ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুতচালিত সেরা গাড়ির জন্য বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা পুরস্কৃত

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বিদ্যুতচালিত সেরা গাড়ির জন্য বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা পুরস্কৃত

আইটি ডটকম ডেস্ক \ নয়া প্রযুক্তির শেভ্রোলেট ‘বোল্ট’ উত্তর আমেরিকার (২০১৭) সেরা গাড়ি নির্বাচিত হয়েছে। জেনারেল মোটরসের বোল্ট পুরোপুরি বিদ্যুতচালিত (ইলেকট্রিক) গাড়ি। এ গাড়ি একবার চার্জ করলে ২৩৮ মাইল (৩৮৩ কিলোমিটার) যাবে। বর্তমানে ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে এত কম মূল্যে এত দূরত্বের রেকর্ড আগে কোন গাড়ি প্রস্তুতকারী ছুঁতে পারেনি। দামের দিক দিয়েও এ গাড়ি মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমার মধ্যে। ডেট্রয়েটে উত্তর আমেরিকা অটো শো থেকে বোল্টের ‘কার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা আসে। ইতোপূর্বে বোল্ট ‘মোটর ট্রেন্ড কার অব দ্য ইয়ার’ ও লস এ্যাঞ্জেলস অটো শোতে ‘গ্রিন কার অব দ্য ইয়ার’ টাইটেল পায়। পুরস্কারপ্রাপ্ত এ গাড়ির ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং ও লঞ্চে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন। তাদের আবদান উল্লেখ করার মতো। সেরা গবেষণাপত্রের পুরস্কারও জিতেছেন বাংলাদেশী প্রকৌশলীরা। মালিক হয়েছেন পেটেন্টের, যা গর্ব করার মতো। জেনারেল মোটরসের টেকনিক্যাল ফেলো ড. খাজা রাহমান ও ড. ফয়েজুল মোমেন যৌথভাবে কাজ করেছেন মোটর ডিজাইনে। ড. নাজমুল আনোয়ার ও ড. সৈয়দ জাফরি আল কাদরী যৌথভাবে করেছেন পাওয়ার ইলেকট্রনিক ও ইনভার্টার ডিজাইন। গাড়ি চার্জের টেস্ট ও ভেলিডেশনে ছিলেন করবী বাশার, মোহাম্মদ শহিদুল খান রুবেল। গাড়ির নির্মাণ ও বাজারজাতকরণের বিভিন্ন স্তরেও আছে বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের হাতের ছোঁয়া। নতুন ইলেকট্রিক গাড়ির প্রযুক্তি তাই আলোর দিশারী হিসেবে পেটেন্টের মালিক হয়েছেন খাজা রাহমান ও জাফরী আল কাদরীসহ বেশ কয়েকজন। এক কনফারেন্সে মোটর ডিজাইনের জন্য বেস্ট গবেষণাপত্রের পুরস্কার জিতেছেন ফয়েজুল মোমেন ও খাজা রাহমান। গবেষণাপত্রের বিষয়বস্তু ছিল উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেকট্রিক মোটর ও ইনভার্টারসহ বেশকিছু যন্ত্রাংশ, যা একবার চার্জে ২৪০ মাইলের বেশি চলতে পারে। বর্তমান বাজারে সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক গাড়ির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জার্মান কোম্পানির বিএমডব্লিউ আই-৩। এই গাড়ি ফুল চার্জ দিলে চলে ৮১ মাইল। দাম কর বাদে ৪৩ হাজার ৩০০ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩৫ লাখ টাকা)। বিএমডব্লিউ আই-৮ চলে ২৫ মাইল। দাম কর বাদে ১ লাখ ৩৭ হাজার ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা)। ইতালির ফিয়াট ৫০০ চলে ৮৪ মাইল। ৩২ হাজার ৬০০ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৬ লাখ টাকা)। ফোর্ড ফোকাস ইলেকট্রিক চলে ১৯ মাইল। দাম কর বাদে ২৯ হাজার ২০০ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১৮ লাখ টাকা)। দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়া সউল যায় ৯৩ মাইল। দাম কর বাদে ৩৪ হাজার ৫০০ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২২ লাখ টাকা)। দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে নিশান লিফ। চলে ১০৭ মাইল। দাম ২৯ হাজার ডলার। দ্বিতীয় টেস্তা মডেল এস। চলে ১১৫ মাইল। কিন্তু দাম ৭১ হাজার ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫৬ লাখ টাকা)। অন্যদিকে শেভি বোল্ট যায় ২৩৮ মাইল এবং দাম ৩৭ হাজার ৫০০ ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা)। এর মধ্যে মার্কিন সরকার পরিবেশবান্ধব গাড়ির জন্য ৭ হাজার ৫০০ ডলার ভর্তুকি দেবে। শেভি বোল্টের বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পেটেন্টের অধিকারী জাফরী জানালেন, ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সাধারণত ভোক্তাদের দুটি ভীতি কাজ করে। প্রথমত দূরত্ব ভীতি (রেঞ্জ এ্যাংজাইটি)। দ্বিতীয়ত উচ্চমূল্য। দূরত্ব ভীতি হলো ব্যাটারির চার্জ পথের মাঝে ফুরিয়ে গেলে কি হবে? এ জন্য সবাই একবার চার্জ করলে যেন গাড়ি অনেক দূরত্বে যেতে পারে সে রকম গাড়ি কিনতে চান। কারণ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করতে অনেক সময় লাগে (৮ ঘণ্টা)। যেখানে পেট্রোলচালিত গাড়ির ট্যাঙ্ক ভরতে পাঁচ মিনিটের বেশি লাগে না। প্রতিদিন বাসাবাড়ির সাধারণ প্লাগ ব্যবহার করে চার্জ করে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল রেঞ্জ পাওয়া গেলেও ডিলারের কাছে দ্রুত চার্জ করার একটি যন্ত্র থাকে (ফাস্ট ডিসি চার্জ)। সেখানে মাত্র ৩০ মিনিটে ৯০ মাইল রেঞ্জ পাওয়া যেতে পারে। বোল্টের সাফল্যের কারণ এই দুটি ক্ষেত্রেই বোল্ট ভাল সমাধান দিয়েছে। দূরপাল্লার ব্যাটারি সত্ত্বেও এর দাম কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীর (টেসলা) চেয়ে অর্ধেক। সাধারণ মানুষের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি বানানোর জন্য সবাই কাজ করছে। কিন্তু পারফর্মেন্স (দূরত্ব ও উপভোগ্য ড্রাইভিং) আর কম দাম দুটো একসঙ্গে এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি। এক্ষেত্রে একমাত্র বাস্তবসম্মত ব্যতিক্রম বোল্ট। এটাই বোল্টের প্রতি মানুষের আগ্রহের মূল কারণ। তার পরে আরও অনেকেই এ ধরনের গাড়ি বাজারজাত শুরু করবে কিন্তু তার আগ পর্যন্ত এই মার্কেটে বোল্ট একাই আধিপত্য করবে। অন্যদিকে বোল্টের ব্যাটারি (এলজি কেমিক্যাল) এবং পাওয়ার ইলেকট্রনিকসে জেনারেল মোটরসের বেশকিছু উদ্ভাবন ইলেকট্রিক গাড়ির জগতটাকেই ভবিষ্যতে পরিবর্তন করে দিতে পারে। একটা সময় ছিল ইলেকট্রিক গাড়ি ছিল উচ্চবিত্তদের শখের বস্তু, পরিবারের তৃতীয় বা দ্বিতীয় গাড়ি।
×