ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকি ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই!

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৪ নভেম্বর ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ পাকি ষড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই!

পাকিস্তানী হাইকমিশনের ভিডিওতে মেজর জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা বুঝতে গবেষক হওয়া প্রয়োজন নেই। পাকিস্তান হাইকমিশন যা করছে তা তাদের সেনা গোয়েন্দাদের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতেই করছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী কিংবা আইএসআই বাংলাদেশ নিয়ে যা কিছু করে তার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র থাকে। দুনিয়ায় সব দেশের ইমেজ ভিন্ন। একেক দেশের একেক ধরনের ইমেজ। পাকিদের ইমেজ সর্বত্র এখন প্রশ্নবিদ্ধ ও চরম বিতর্কিত। সবাই জানে পাকিস্তান একটি বর্বর দেশ। সেখানকার নিরীহ জনগণ তা উপলব্ধি করে। ১৯৭১ সালে তারা শুধু ভূখন্ড- হারায়নি, তাদের সেরা নামে পরিচিত সেনাবাহিনী অসহায়ের মতো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতেও বাধ্য হয়েছিল। মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর কাছে এই নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ বা সারেন্ডারের কারণ পাকিস্তানের অজানা কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন সেটা নয়। প্রশ্ন যে দেশ এত বছর পরও আমাদের মুক্তি সংগ্রাম বা স্বাধীনতাকে মন থেকে মেনে নিতে চায়নি, পারেনি, তারা কি করে তাদের বিরুদ্ধে ঘোষিত স্বাধীনতার প্রকৃত নায়ককে স্বীকৃতি দেয়? যারা তাদের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে আটকে রেখে মেরে ফেলার জন্য কবর খুঁড়ে রেখেছিল তারা কি জানে না কার অঙ্গুলি হেলনে এই যুদ্ধ বা মুক্তি সংগ্রাম হয়েছিল? তারা এখন জেনারেল জিয়াকে তথাকথিত ঘোষক বানিয়ে এভাবে আরও একবার বিভেদ আর দ্বন্দ্বে ফেলতা চাইছে। খেয়াল করবেন এমন এক সময় এই বিতর্ক মাঠে এলো যখন খালেদা জিয়া দৃশ্যত মাঠে নামছেন। সেখানেও কত নাটক। যাবেন রোহিঙ্গা শরণার্থী অসহায় মানুষকে দেখতে সেখানে পথে পথে হলুদ পোশাকে সজ্জিত রমণীদের ভিড় কেন? দেখে তো মনে হচ্ছিল এ কোন আনন্দযাত্রা। যেখানে দেশ ও দেশের মানুষ নিজেরা ভাল করে বাঁচার সংগ্রাম করছে, দ্রব্যমূল্য প্রায়শ শিরোনাম হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেখানে এহেন আনন্দমুখর পরিবেশ কি বেমানান নয়? আবার হামলার ঘটনাও দেখলাম আমরা। যেতে আসতে এত হামলা আর এত মারামারি, কিন্তু টার্গেট কারা? একজন নেতার গায়েও কিন্তু আঁচড় লাগেনি। যত টার্গেট সব সংবাদকর্মী আর মিডিয়ার লোকজন। ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’! সেটা এভাবেই যেন প্রকাশ্য হতে চাইছে। তবে মনে রাখতে হবে ম্যাডামের বিলেত সফর ও সে নিয়ে গুজবের সঙ্গে পাকি হাইকমিশনের ঘটনা কেমন জানি মিলে যাচ্ছে। তাই আমরা চাই সত্যিকার খবর। চাই ঘটনার পেছনের ঘটনা জানতে। চাই দৃঢ়তা আর বলিষ্ঠতা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির নব্য নেতাকর্মী বা তাদের তরুণ-তরুণীদের বলি, ইতিহাস জানুন। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ কারও বাঁশির ফুঁতে আসেনি। আমাদের ইতিহাস হননের এই ষড়যন্ত্র একদিন সবাইকে বিপদে ফেলবে। আপনারা পছন্দ করেন আর না করেন, কৃতজ্ঞ হন বা না হন মুক্তিযুদ্ধ মানেই একজন মানুষের কঠিন সংগ্রাম আর ত্যাগের ইতিহাস। আপনাদের কথামতো যিনি বাঁশি বাজালেন তিনি যুদ্ধের সিপাহসালার ছিলেন না কেন? বিজয়ের দিন আত্মসমর্পণে তার কি ভূমিকা? তাই জেনে নিন ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কি করেছিল সেদিন। কৃতজ্ঞতা বলে যে শব্দটি তা এখন প্রায় উধাও। আমাদের রাজনীতি পচে-গলে এমন এক আকার ধারণ করেছে আমরা বন্ধু-শত্রু কোনটাই চিনতে পারি না। বর্তমানের নামে যারা সোনালি অতীত ভুলে বা তাকে মাটিচাপা দিয়ে আনন্দে থাকতে চায় তাদের বলিÑ এই দেশ, এই মাটি, এই পতাকা, এই স্বাধীনতার পেছনে বহু মানুষের অবদান, ভালবাসা আর ত্যাগ আছে। না থাকলে আজও আমরা গোলাম আর দাস হয়ে থাকতাম। মুখে বড় বড় কথা বলা মানুষগুলোকে মনে করিয়ে দিতে চাই, এ দেশের জন্ম সহজ কোন প্রক্রিয়ার ব্যাপার ছিল না। আমাদের বিজয় মূলত তিনটি ক্ষেত্রের যুদ্ধের ফলাফল। রাজনীতির লড়াইটা ছিল আওয়ামী লীগ তথা বাঙালীর। রণকৌশল ও রণাঙ্গনের যুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা তথা মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর। আর আন্তর্জাতিক লড়াইটা ছিল ভারত, রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের। দু’দিন আমেরিকা থাকার পর যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে উপযুক্ত প্রটোকল না দিয়ে আমেরিকা অপমান করেছিল তিনি তার জায়গা কোন্টি বুঝে গিয়েছিলেন। ক’দিন পর যখন তিনি মস্কো গিয়ে নামলেন দেখেন প্রচ- শীতকে পাশ কাটিয়ে তাকে সাদরে বরণ করতে এসেছেন ব্রেজনভ, কোসিগিনের মতো নেতারা। ভুল করেননি তিনি। সে মৈত্রী তাকে বিজয়ী করেছিল। মনে রাখতে হবে তার ভেতরের দুশমনও কম ছিল না। সৌভাগ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে জাতীয় চার নেতা। এমনটি না হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কতদিন চলত আর কি তার পরিণাম হতো ভাবা মুশকিল। বলছিলাম ১ নং সফদর জং রোডের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম বৈকি। যে ডাইনিং টেবিলটির অতিথি তালিকায় চার্চিল থেকে আইনস্টাইনের নাম আছে তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থে আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানও খুশি হবেন না। মন্ত্রীরা তো বসবেনই না সেই সাধারণ টেবিল-চেয়ারে। পরাজয়ের পর ভুট্টো গিয়েছিলেন সিমলা চুক্তি করতে। তার কন্যা প্রয়াত বেনজীরের খুব শখ ছিল একে দেখার। যার বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো একজন মহিলার কাছে হেরেছে তাদের বিশ্বসেরা বলে কথিত বাহিনী। বেনজীর বলেছেন, হেলিকপ্টারের বাতাসে উড়ে যাওয়ার মতো একজন ছিপছিপে রমণীকে দেখে তিনি অবাক হয়েছিলেন। পরে আলাপ করে বুঝতে পেরেছিলেন কাকে বলে দৃঢ়তা আর কাকে বলে অমিত তেজ। সবাইকে পিছে ফেলে একজন তথাকথিত ঘোষককে তুলে এনে পাকিস্তান হাইকমিশন বুঝিয়ে দিয়েছে ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। তাদের খেলা এখনও শেষ হয়নি। তবে আল্লাহ্র মার সবার ওপর। তারা এ কাহিনী প্রচার করতে না করতে ইউনেস্কোর মেমরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে জায়গা করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এটি এখন বিশ্ব সম্পদ। শুনে দেখতে পারে পাকি হাইকমিশন। বিএনপির আতঙ্ক! কেননা এই ভাষণেই আছে মুক্তির পথনির্দেশ। শুধু স্বাধীনতা নয় সার্বিক মুক্তির ডাকে আন্দোলিত ভাষণটি আমাদের পাহারাদার। তাই আমরা ভীত নই। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করাই এখন কাজের কাজ।
×