সিলরদের বাইরের ওয়ার্ডগুলোতে বর্তমান কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে চলছে নিত্যনতুন কৌশল। বিত্তবান ও ক্ষমতাধররা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী বাগাতে কিংবা ভোট নিশ্চিত করতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। এসব ওয়ার্ডে বিত্তবান কাউন্সিলর ও প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী থাকায় প্রতিদিনই নানা অনুষ্ঠানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছেন। কেউ মারা গেলে কিংবা অসুস্থ থাকলে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন সকলেই। আবার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পদ-পদবির প্রার্থীরা যুবকদের নিয়ে মহড়া দিয়ে নিজেদের পেশিশক্তির জানান দিচ্ছেন। বর্তমান কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের এসব কার্যক্রমে নির্বাচনের ছয় মাস পূর্বেই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।
×