ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

র‌্যাম্পের ছন্দে উদ্ভাসিতখাদির গৌরবগাথা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৪ নভেম্বর ২০১৭

র‌্যাম্পের ছন্দে উদ্ভাসিতখাদির গৌরবগাথা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খাদি কাপড়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার আদি ইতিহাস। তাই তো ফ্যাশনপ্রিয় তরুণ-তরুণীর কাছে এ ভারি বুননের কাপড়টিরও রয়েছে বিশেষ কদর। আধুনিকতাকে ধারণ করে কাপড়টি হয়ে ওঠে দারুণ ফ্যাশনেবল। খাদি কাপড়ের সেই ফ্যাশনেবল পোশাকগুলোই উঠে এলো র‌্যাম্পের ছন্দে ছন্দে মডেলদের ক্যাটওয়াকে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো ট্রেসেমে নিবেদিত এবং ফ্যাশন ডিজাইনার কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (এফডিসিবি) আয়োজিত দেশের অন্যতম ফ্যাশন ইভেন্ট ‘এফডিসিবি প্রেজেন্টস ট্রেসেমে খাদি দ্য ফিউচার ফ্যাব্রিক শো ২০১৭’। সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) রাজদর্শন হলে এ ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। দুদিনের এ আয়োজন এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজনের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় খাদি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র। তারপর আয়োজনের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন ফ্যাশন ডিজাইনার কাউন্সিল অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহিন খান। বক্তব্য শেষে পরিবেশিত হয় দ্য স্টোরি অব খাদি শীর্ষক নাতিদীর্ঘ নৃত্যনাট্য। তারপরই শুরু হয় বিভিন্ন ডিজাইনারের করা খাদি পোশাকে র‌্যাম্পে হাঁটা। আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বহির্বিশ্ব এবং ডিজিটাল ফ্যাশনের সঙ্গে খাদির পরিচয় ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যাশন শোটি। এতে অংশ নিয়েছেন ১৯ জন বাংলাদেশী ও সাতজন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনার। ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়া দেশের ডিজাইনাররা হলেন মাহিন খান, কুহু, এমদাদ হক, চন্দনা দেওয়ান, শৈবাল সাহা, বিপ্লব সাহা, লিপি খন্দকার, মারিয়া ইসলাম, ফারাহ আনজুম বারী, শাহরুখ আমিন, নওশিন খায়েব, তেনজিং চাকমা, আফসানা ফেরদৌসী, রাকা, ফাইজা আহম্মেদ, রিমা, সরা করিম, ফারা দিবা এবং রুপু শামস্। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনারদের মধ্যে অংশ নিয়েছেন নেপালের রসনা শ্রেষ্ঠ, মালয়েশিয়ার জ্যাকলিন ফং, শ্রীলঙ্কার নীলান হারাসগামা, ভুটানের চিমমি চদেন, থাইল্যান্ডের সুকীজিত দাংচাই, ভারতের হিমাংশু শনি ও সৌমিত্র ম-ল। ডিজাইনাররা খাদি কাপড়ে মডার্ন ট্রেন্ডস এবং ফ্যাশনস্টেটমেন্ট যোগ করে অসাধারণ সব কাজ তুলে ধরেছেন এ আয়োজনে। তাদের ডিজাইন করা পোশাকেই ইভেন্টের গ্র্যান্ড ফ্যাশন শোতে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন মডেলরা। ‘এফডিসিবি প্রেজেন্টস ট্রেসেমে খাদি- দ্য ফিউচার ফ্যাব্রিক শো ২০১৭’-এর টাইটেল স্পন্সর হিসেবে রয়েছে ট্রেসেমে। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ছাড়াও এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে বেঙ্গল গ্রুপ, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইপিএবি) ও সেনোরা। ফিলিপিনো ভাষার কবিতা পাঠের আসর ‘বাসাবালাক’ ॥ কবিতার ছন্দে হারিয়ে যায় ভাষার দুর্বোধ্যতা। শ্রুতিময় শব্দের নির্যাসে অজানা ভাষার কবিতাও হৃদয়গাহী হয়ে ওঠে শ্রোতার কাছে। তেমনটাই ঘটল শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেলে। ফিলিপিন্সের নাগরিকদের পাশাপাশি ফিলিপিনো ভাষার কবিতা শুনে মুগ্ধ হলেন রাজধানীর কবিতাপ্রেমীরা। ফিলিপিন্স দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হলো কবিতা পাঠের আসর ‘বাসাবালাক’। প্রি-হিস্পানিক ফোক পিরিয়ড, স্প্যানিশ পিরিয়ড, আমেরিকান পিরিয়ড ও কনটেম্পরারিÑফিলিপিন্সের কবিতার ইতিহাসÑ এ চার অধ্যায়ের গল্পে সাজানো ছিল আয়োজনটি। শত ভাষার দেশ ফিলিপিন্সের নানা জাতির নানা ভাষার গল্প উঠে আসে কবিতার আশ্রয়ে। জীবন কথনের সঙ্গে কবিতাগুলোয় উঠে আসে ফিলিপিন্সের সাহিত্যচর্চার ক্রমবিকাশের কথা। কবিতা পাঠের এ আসরে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রদূত ভিসেন্তে ভিভেনসিও টি বান্দিলো। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশ ও ফিলিপিন্সের মধ্যে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিরাজমান। ফিলিপিন্সের শতাধিক ভাষা যেমন দেশটির সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনয়ন করেছে, তেমনি বাংলাদেশের হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ। ফিলিপিন্সের সংস্কৃতি যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আগামীতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে ফিলিপিনো কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। ভিসেন্তে ভিভেনসিও টি বান্দিলো বলেন, কখনও ইংরেজী, কখনও আইরিশ, কখনও আবার স্প্যানিশ ভাষার প্রভাবে ফিলিপিন্সের কবিতায় এসেছে নানা বাঁকবদল। বিশ্ব সাহিত্যের ধারায় প্রভাবান্বিত হলেও ফিলিপিন্সের কবিতাগুলো কিন্তু কখনও তাদের মূল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়নি। ফিলিপিন্সের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আমাদের কবিরা এখন বিশ্বব্যাপী সহিংসতার বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন। কবিতায় পঙ্ক্তিতে তারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন অমানবিক, ঘৃণিত সব কর্মকা-ের। ‘বাসাবালক’ অনুষ্ঠান আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ফিলিপিন্সের কবিতা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা ও বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে দেয়া। একই সঙ্গে ফিলিপিন্সের বৈচিত্র্যপূর্ণ সাহিত্য, সংস্কৃতির উন্নয়ন ও প্রসার এবং বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় অনুবাদের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের কবিদের সৃজনশীলতা সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত করা। অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষের সাংস্কৃতিক উৎসব আজ ॥ এ বছর শতবর্ষে পদার্পণ করছে রাশিয়ার ঐতিহাসিক অক্টোবর বিপ্লব। শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার আদায়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ বিপ্লব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক উৎসব। আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ৩৩টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন সাাংস্কৃতিক পর্ষদ আয়োজিত তিন দিনের এ উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সড়কদ্বীপে অনুষ্ঠিতব্য উৎসবে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে উৎসবের অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে। এতে থাকবে শোভাযাত্রা, আলোচনা, সঙ্গীত, নাটক, আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। আজ বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। এতে সভাপতিত্ব করবেন সাংস্কৃতিক পর্ষদের আহ্বায়ক হায়দার আনোয়ার খান জুনো। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির টিচার্স লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন সাংস্কৃতিক পর্ষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের আহ্বায়ক হায়দার আনোয়ার খান জুনো। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক এবং অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন সাংস্কৃতিক পর্ষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক জামসেদ আনোয়ার তপন। বাদী-বান্দার রূপকথা নৃত্যনাট্যের মঞ্চায়ন ॥ কাঠুরিয়া আলীবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্প। সে গল্পে ছিল এক কাফ্রি বান্দা ক্রীতদাস আব্দুল্লাহ আর এক অপরূপ সুন্দরী বাদী মর্জিনা। এ গল্পের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে মর্জিনাকে ঘিরে। সেই সঙ্গে গল্পে আছে আবদুল্লাহর দীর্ঘশ্বাস। তাই আলীবাবা ও চল্লিশ চোরের গল্প নতুন বিন্যাস ও আলোকপাতের সঙ্গে নব ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত হয়েছে বাদী-বান্দার রূপকথা শীর্ষক নৃত্যনাট্যে। সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার প্রযোজিত পরিবেশনায় ছিল সঙ্গীত নৃত্যাঞ্চল। বাদী-বান্দার রূপকথার নৃত্য ভাবনা ও পরিচালনা করেছেন সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। চিত্রনাট্য লিখেছেন শঙ্কর তালুকদার। প্রধান নৃত্যশিল্পী হিসেবে ছিলেন শিবলী মোহাম্মদ, শামীম আরা নীপা, আনিসুল ইসলাম হিরু, সুকল্যাণ ভট্টাচার্য, ডলি ইকবাল, সাবরিন নিসা, আবুল হাসান তপন, মোহ-তামিমুল হক তামিম, গোলাম রব্বানি ইমরান ও রানা ওয়াদুদ। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন অন্বেষা, শ্রীকান্ত আচার্য, নচিকেতা, লোপা মুদ্রা মিত্র, অরিজিত চক্রবর্তী, জয়তী চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য ও রাঘব চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘সৃষ্টি-মীনা বাজার নৃত্যনাট্য উৎসব’-এর তৃতীয় দিনে মঞ্চস্থ হয় এ নৃত্যনাট্যটি। শিল্পকলা একাডেমিতে এ উৎসবের আয়োজন করেছে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার। আজ শনিবার সমাপনী দিনে শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে লোকনাট্য দল পরিবেশন করবে ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে পদাবলী যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স ॥ শুক্রবার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ফিল্ম এ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত কর্মশালায় সহযোগিতা করেছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিস অব বাংলাদেশ। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের মার্কেটিং বিভাগের কনফারেন্স রুমে সকালে এ কোর্সের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় কোর্সের প্রথম অধিবেশন। এতে ‘চলচ্চিত্র দেখা এবং বিশ্বচলচ্চিত্রের পথ’ বিষয়ক অধিবেশন পরিচালনা করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। এ সময় তিনি চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রে নন্দনতত্ত্ব, চলচ্চিত্রে বিভিন্ন শিল্পকলার ব্যবহার বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা করেন।
×