ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাছের সরবরাহ বেড়েছে

মোটা চালের দাম কমছে, খুচরায় পেঁয়াজের মূল্য কমার প্রভাব নেই

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ৪ নভেম্বর ২০১৭

মোটা চালের দাম কমছে, খুচরায় পেঁয়াজের মূল্য কমার প্রভাব নেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি সপ্তায় কেজিতে ২ টাকা কমে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকায়। দাম আরও কমার আভাস দিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজার ও হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম কমলেও তার প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। চড়া দামে জাত ও মানভেদে ভোক্তাকে ৬৫-৮৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। কেজিতে ২০ টাকা কমে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়েছে। কিছু সবজি এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। নদী, পুকুর ও খালবিলে পানি কমতে থাকায় বাজারে দেশী মাছের সরবরাহ বেড়েছে। পর্যাপ্ত ইলিশ উঠছে বাজারে। মাছের দাম কমতির দিকে। এছাড়া ডাল, ভোজ্যতেল, আটা, চিনি, ডিম এবং মসলার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাপ্তানবাজার, কাওরানবাজার, হাতিরপুল বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার এবং মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় চালের দাম কমে আসছে। দাম কমার এই ধারা অব্যাহত থাকলে শীঘ্রই চল্লিশ টাকায় মিলবে মোটা চাল। তবে পাইকারি বাজারে নতুন কারসাজি হচ্ছে ওজন নিয়ে প্রতারণা করা। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় চাল ৩ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। এতে খুচরা বাজারে চালের দাম সেভাবে কমছে না। তবে ওজন ঠিক রাখা গেলে দ্রুত চালের দাম আরও ১-২ টাকা কমবে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার চাল ব্যবসায়ী নূরু মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, বাদামতলী ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে চালের পাইকারি বাজারে ওজন কম দেয়া হচ্ছে। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় চাল পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ কেজির মতো। অভিযোগ দেয়া হলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এ কারণে পাইকারিতে চালের দাম যেভাবে কমছে খুচরায় সেভাবে কমতে পারছে না। তিনি বলেন, ওজনের বিষয়টি দ্রুত ঠিক হলে খুচরায় চালের দাম আরও কমবে। ইতোমধ্যে মোটা চাল কেজিতে আরও ২ টাকা কমেছে। তিনি বলেন, স্বর্ণা ও চায়না ইরির মতো মোটা চাল এখন ৪৪-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা ইতোপূর্বে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির তথ্যমতে, খুচরা বাজারে মোটা চাল জাত ও মানভেদে ৪৪-৪৬, পাইজাম ও লতা সাধারণ মানের ৪৮-৫২, পাইজাম ও লতা উত্তমমানের ৫২-৫৫, চাল মাঝারি ৪৮-৫৫, নাজির ও মিনিকেট উত্তমমানের ৬০-৬৫ এবং মাঝারি মানের নাজির ও মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। পেঁয়াজের আমদানি ও পাইকারি মূল্য কমলেও খুচরায় প্রভাব নেই পেঁয়াজের আমদানি মূল্য এবং পাইকারি মূল্য কমলেও তার কোন প্রভাব খুচরা বাজারে পড়ছে না। এখনও জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৮৫ টাকায়। প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ এবং আমদানিকৃত ভারতীয় মোটা জাতের পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূত্র বলছে, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বেড়েছে। গত দুদিনের ব্যবধানে হিলি স্থলবন্দরে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম ৭-৮ টাকা কমেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া শ্যামবাজার কৃষিপণ্যের বাজারেও পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য কমেছে। কিন্তু দাম কমার কোন প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। এ কারণে শুক্রবার বাজার করতে এসে বিরক্ত হয়েছেন নগরবাসী। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা মোর্শেদুল ইসলাম বাজার করছিলেন হাতিরপুল বাজারে। পেঁয়াজের দাম শুনে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ওই সময় তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, শুনেছি পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এখনও বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৮৫ টাকায়। এই দাম অনেক বেশি বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। জানা গেছে, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ কমে যায়। বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন জাতের পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় সরবরাহ বেড়েছে, এখন গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ ট্রাক করে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ছে রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম এখনও চড়া। কাঁচামরিচের দাম কমায় কাঁচাবাজারে ভোক্তার অস্বস্তি দূর হয়েছে। সাইজভেদে প্রতিজোড়া ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০-১০০ টাকায়। এছাড়া টম্যাটো ১২০ টাকা কেজি ও ৪০ টাকায় মিলছে শসা। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অন্যান্য সবজি ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১৩০-১৩৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ টাকা, পাকিস্তানী লাল মুরগি মাঝারি সাইজের জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকায়। এছাড়া বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাঝারি সাইজের ইলিশের জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০ টাকায়। এছাড়া দেশীয় জাতীয় সব ধরনের মাছের দাম কমতির দিকে রয়েছে। মুদিপণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
×