ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিহত জামিল শেখের স্ত্রী, তার প্রেমিক শাহীন ও স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত

বাড্ডায় বাবা-মেয়ে খুনের নেপথ্যে পরকীয়া

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বাড্ডায় বাবা-মেয়ে খুনের নেপথ্যে পরকীয়া

গাফফার খান চৌধুরী ॥ পরকীয়ার কারণে বাড্ডায় বাবা মেয়ের জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। হত্যাকারী আর্জিনা নিহত জামিল শেখের স্ত্রী। আর নুসরাতের মা। তাকে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। আর শুক্রবার স্ত্রীসহ খুলনা থেকে গ্রেফতার হয় আর্জিনার প্রেমিক শাহীন মল্লিক। তাদের বাড্ডা থানায় আনা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আর্জিনা, তার প্রেমিক শাহীন ও তার স্ত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই পরকীয়ার জেরে বাবা মেয়ে খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এখন শুধু হত্যার দায় স্বীকার করে আর্জিনাসহ অন্য আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়া বাকি। এছাড়া হত্যার পুরো রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের কাছে ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বর পাঠান ভিলা নামের চার তলা বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে জামিল শেখ (৩৮) ও তার মেয়ে বাড্ডা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারী বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী নুসরাতের (১০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্দেহভাজন হিসেবে আর্জিনাকে আটক করে পুলিশ। জামিলের ভাই শামীম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আর্জিনা পরকীয়া প্রেমের সূত্র ধরে স্বামী ও মেয়ে হত্যার ঘটনাটি ঘটে বলে জানায়। আর আর্জিনাদের বাড়ির সাবলেট ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিক হচ্ছে পরকীয়া প্রেমিক। ঘটনার পর থেকেই স্ত্রী নিয়ে নিখোঁজ ছিল শাহীন। শুক্রবার খুলনা থেকে শাহীন মল্লিককে স্ত্রীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবির জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আর্জিনার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার বটিয়াঘাটা থানা এলাকা থেকে শাহীন ও তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ঢাকা আনা হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আর্জিনার ভাষ্য মোতাবেক শাহীনের সঙ্গে তাদের আগ থেকে পরিচয় ছিল। আর্জিনা এবং শাহীন একই বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। আর্জিনারা দ্বিতীয় তলায় আর শাহীন দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী নিয়ে ভাড়ায় থাকতেন। সেই থেকে তাদের তাদের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত আর্জিনার সঙ্গে শাহীনের পরকীয়ার ও অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার মাস আগে তারা বাসা পরিবর্তন করে। আর্জিনারা আলাদা বাসা নেন। আর শাহীনরাও আলাদা বাসা নেন। আর্জিনা কৌশলে একটু বড় বাসা ভাড়া করেন। বড় বাসার ভাড়া স্বাভাবিক কারণেই একটু বেশি। আর্জিনা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক তার স্বামীকে বাসায় একটি পরিবারকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেয়ার কথা জানায়। সাবলেট দিলে সংসার চালাতে আর্থিকভাবে সহজ হবে ভেবে স্ত্রীর কথায় রাজি হয়। এরপর আর্জিনা শাহীন ও তার স্ত্রীকে সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে ভাড়া দিতে আগ্রহ দেখায়। শাহীনরা পূর্বপরিচিত বিধায় তাতে রাজি হয় আর্জিনার স্বামী জামিল। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চার মাস আগে আর্জিনা কৌশলে শাহীন ও তার স্ত্রীকে সাবলেট ভাড়াটিয়া হিসেবে বাসায় নিয়ে আসে। শাহীনের সঙ্গে আর্জিনার অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি বাড়ির মালিক দুলাল পাঠান, তার স্ত্রী নাসিমা দুলাল, শাহীনের স্ত্রী মাসুমাসহ অনেকেই জানত। এক পর্যায়ে স্বামী ও মেয়েও বিষয়টি জেনে যায়। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তির একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার ভোরে জামিল ও তার মেয়েকে হত্যা করা হয়। জামিলের ভাই শামীমের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আর্জিনা ও শাহীন পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র ও শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করে জামিলকে হত্যা করে। আর নুসরাত জাহানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পুলিশ জানায়, জামিলের কপালে একটি ও মাথায় পাঁচটি জখমের চিহ্ন ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ওই জখম হয়েছে বলে মনে হয়েছে। লাশের পাশে একটি কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে। সেটি দিয়েও আঘাত করা হতে পারে। যদিও হত্যার পর বাড়ির মালিকের স্ত্রী নাসিমা দুলালের জেরার মুখে আর্জিনা দাবি করেছিল, মুখোশধারী ডাকাতরা হাত পা বেঁধে পিটিয়ে ও কুপিয়ে তার স্বামী ও মেয়েকে হত্যা করেছে। ডাকাতরা আর্জিনা ও তার ছেলে রেখে বাকি দুইজনকে মেরে ফেলার বিষয়টি সন্দেহ সৃষ্টি করলে ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত জামিলের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের করপাড়া ইউনিয়নের বনপাড়া গ্রামে। তার পিতার নাম বেলায়েত শেখ (মৃত)। আগে জামিল গুলশানে একজনের প্রাইভেটকার চালাতেন। সম্প্রতি তিনি তেজগাঁওয়ের বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। আর্জিনার বাড়ির ঢাকার সাভারে। একযুগ আগে জামিলের সঙ্গে আর্জিনার বিয়ে হয়েছিল। পরকীয়ার সূত্র ধরে প্রায় চার বছর ধরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না।
×