ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাইব্রিড গাড়ি : পেট্রোলচালিত গাড়ির উন্নত বিকল্প

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৪ নভেম্বর ২০১৭

হাইব্রিড গাড়ি : পেট্রোলচালিত গাড়ির উন্নত বিকল্প

আইটি ডটকম ডেস্ক ॥ হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। মূলত হাইব্রিড গাড়ি এমন ইঞ্জিন ব্যবহার করে যার সঙ্গে এক বা একাধিক বিদ্যুত চালিত মোটর সংযোজিত থাকে। পেট্রোলচালিত গাড়ি থেকে হাইব্রিড গাড়ির সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব। এ ছাড়াও যেহেতু এর ইঞ্জিন আংশিকভাবে বৈদ্যুতিক শক্তির সহায়তায় চলে তাই হাইব্রিড বাহনের জ্বালানি খরচও কম। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু হাইব্রিড গাড়ি বাংলাদেশের বাজারে এসেছে। টয়োটার বিখ্যাত প্রিয়াস (চৎরঁং) দিয়ে শুরু হলেও এখন সেডান ও ফ্যামিলি ভ্যানসহ বহু জাতের হাইব্রিড বাহন গাড়ির বাজারে পাওয়া যায়। সম্প্রতি টয়োটা তাদের হাইব্রিড গাড়ির তালিকায় যোগ করেছে টয়োটা ক্যামি। জ্বালানি সাশ্রয়ী ॥ পরিবেশবান্ধব হওয়া ছাড়াও হাইব্রিড গাড়ির মাইলেজ পেট্রোল গাড়ি থেকে বেশি হয়ে থাকে যেহেতু এ ধরনের গাড়ি জ্বালানি চালিত ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন উভয়েই স্বাধীনভাবে চলতে পারে। একই কারনে জ্বালানি খরচও অনেকখানি কমে আসে। এমনকি রিজেনারেটিভ ব্রেকিং নামক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবাদে হাইব্রিড গাড়ির বৈদ্যুতিক মোটর চালু রাখতে কখনই বহিরাগত উৎস থেকে চার্জ করার প্রয়োজন পড়ে না। ইঞ্জিন এবং ব্রেকিং মেকানিজমের যান্ত্রিক ঘর্ষণ থেকেই ব্যবহারকৃত বিদ্যুত পুনরুদ্ধার করতে পারে হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি। যখনি আপনি ব্রেক কষবেন কিংবা ধীরগতিতে গাড়ি চালাবেন তখনই রিজেনারেটিভ সিস্টেম ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে থাকবে। তবে গাড়ি থামিয়ে রাখলে চার্জ হবে না। এই সঞ্চয়কৃত বিদ্যুত গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও বৈদ্যুতিক মোটর উভয়ই চালাতে ব্যবহার করা যাবে। ফলে নতুন ব্যাটারি এবং জ্বালানি তেল কেনার খরচ কমে আসবে। দামের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদে অধিক কার্যকর ॥ অনেকের কাছেই হাইব্রিড গাড়ি কেনার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে পেট্রোলচালিত গাড়ি থেকে এর অতিরিক্ত দাম। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি তেলের খরচের সঙ্গে তুলনা করলে হাইব্রিড গাড়িই পেট্রোলচালিত বাহন থেকে বহুগুণে সাশ্রয়ী হিসেবে দেখা যাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাইব্রিড গাড়ি মাসে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার জ্বালানি খরচ কমিয়ে আনে। ৬ মাসে যার পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার এবং বছরে ১২ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্য যথারীতি বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে এই সাশ্রয়ও বেড়ে আসবে। কেনার সঙ্গে সঙ্গেই রাতারাতি হাইব্রিড গাড়ির সুবিধা ও কম জ্বালানি খরচ নজরে পড়বে না। তবে সাধারণ পরিবহনের ক্ষেত্রে এই ধরনের বাহন পেট্রোলচালিত গাড়ি থেকে আর্থিক দিক দিয়ে তুলনামূলক লাভজনক। শহুরে এলাকার ধীরগতির রাস্তায় হাইব্রিড গাড়ি চালানো অধিক কার্যকর। তাই পারিবারিক ব্যবহার ও কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করতে হাইব্রিড গাড়ি অদ্বিতীয়। তবে শহরের বাহিরে লং ডিস্ট্যান্স ড্রাইভিং করতে চাইলেও হাইব্রিড গাড়ির রিজেনারেটিভ প্রযুক্তি এবং বৈদ্যুতিক মোটরের কল্যাণে বার বার পথিমধ্যে থেমে পেট্রোল কেনার ঝামেলা থেকে অনেকটাই বেঁচে যাবেন। কম খরচে সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা ॥ হাইব্রিড গাড়ি সম্পর্কে গাড়ির মালিকদের মাঝে সাধারণ ধারণা হচ্ছে এই ধরনের বাহন সাশ্রয়ী জ্বালানি খরচ এবং কম বায়ু দূষণের বদলে সর্বোচ্চ গতি ও শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক না হলেও কিছুটা সত্য, যেহেতু একই ধরনের পেট্রোল গাড়ি থেকে হাইব্রিড বাহনের জ্বালানি চালিত ইঞ্জিনটি তুলনামূলকভাবে ছোট এবং কম শক্তির। বৈদ্যুতিক মোটরটিও সাধারণত খুব বেশি শক্তিশালী হয় না। ফলে হাইব্রিড বাহনের ছোটার গতি পেট্রোলচালিত শক্তিশালী ইঞ্জিনের গাড়ি থেকে কম। তবে সব হাইব্রিড গাড়ি এক নয়। উদাহরণ হিসেবে টয়োটা ক্যামি হাইব্রিড গাড়ি পেট্রোল ইঞ্জিন এবং বৈদ্যুতিক মোটর যুগপদভাবে ব্যবহার করতে পারে গাড়ি সচল রাখতে। যা অন্যান্য হাল্কা কিংবা মাইক্রো হাইব্রিড গাড়ি করতে অক্ষম। ফলে টয়োটা ক্যামির মতো পূর্ণ হাইব্রিড বাহনের কর্মক্ষমতা পেট্রোলচালিত গাড়ির মতোই বজায় থাকে। এই ধরনের হাইব্রিড গাড়ি ৭.৮ সেকেন্ডে ঘণ্টায় ০-১০০ কিমি গতি তুলতে পারে। যে কোন পেট্রোলচালিত বাহনের সমতুল্য। তাই হাইব্রিড গাড়ি কেনার মাধ্যমে বহু বছর পর্যন্ত আপনি পাচ্ছেন সহজলভ্য দামে জ্বালানি সাশ্রয়ী, ঘন ঘন ব্যাটারি পরিবর্তন ও তেল ভর্তি করার ঝামেলাহীন এবং পরিবেশবান্ধব ড্রাইভিং করার অভিজ্ঞতা। ধীরে ধীরে হলেও বাজারে হাইব্রিড গাড়ি পেট্রোলচালিত বাহনের জায়গা নিয়ে নিচ্ছে।
×