ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহারথেকে বের হতে পারছে না পিডিবি

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ৪ নভেম্বর ২০১৭

পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহারথেকে বের হতে পারছে না পিডিবি

রশিদ মামুন ॥ পুরনো প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আল্ট্রাসুপারক্রিটিক্যাল, সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির যুগে বড়পুকুরিয়ায় একটি সাবক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে পিডিবি। বিদ্যুত কেন্দ্রটি শীঘ্রই উৎপাদন শুরু করবে। কেবলমাত্র পুরনো প্রযুক্তির কারণে দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রে জ্বালানি খরচ বেশি হয়। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, বাংলাদেশে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করা হয় তা দিয়ে আট হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো যায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একই জ্বালানিতে দ্বিগুণ বিদ্যুত উৎপাদনের কয়েকটি প্রকল্প হাতেও নিয়েছে সরকার। জ্বালানি খরচ কমে এলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও কমে আসে। বিদ্যুত উৎপাদনের ৬০ ভাগই জ্বালানি খরচ। একই অবস্থা দেশের কয়লাচালিত একমাত্র কেন্দ্রটির ক্ষেত্রেও। প্রযুক্তি পুরনো হওয়ায় বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রের জ্বালানি খরচ বেশি। এখন আবার যে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হলো তার জ্বালানি খরচও বেশি। সাবক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন দক্ষতা ৩৬ ভাগ। আর এখন উন্নত প্রযুক্তির উৎপাদন দক্ষতা ৪৫ থেকে ৪৮ ভাগ। অর্থাৎ বড়পুকুরিয়ায় নির্মাণ করা বিদ্যুত কেন্দ্রে জ্বালানির অপচয় হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা দিয়ে এক ইউনিট বিদ্যুত উৎপাদনে সাবক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে ৪৭৫ গ্রাম কয়লার প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে সুপারক্রিটিক্যালে ৩৫০ গ্রাম এবং আল্ট্রাসুপারক্রিটিক্যালে দরকার হবে ২৯০ গ্রাম। সাবক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, এখানকার খনিতে যে কয়লা পাওয়া যাবে তা দিয়ে ৩০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা যায়। আমাদের কেন্দ্রটি ২৭৫ মেগাওয়াটের। এত ছোট আকারের সুপার বা আল্ট্রাসুপারক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্র হয় না। এ ধরনের এ্যাডভান্স প্রযুক্তির বিদ্যুত কেন্দ্রের কমপক্ষে ক্ষমতা হতে হয় ৬০০ মেগাওয়াট। তবে তিনি জানান, সুপারক্রিপিক্যাল বা আল্ট্রাসুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে ছোট আকারের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাইলে ব্যয় তুলনামূলক অনেক বেশি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে আমদানিকৃত কয়লা দিয়ে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব বড় আকারের বিদ্যুত কেন্দ্রের সবগুলোই উন্নত প্রযুক্তির। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পুরো কয়লা আমদানি করেই বিদ্যুত উৎপাদন করবে। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া খনিতে উন্নতমানের কয়লা রয়েছে। দিনাজপুর পর্যন্ত রেললাইনও রয়েছে। চাইলেই এ কেন্দ্রটিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হতো। সেক্ষেত্রে কিছু জ্বালানি আমদানি করলেই সঙ্কট সামাল দেয়া যেত। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, তাদের কয়লার উৎপাদন বাড়লে চাইলে আরও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব। যাতে তারা কয়লা সরবরাহ করতে পারবে। বিদ্যুত বিভাগের পরিকল্পনায় দেখা যায়, যখন কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শেষ হচ্ছে ঠিক তখনই উত্তরাঞ্চলে আরও বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সৈয়দপুর পিডিবির ২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের পাশেই আরেকটি তেলচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ উত্তরের চাহিদা মেটাতে আরও বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে। দেশের কৃষিসমৃদ্ধ উত্তরাঞ্চলে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব কমিয়ে আনার বিষয়গুলো উন্নত প্রযুক্তিতে সমন্বয় করা হয়েছে, অপেক্ষাকৃত পুরনো প্রযুক্তিতে যা নেই। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সাবক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লার ব্যবহার বেশি হওয়ায় দূষণ এমনিতেই বেশি হয়। বড়পুকুরিয়ায় এখন একটি ২৫০ মেগাওয়াটের সাবক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রটির একটি ইউনিট প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপকদের অদক্ষতার কারণে শুরু থেকেই নানা বিপর্যয় লেগে আছে। পরিবেশ দূষণ রোধে যেসব ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল তার অনেকটাই অনুপস্থিত। স্থানীয়রা তাদের ক্ষতির কথা কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন প্রতিকার হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রটি বিদ্যুত উৎপাদনের পর ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ ছাই তৈরি করে। কেন্দ্রটি পূর্ণ ক্ষমতায় চললে ২৪০ টন ছাই উৎপাদনের কথা। এসব ছাই বা ফ্লাইএ্যাশ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কেন্দ্রটি থেকে পিডিবি এ ছাই বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্রের কর্মীরা ছাইয়ের দূষণের কারণে এ্যাশ ভাতা দাবি করছে।
×