ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নিরলস প্রচেষ্টা

অন্ধকার গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুত, পাকা রাস্তাঘাট

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৪ নভেম্বর ২০১৭

অন্ধকার গ্রামের ঘরে ঘরে বিদ্যুত, পাকা রাস্তাঘাট

‍ফিরোজ মান্না/মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে ফিরে ॥ আম উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। কিন্তু উন্নয়নের দিক থেকে একেবারেই পিছিয়ে পড়া জনপদ। সন্ধ্যা নামলেই বিদ্যুতের আলো জ্বলত না। কুপির আলোই ছিল তাদের ভরসা। যোগাযোগের ছিল না কোন পাকা রাস্তা। একমাত্র রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশর থেকে ঈশ্বরদী প্রধান সড়কই ছিল। গ্রামগুলোতে যাতায়াতের জন্য ইটের রাস্তাও ছিল না। কিন্তু এ চিত্র বদলাতে বেশিদিন সময় লাগেনি। কয়েক বছরের ব্যবধানে এ দুটি উপজেলায় বিদ্যুতের আলো আর গ্রাম থেকে গ্রামে পৌঁছে গেছে পিচঢালা সড়ক। বেড়েছে জীবনমানের উন্নয়ন। এর পেছনে যার হাত কাজ করেছে তিনি হলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। গ্রামের মানুষের জীবন বদল করতে চাইলেই যে পারা যায় তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। সাত-আট বছরের ব্যবধানে উপজেলা দুটির এমন উন্নয়ন মানুষ ভাবতে পারেননি। আজ সে ভাবনাহীন মানুষগুলো তার বাস্তব রূপ দেখছেন। গত বৃহস্পতিবার শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে তার নির্বাচনী এলাকা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে বসে। তিনি বলেন, গোটা রাজশাহীর মধ্যে আমার এ দুটি উপজেলা সবচেয়ে অবহেলিত ছিল। এখানে তেমন কোন রাস্তাঘাট ছিল না। বিদ্যুতের আলোর কথা মানুষ ভাবতেই পারেনি। এখন এ দুটি উপজেলায় পৌঁছে গেছে বিদ্যুত-পাকা সড়ক। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি আমার ছিল গভীর টান। আমি তাদের চাওয়া-পাওয়া পূরণে চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে একটা কথা ঠিক, আর তা হলো কোন চেষ্টাই বৃথা যায় না। তা বাঘা ও চারঘাট দেখলেই বোঝা যাবে। চেষ্টা করেছি মন দিয়ে, তাই কাজও হয়েছে। এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত আট বছরে এ দুই উপজেলায় সব রাস্তাই প্রায় পাকা হয়েছে। এখন আর কাঁচা রাস্তা নেই এ দুই উপজেলায়। শুধু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ-মন্দির, গির্জা-প্যাগোডা, পার্ক-বিনোদন কেন্দ্র, হাসপাতাল-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। যেখানে আগে কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে এখন পাকা সড়ক। ভাঙ্গাচোরা মাটির রাস্তার বদলে কার্পেটিং রাস্তা। ঘরে ঘরে বিদ্যুত। চরমপন্থী সংগঠনগুলোর অস্তিত্বও প্রায় বিলীন হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গেও নেই দাঙ্গা-ফ্যাসাদ, হানাহানি। অনেকটা শান্তিময় পরিবেশে বসবাস করছে এ দুটি উপজেলার মানুষ। পরিবর্তনের পেছনের মানুষটি হচ্ছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাঘা-চারঘাট আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি ছিল। ২০০৮ সালে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহরিয়ার আলম। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনিই জয়ী হন। এরপর সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আগের মেয়াদে এমপি থাকাবস্থায় এলাকার উন্নয়ন কাজে হাত দেন তিনি। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর উন্নয়নের মাত্রায় আরও গতি বাড়ে। শুধু তার প্রচেষ্টায় নানামুখী উন্নয়ন শুরু হয় দুটি উপজেলায়। প্রতিটি গ্রামের মানুষের জীবন বদল হয়েছে উন্নয়নের কারণে। চরমপন্থী গ্রুপগুলো এখন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারছে না। তারা কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। যারা রয়েছে, তাদের অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি এলাকায় শান্তিময় পরিবেশে বিশ্বাসী। আমার এলাকায় এখন কোন মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি নেই। কারণ আমি মানুষকে ভালবেসে মানুষের আবেগ বুঝেছি তারা কী চায়। তাদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়েই এলাকার উন্নয়ন করা হয়েছে। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, ব্রিজ-কালভার্ট স্থাপন, স্যানিটেশন, স্কুল নির্মাণ ও সংস্কার এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। আমার মনে হয় এসব উন্নয়নে এলাকার মানুষ খুশি। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাঘা-চারঘাটের তিনটি পৌরসভা, পল্লী বিদ্যুত অফিস এবং ১৪ ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিস ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী দফতরের মাধ্যমে গত আট বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাঘা উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদফতরের মাধ্যমে উন্নয়ন হয়েছে ৬০ কোটি ৫০ লাখ টাকার। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রামীণ সড়ক ও হাট-বাজার, আইআরআইডিপি প্রকল্প, বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগ সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ও জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ যোগাযোগ ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টাকা। এর আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাবদ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে ৭৩ লাখ টাকা এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন খাত থেকে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ বাবদ ব্যয় হয় এক কোটি ২০ লাখ টাকা। সমপরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে চারঘাট উপজেলার গ্রামগুলোতেও। এ ছাড়াও ভূমিহীন ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে এ দুটি উপজেলার চরাঞ্চলেও। গ্রামে গ্রামে কাঁচা রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন জনদুর্ভোগে থাকার পর সবগুলো রাস্তা পিচঢালা পথে রূপান্তরে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে দুই উপজেলার মানুষ। এ দুটি উপজেলায় বাস্তবায়ন হতে চলেছে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছে, সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গত দুই বছরে প্রায় দেড় হাজার সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং টিআর-কাবিখা কর্মসূচীর মাধ্যমে অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। অন্যদিকে কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগসহ উপজেলার অন্যান্য দফতরের মাধ্যমেও ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। স্থাপন করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, জাদুঘর ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৬০৩ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুত সংযোগ চালু করা সম্ভব হয়েছে। বাঘার নবগঠিত চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আযম জানান, এ বছর বন্যায় বাঘার চরাঞ্চলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো না, যদি না পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বন্যার সময় চরাঞ্চলবাসীদের মাঝে নিজে উপস্থিত হতেন। শাহরিয়ার আলম নিজে সামলেছেন সবকিছু। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুর রহমান জানান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষাক্ষেত্রে এ দুটি উপজেলায় এসেছে বড় পরিবর্তন। সরকারের প্রতিশ্রুতি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণে উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দিয়েছেন একটি করে কম্পিউটারসহ সাতটি আইসিটি ল্যাব। ঘোষণা দিয়েছেন, কোন পিতা যদি তার সন্তানকে পড়ালেখা করাতে ব্যর্থ হন, তবে ওই শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নেবেন শাহরিয়ার আলম নিজে। চলতি বছর নয়টি বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, উপজেলা পর্যায়ে সরকারীভাবে নানামুখী সেবা প্রদানের ক্ষেত্র কৃষি বিভাগ। এ খাতে সরকারের পর্যাপ্ত ভর্তুকি থাকে, যা প্রাপ্তিতে কোন ঘাটতি পড়েনি। তার দেয়া তথ্যমতে, কৃষিতে জড়িত দুই উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষ। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আম, খেজুরের গুড়, ধান, পাট, আখ এবং আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। পদ্মার চরাঞ্চলে নানা ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কৃষিপণ্য উৎপাদনে বর্তমান সরকার আমলে প্রায় তিন হাজার কৃষককে সার, বীজ, নগদ অর্থ ও কৃষি প্রণোদনাসহ নানা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা উপকেন্দ্র করেছেন শাহরিয়ার আলম। এসব ক্লিনিক এবং উপকেন্দ্রে নিরলসভাবে সেবা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। শাহরিয়ার আলম বলেন, তৃণমূলের মানুষের চাহিদা বিবেচনা করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক সহযোগিতায় শুধু বাঘা-চারঘাট নয়, বৃহত্তর রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে। আগামীতেও উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
×