ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচারের অভাবের দোহাই

শুধু সাইনবোর্ড ঝুলছে! গাড়িমুক্ত হলো নামানিক মিয়া এভিনিউ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ৪ নভেম্বর ২০১৭

শুধু সাইনবোর্ড ঝুলছে! গাড়িমুক্ত হলো নামানিক মিয়া এভিনিউ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিষেধ, ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ ডিএমপি’। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ সড়কের খামারবাড়ি মোড়ে এ রকম সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছিল সকাল থেকেই। কিন্তু রাস্তা দিয়ে প্রাইভেটকারসহ সব ধরনের যান চলাচল করতে দেখা গেছে দিব্যি। পুলিশের পক্ষ থেকে বাঁধা দেয়াও হচ্ছিল না। তাহলে সাইনবোর্ড ঝুলানোর সার্থকতা আসলে কোথায়? সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত থাকার কথা। অথচ সেখানে দিব্যি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে। সকাল থেকে রাত অবধি এ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে সড়কের দু’পাশে শুধু সাইনবোর্ডটাই শোভা পাচ্ছিল। ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসে মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রতিমাসের প্রথম শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত থাকবে। সে অনুসারে ৬ অক্টোবর প্রথম দফায় মানিকমিয়া এভিনিউ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত থাকেনি। বলা হয়েছিল, মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার কারণে ওই দিন গাড়িমুক্ত থাকেনি মানিকমিয়া এভিনিউ। অথচ গাড়িমুক্ত রাখার সব প্রস্তুতিই ছিল ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে। শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় মানিকমিয়া এভিনিউয়ের দুই প্রান্তে ‘ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নিষেধ’ নির্দেশ সংবলিত সাইনবোর্ড টানানো থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি অবাধে চলাচল করেছে। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশও তা আটকানোর চেষ্টা করেননি। গাড়িমুক্ত ঘোষণা সত্ত্বেও গাড়ি চলা বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আকারে প্রচার চালানো হয়নি। যে কারণে অনেকেই জানেন না, যে মাসের প্রথম শুক্রবার এ সড়কটিতে ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এ জন্য আমরা সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছি। আস্তেধীরে বিষয়টি সম্পর্কে সবাই অবগত হলে তখন আমরা গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করব। যানজট ও দূষণমুক্ত নগর গড়ার প্রত্যয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর মানিকমিয়া এভিনিউয়ে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষসহ (ডিটিসিএ) আট সরকারী সংস্থা। এ আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশসহ ৩৬টি বেসরকারী সংস্থা। দিবসটির ‘তাৎপর্য’ অনুধাবনের তাগিদ দিয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মাসের প্রথম শুক্রবার মানিকমিয়া এভিনিউ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস নিয়ে আমরা কাগজে লিখলাম, সুন্দর সুন্দর বক্তব্য দিলাম...বাস্তবতা যদি না থাকে, তাহলে এসব কথা বলে লাভ নেই। শুধু মুখে নয়, গাড়িমুক্ত দিবসের যথার্থতা আমরা যেন উপলব্ধি করি। গত শতকের সত্তরের দশকে জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলায় নানা উদ্যোগের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস প্রচলন ছিল অন্যতম। পরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও যানজট হ্রাসে জনসচেতনতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই দিবস পালনের বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় চার হাজার শহরে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা ও ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় এটি পালন করা হয় সপ্তাহজুড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনবহুল শহরগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ি বাদ দিয়ে জোর দেয়া হচ্ছে গণপরিবহনের ওপর। এতে যানজট যেমন হ্রাস পাবে তেমনি গাড়ি চলাচলের সংখ্যা কমে আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধা ভোগ করে মাত্র ৬ ভাগ মানুষ। অথচ ৭৬ ভাগ সড়কই ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষা বলছে, রাজধানী ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। আর যানজটের কারণে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীতে ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। আর এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন পর মানুষ হেঁটেই গাড়ির আগে গন্তব্যে পৌঁছবে। ফলে কর্মঘণ্টা নষ্টের পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়বে। তারা বলছে, এভাবে যানবাহনের পরিমাণ যদি বাড়তে থাকে তাহলে ২০২৫ সালে রাজধানীতে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কম। অপরদিকে মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার।
×