ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা-সিলেট ম্যাচ দিয়ে বিপিএল শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৪ নভেম্বর ২০১৭

ঢাকা-সিলেট ম্যাচ দিয়ে বিপিএল শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। এরপরই শুরু হয়ে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় লীগ। ‘চার-ছক্কা’র ধুন্ধুমার লড়াই। শুরু হয়ে যাচ্ছে বিপিএল। বর্তমান দল ঢাকা ডায়নামাইটস ও নবাগত দল সিলেট সিক্সার্সের মধ্যকার ম্যাচ দিয়েই আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসর। ম্যাচটি দুপুর ২টায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে। একইদিন আরেকটি ম্যাচ রয়েছে। রাত সাতটায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই গত আসরের রানার্সআপ দল রাজশাহী কিংস ও রংপুর রাইডার্স মুখোমুখি হবে। বিপিএল আজ শুরু হয়ে শেষ হবে ১২ ডিসেম্বর। একদিন ‘রিজার্ভ ডে’ও রাখা হয়েছে। এবার সাত দল অংশ নিচ্ছে। বরিশাল বুলসও ছিল। কিন্তু আর্থিক দিকগুলোর অসঙ্গতি থাকায় দলটি বাদ পড়েছে। ঢাকা ডায়নামাইটস, রাজশাহী কিংস, খুলনা টাইটান্স, রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, চিটাগং ভাইকিংস ও সিলেট সিক্সার্স এবার বিপিএলে অংশ নেবে। প্রথমবারের মতো বিপিএলে তিন ভেন্যুতে খেলা হবে। ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ও সিলেটের সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা হবে। প্রতিবার বিপিএলের খেলা ঢাকা থেকে শুরু হলেও এবার ব্যতিক্রম হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে বিপিএলের আসর শুরু হচ্ছে। সেটি নতুন ভেন্যু সিলেট থেকেই বিপিএলের পঞ্চম আসরের যাত্রা শুরু হচ্ছে। বিপিএল এবার চারপর্বে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবার দুই ভেন্যু থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় শেষ হতো বিপিএল। এবার শুরুতে সিলেটে, এরপর ঢাকায়, তারপর চট্টগ্রামে ও শেষে আবার ঢাকায় বিপিএলের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনালসহ মোট ৪৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতিতে লীগপর্বে ৪২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বাকি চারটি ম্যাচের মধ্যে একটি এলিমিনেটর, দুটি কোয়ালিফায়ার ও একটি ফাইনাল হবে। সিলেটে প্রথমপর্বে ৮ নবেম্বর পর্যন্ত লীগপর্বের প্রথম ৮টি ম্যাচ হবে। এরপর ঢাকায় দ্বিতীয়পর্বে ২১ নবেম্বর পর্যন্ত লীগপর্বের ১৬টি ম্যাচ হবে। তৃতীয়পর্ব হবে চট্টগ্রামে। ২৯ নবেম্বর পর্যন্ত ১০টি ম্যাচ হবে। বিপিএলের শেষপর্ব হবে ঢাকায়। চতুর্থ ও শেষপর্বটিতে লীগপর্বের আটটি ম্যাচ এবং এলিমিনেটর, দুটি কোয়ালিফায়ার ও ফাইনালসহ মোট ১২টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমবারের মতো দেশে দুই বেসরকারী চ্যানেলে (গাজী টিভি ও মাছরাঙ্গা টিভি) সরাসরি ম্যাচগুলো দেখাবে। এবার প্রথমবারের মতো একাদশে পাঁচ বিদেশী ক্রিকেটার খেলানো যাবে। এর আগে চার বিদেশী ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ ছিল। এবার সর্বোচ্চ পাঁচ বিদেশী ক্রিকেটার খেলানো যাবে। তবে তিন বিদেশী ক্রিকেটারকে খেলাতেই হবে। বিপিএল যখন শুরু হচ্ছে, সঙ্গে একটি প্রশ্নও থাকছে, এবার চ্যাম্পিয়ন হবে কে? ২০১২ সালে প্রথম আসরে শিরোপা জিতেছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। পরের আসরেও (২০১৩ সালে) শিরোপা জিতে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। বিপিএলের তৃতীয় আসর একবছর বিরতি দিয়ে আবার মাঠে গড়ায়। দ্বিতীয় আসরে ম্যাচ গড়াপেটা হয়। ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স দলটি। এর তদন্ত করতে সময় লাগায় এবং বিপিএল আবার সব ঝঞ্ঝাটমুক্ত করে শুরু করতে গিয়ে এক বছর বিরতি দেয়া হয়। বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালে আবার বিপিএল মাঠে গড়ায়। এবার নবাগত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বাজিমাত করে। দলটি প্রথমবার বিপিএলে অংশ নিয়েই শিরোপা জিতে। ২০১৬ সালে শিরোপা জিতে ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০১৩ সালের আসরে ম্যাচ গড়াপেটায় যুক্ত থাকায় তৃতীয় আসর থেকে ঢাকার পুরনো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের বাদ দেয়া হয়। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি নেয়া হয়। নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিও একবার চ্যাম্পিয়ন হয়। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা ডায়নামাইটস। বিপিএলে এখন পর্যন্ত দুই অধিনায়ক নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা জেতান। একজন মাশরাফি বিন মর্তুজা। আরেকজন সাকিব আল হাসান। প্রথম তিন আসরে মাশরাফির নেতৃত্বেই দলগুলো (ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স দুইবার, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স একবার) শিরোপা জিতে। চতুর্থ আসর অর্থাৎ গত আসরে সাকিবের নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা ডায়নাইটস। বিপিএলে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া অধিনায়ক হচ্ছেন মাশরাফি। এবারও তার দল রংপুর রাইডার্স শিরোপা জিততে চায়। তবে মাশরাফির দলের এবার শক্ত প্রতিপক্ষ ঢাকা ডায়নামাইটস। দেশী-বিদেশী তারকা ক্রিকেটার এ দুই দলে ভরপুর। এ দুই দলই এবার বিপিএলে সবচেয়ে শক্তিশালী দলও। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেসে কেউ কাউকে ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। আর তাই এর আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ নেয়া দুই অধিনায়ক মাশরাফি ও সাকিবের মধ্যেই শিরোপা জেতা নিয়ে চলবে আসল লড়াই! ঢাকা ডায়নামাইটসে এবারও নেতৃত্ব দেবেন সাকিবই। সঙ্গে দেশী তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী মারুফ, জহুরুল ইসলাম অমি, আবু হায়দার রনি, মোহাম্মদ শহীদ, নাদিফ চৌধুরী, সাকলাইন সজিব, সাদমান ইসলাম। বিদেশী তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে শহীদ আফ্রিদি, শেন ওয়াটসন, কুমার সাঙ্গাকারা, এভিন লুইস, কাইরন পোলার্ড, আসেলা গুনারতেœ, নিরোশান ডিকভেলা, মোহাম্মদ আমির, কেভন কুপার, সুনীল নারাইন রয়েছেন। এ ক্রিকেটারদের মধ্যে ওয়াটসন ইনজুরির জন্য খেলতে পারবেন না। আর আমির হয়তো পাকিস্তান ন্যাশনাল টি২০ কাপের জন্য ১৭ নবেম্বর পর্যন্ত খেলতে পারবেন না। তাতে ঢাকার শক্তি একটু হলেও কমবে। রংপুর রাইডার্সে মাশরাফির নেতৃত্বে দেশী ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীস, শামসুর রহমান শুভ, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, জিয়াউর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন, রুবেল হোসেন, এবাদত হোসেন, সোহাগ গাজী, আব্দুর রাজ্জাক, ইলিয়াস সানি, নাজমুল ইসলাম অপুর সঙ্গে বিদেশী ক্রিকেটার ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, রবি বোপারা, থিসারা পেরেরা, ডেভিড উইলি, কুশল পেরেরা, লাসিথ মালিঙ্গা, স্যামুয়েল বদ্রি রয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে দুই দল কতটা শক্তিশালী। অন্য দলগুলোর মধ্যে বড় তারকা ক্রিকেটার নেই। তাই ঢাকা ও রংপুরের মধ্যেই যে এবার শিরোপার লড়াইটা ভালভাবেই জমবে, তা বোঝা যাচ্ছে। তবে খেলা টি২০। যে কোন মুহূর্তে যে কোন কিছু ঘটতে পারে। অনেক শক্তিশালী দলও দুর্বল দলের কাছে হেরে যেতে পারে। দুর্বল দলের একজন-দুইজন ক্রিকেটারই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সেরকম ক্রিকেটার সবদলেই আছেন। তবে আজই বোঝা যাবে ঢাকা ও রংপুর কেমন শক্তিশালী দল। সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ঢাকার এবং রাজশাহীর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে রংপুরের শিরোপা স্বপ্ন জয় করার যাত্রা শুরু হচ্ছে। এ চার দলের ম্যাচের মধ্য দিয়ে বিপিএলের ৩৯ দিনের শুরুটাও আজ হয়ে যাচ্ছে।
×