সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সংসদীয় কূটনীতিকে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন সিপিএ চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, সমস্যাটির সমাধানে সদস্য দেশগুলো সংসদ ও সংসদ সদস্যদের সহায়তাও চাওয়া হবে। এদিকে সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর সংসদকে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরও সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সম্মেলনের অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যরা।
শুক্রবার সিপিএ সম্মেলনের তৃতীয় দিন রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু’তে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ বিষয়ে তিন দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের কমিশন গঠন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শক্তিশালী করা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সম্মেলনের অপর এক বৈঠকে নারীর ক্ষমতায়নে ধারাবাহিক কর্মসূচী রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণসহ নানা ইস্যুতে সেমিনারে আলোচনা হয়েছে।
সম্মেলন চলাকালে হোটেল রেডিসন ব্লু’র মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেসব্রিফিংয়ে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সিপিএ-র সদস্য দেশগুলোর সংসদে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও জনমত তৈরিতে সংসদীয় কূটনীতি সহায়ক হবে। এজন্য আগামী ৫ নবেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিসিতে আগত অতিথিদের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী একটি বিশেষ সংবাদ সম্মেলন করবেন। যেখানে রোহিঙ্গা সমস্যার সর্বশেষ তথ্য এবং কিভাবে এ সমস্যাটির দ্রুত স্থায়ী সমাধান করা যায় সে বিষয় তুলে ধরা হবে। সমস্যা সমাধানে সদস্য দেশগুলো সংসদ ও সংসদ সদস্যদের সহায়তাও চাওয়া হবে। এছাড়া বিষয়টি সম্মেলনের ৬ষ্ঠ দিনে ‘হোয়াটস ফ্যাক্টরস ফয়েল দি রাইচ অব ডিফারেন্ট কাইন্স অব ন্যাশনালিটিতে’ উথাপন করা হবে।
স্পীকার আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি বর্তমানে কেবলমাত্র বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবিষয়ে জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। সেটি বিশ্ব জনমত তৈরিতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব নেতাদের অধিকাংশ একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সিপিসিতে অংশগ্রহণকারী সংসদ সদস্যরা সম্মেলন শেষে নিজ নিজ দেশের সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন। যাতে বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়ক হবে।
এদিকে সম্মেলনের তৃতীয় দিনে উৎসব হলে সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চের কনফারেন্স অব্যাহত ছিল। সেখানে ‘দ্য রোল অব পার্লামেন্ট ইন কমব্যাটিং করাপশান’ শীর্ষক সম্মেলনে দুর্নীতি প্রতিরোধে সংসদের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই সেমিনারের প্রস্তাব ও সুপারিশমালা তুলে ধরেন সেমিনারের মডারেটর ব্্িরটেনের স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র আইল অব ম্যানের স্পীকার জন পটারসন। সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ তুলে ধরার সময় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জন পটারসন বলেন, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সম্প্রদায় থেকে যেকোন মাত্রায় দুর্নীতি দূর করতে আইন প্রণয়ন ও আইনী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পার্লামেন্টকে অবশ্যই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সরকারের সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রায় স্বচ্ছতা আনতে এবং দুর্নীতির সংস্কৃতির বিপরীতে নীতি প্রণয়নে সংসদ সদস্যদের একমত হতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিষ্ঠান স্থাপন, এসব প্রতিষ্ঠানের কাজের ক্ষেত্রে আইনী কাঠামো প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োজনীয় বিধির কার্যকর অনুসরণ নিশ্চিত করতে পার্লামেন্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জন পটারসন বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সংসদসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সংসদ সদস্যরা এ বিষয়ে দৃষ্টান্ত রাখতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সিপিএ সদস্য দেশগুলোর একত্রে কাজ করার প্রস্তাব করেছে সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চ। গত দু’দিনে এবিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সম্মেলনের মূল অধিবেশনে এই প্রস্তাব অনুমোদন ছাড়াও এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন স্মল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে স্মল ব্রাঞ্চের ‘ফিন্যান্সিয়াল এবং হিউম্যান রিসোর্স চ্যালেন্স’ শীর্ষক সেমিনারের মডারেটর ও আষ্ট্রেলিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ক্যাপিটাল টেরিটোরিয়ার সংসদ সদস্য ক্রিস স্টিল সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আমাদের জন্য বড় সঙ্কট। এটা মোকাবেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য ছোট ছোট দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি ও মানব সম্পদকে উৎপাদনশীলতায় পরিণত করতে ছোট ও বড় দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ বিষয়ে গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। আগামীতে সেবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ক্রিস স্টিল জানান, সেমিনারে সংসদ সদস্যরা জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দাতা সংস্থার সঙ্গে ছোট দেশগুলোকে বৃহত্তর পরিসরে সহায়তা করার প্রয়োজন। দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সুযোগ বাড়ানোর প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সংসদ ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সেবা ও সুযোগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়নে ধারাবাহিক কর্মসূচী ॥ নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছে সিপিএভুক্ত সংগঠন কমনওয়েলথ উইমেন পার্লামেন্টারিয়ানস (সিডব্লিউপি)। সিডব্লিউপি প্রতিনিধিরা শুক্রবার জাতীয় মহিলা সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে যান। সেখানে রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জাতীয় সংসদের নেয়া মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও নিরাপদ প্রসব নিশ্চিতকরণ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক নারী উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে সংসদ ভবনে বৈঠক করেন।
আজ পৌঁছবেন সকল প্রতিনিধি ॥ আজকের মধ্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিনিধি ঢাকায় পৌঁছবেন বলে সিপিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা জানান, সিপিএভুক্ত ৫২টি সদস্য দেশের মধ্যে ৪৪টি কেন্দ্রীয় এবং ১৮০টি প্রাদেশিক সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারসহ প্রায় ৬০০ জন সংসদ সদস্য সম্মেলনে অংশ নিবেন। আগামীকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনকে সামনে রেখে শুক্রবার সকাল থেকে সিপিএ নির্বাহী কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। আজ শনিবারও এই বৈঠক চলবে। নির্বাহী কমিটির বৈঠকে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা সম্মেলনের মূল অধিবেশনে উপস্থাপন ও অনুমোদন করা হবে।