ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা নয়, সহায়ক সরকারও হবে না

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা নয়, সহায়ক সরকারও হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা এবং তাদের সহায়ক সরকারের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে হবে। কোন সহায়ক সরকার হবে না, কোন ভাবনার সরকার হবে না। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা করা হবে না, সমঝোতার প্রশ্নই উঠে না। আর বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়। বিএনপি বুঝতে পেরেছে তাদের মিথ্যাচার, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য জনগণ আগামী নির্বাচনেও তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। তাই তারা নানা ষড়যন্ত্র করছে। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে রাখতে গিয়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে ফের ষড়যন্ত্র করা হলে, আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, জ্বালাও পোড়াও করলে কোনরকম ছাড় দেয়া হবে না। এসব যারা ফের করবে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার করা হবে। স্মরণ সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও অসুস্থতার জন্য তিনি অংশ নেননি। তার পরিবর্তে সভায় সভাপতিত্ব করেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও আমিনুল ইসলাম আমিন। সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। অন্য কোন পন্থায় নির্বাচন হবে না। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছিল, খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। এখন তিনি কোন মুখে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেন? কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। আদালতের মাধ্যমে হেনস্থা করা হচ্ছে খালেদা জিয়া ও বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আপনিতো (খালেদা জিয়া) কোর্টকে হেনস্থা করছেন। ১৪৩ বার সময় নিয়েছেন। আপনার ভাষায় বলতে চাই আপনিই আদালতকে হেনস্থা করছেন। আদালত আপনাকে হেনস্থা করছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সাংবাদিক ভাইদের বলছি লিখে রাখুন। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। ২০১৯ সালে বিজয়ের মাসে এ নির্বাচন হবে। বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে চ্যাম্পিয়ন। আমরা মার খেয়ে মাঠে থেকেছি। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগ নয়। বিএনপিকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, যদি সাহস থাকে আগামী নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনের মাঠ থেকে পালাবেন না। দেখব জনগণ কাকে চায়। মিথ্যাচার, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে। খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতারা সিরিয়াল মিথ্যাবাদী হিসেবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের মিথ্যার জবাব আগামী নির্বাচনে বাংলার জনগণ দেবে। বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোন সহায়ক সরকার হবে না, কোন ভাবনার সরকার হবে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। আপনারা (বিএনপি) আসলে আসবেন, না আসলে রাস্তায় গিয়ে চিৎকার করুন। আপনাদের সঙ্গে কোন কথা হবে না। এরা একাত্তরের ও পঁচাত্তরের খুনী। খুনীদের সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। আর বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়। বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, সন্ত্রাসী কর্মকা-, জ্বালাও পোড়াও করলে ছাড় দেয়া হবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার হবে। স্বাধীনতা বিরোধী, বিএনপিকে অপশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বরের হত্যাকা-ের নেপথ্যে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেননি জানিয়ে তিনি বলেন, ওনার (প্রধানমন্ত্রী) অস্ত্রোপচারের পর ওনার যতটুকু বিশ্রামে থাকার কথা ছিল উনি তা ছিলেন না। তিনি চাপ নিয়ে কাজ করেছেন। উনি এ রকম জাতীয় দিবসের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেননি এমনটা ঘটেনি। উনি অসুস্থতার কারণে আসতে পারেনি। আগামী ৫ নবেম্বর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছি।
×