ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে

নিখিল মানখিন ॥ দেশে যক্ষ্মা শনাক্তে গতি বেড়েছে। যক্ষ্মা দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে শনাক্তের জন্য আরও ১০টি জিন এক্সপার্ট মেশিন সংযুক্ত করা হয়েছে। এনটিপির মাধ্যমে কফে জীবাণুযুক্ত যক্ষ্মারোগীর চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৪ শতাংশ। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দ্রুত নগরায়ণ, ঘনবসতি, শিল্পাঞ্চল, বিপুল মানুষের চাপের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় ঢাকা বিভাগে যক্ষ্মারোগী শনাক্তের তুলনামূলক উচ্চহার এ পরিস্থিতির সাক্ষ্য দিচ্ছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা। শনাক্তকরণে জটিলতা শিশু যক্ষ্মার ক্ষেত্রে এখনও প্রধান চ্যালেঞ্জ। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর (এনটিপি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যক্ষ্মা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে একজন যক্ষ্মার জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনগণ যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত। তবে নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদের চিকিৎসায় যক্ষ্মা সম্পূর্ণ ভাল হয়। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ। অবহেলা না করে কফ পরীক্ষা করাতে হবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, যা মাইকোব্যাটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক অতি সূক্ষ্ম জীবাণুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। প্রধানত ফুসফুসই যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়। যক্ষ্মা জীবাণু দেহের অন্য অংশকেও আক্রান্ত করে যক্ষ্মা রোগ তৈরি করতে পারে। ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত কফে জীবাণুযুক্ত রোগী যদি বিনা চিকিৎসায় থাকে, তবে বছরে ১০ থেকে ১৫ জনকে যক্ষ্মার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত করে। জীবাণু দ্বারা সকল সংক্রমিত ব্যক্তিই যক্ষ্মা রোগে ভোগে না। যে সকল ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারাই প্রধানত যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই প্রতিটি রোগীর দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শেষ করা জাতীয়, আঞ্চলিক ও বিশ্বের যক্ষ্মা প্রতিরোধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। বিশ্বে প্রতিবছর ৮.৮ মিলিয়নের বেশি লোক যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আর প্রতিবছর ১.৪ মিলিয়ন লোক যক্ষ্মায় মারা যায়। ২২ দেশে বিশ্বের মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ বাস করে। মোট যক্ষ্মা রোগীর শতকরা ৪০ ভাগ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে বাস করে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর বিশেষজ্ঞরা জানান, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে এ সময়ে প্রধান চ্যালেঞ্জ ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর যক্ষ্মা। এমডিআর যক্ষ্মার অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর অনিয়মিত ওষুধ সেবন। এমডিআর যক্ষ্মার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী, জটিল ও ব্যয়বহুল। এছাড়া যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে শিশু যক্ষ্মা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের সমস্যা ও এইচআইভি যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ। শনাক্তকরণে জটিলতা শিশু যক্ষ্মার ক্ষেত্রে এখনও প্রধান চ্যালেঞ্জ। এছাড়া সংক্রমণের ইতিহাস সঠিকভাবে জানা যায় না। অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল থাকে এক্সরে মেশিন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যক্ষ্মা শনাক্ত যন্ত্র জিন এক্সপার্টের অভাব রয়েছে। চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকে না। জনসচেতনতারও অনেক অভাব লক্ষ্য করা যায়। এসব কারণে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশু যক্ষ্মা রোগীর শনাক্তের হার অনেক কম। তবে অধিক জনসংখ্যা ও বসতির কারণে ঢাকায় শিশু যক্ষ্মা রোগী তুলনামূলক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নুরুল হক বলেন, পুষ্টিহীনতা, শহরের বস্তি, ভাসমান এবং নগর ও মহানগরীর জনগোষ্ঠী যক্ষ্মা কর্মসূচীর সফলতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডায়াবেটিস, তামাক, অবহেলা, অসচেতনতা ও অজ্ঞতা।
×