ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক

সিন্হার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে কোন বাধা নেই

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৪ নভেম্বর ২০১৭

সিন্হার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে কোন বাধা নেই

মাস কয়েক আগে চ্যানেল ৭১-এর পর্দায় ভেসে এলো ফার্মার্স ব্যাংকের দুটি পে-অর্ডারের ছবি; যাতে লেখা আছে পে-অর্ডার দুটি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার নামে ইস্যু করা। এবং এতে লেখা টাকার পরিমাণ চার কোটি। ৭১ চ্যানেলের প্রতিবেদক ফারজানা রূপা আরও দলিল উপস্থাপন করেন যাতে দেখা যায় উক্ত ৪ কোটি টাকা ফার্মার্স ব্যাংক ঋণ হিসেবে দিয়েছিল দু’জন ভিন্ন ব্যক্তিকে। অথচ পে-অর্ডার ইস্যু হয় প্রধান বিচারপতি সিন্হার নামে। পে-অর্ডার দুটি বিচারপতি সিন্হার সোনালী ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা হয়, যে টাকা পরবর্তীতে তিনি তুলেও নেন। এই অনুষ্ঠানের দু’দিন আগে ফারজানা রুপা আরও একটি অনুষ্ঠান করে কিছু দুর্লভ দলিল প্রদর্শন করেন যার সারকথা ছিল: প্রধান বিচারপতি সিন্হার ট্যাক্স রিটার্নে প্রচুর গরমিল, প্রতারণা এবং দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। বিচারপতি সিন্হা কোন প্রতিবাদ করেননি। যারা বিচারপতি সিন্হার অতীত দুর্নীতির ইতিহাস জানেন, যারা জানেন ২০০৭ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ঘুষের দলিলপত্র দেখিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের যে তিনজন বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন তাদের অন্যতম ছিলেন বিচারপতি সিন্হা। যারা জানেন সুপ্রীম কোর্টের আকাশে-বাতাসে বিচারপতি সিন্হার উৎকোচের কাহিনী ভেসে বেড়ায় তারা ৭১ টিভির অনুষ্ঠান দেখে অবাক হননি, বরং এটাকেই প্রত্যাশিত বলে ধরে নিয়েছেন। অন্যদিকে যারা এসব জানতেন না তারা এই ভেবে অবাক হয়েছেন এই জেনে , যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত সক্রেটিসের মতো নীতি বাক্য আওড়ান, আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমনের কথা বলেন, তার নিজের বিরুদ্ধে এত কাহিনী। তবে তাদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, ভারতের প্রতারক গুরমিত রাম-রহিম সিংহের মতো বিচারপতি সিন্হাও মিথ্যার বেসাতিতে ভরপুর এসব নীতিবাক্য আওড়িয়ে তার চারপাশে একটি বলয় বা ধূম্রজাল তৈরি করেছিলেন জনসম্মুখে নিজেকে দেবদূত হিসেবে পরিচিত করার জন্য। দুর্নীতির অভিযোগগুলো আরও ঘনীভূত হলো যখন সুপ্রীমকোর্টের প্রতিবেদন থেকে পরবর্তীতে জানা গেল, শুধু রূপার অনুষ্ঠানের তিনটি দুর্নীতির অভিযোগই নয়, বিচারপতি সিন্হার বিরুদ্ধে মোট ১১টি দুর্নীতির অভিযোগ এবং প্রামাণ্য দলিল মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপীল বিভাগের বাকি ৫ বিচারপতিকে হস্তান্তর করেছেন ৩০ সেপ্টে¤¦র ২০১৭। যার ফলে ওই বাকি ৫ বিচারপতি এই মর্মে দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, প্রধান বিচারপতি সিন্হা তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সদুত্তর দিতে না পারলে তারা সিন্হার সঙ্গে আদালতে বসবেন না। প্রধান বিচারপতি সিন্হা কোন উত্তর দিতে পারেননি। এহেন পরিস্থিতিতে সিন্হা বাবুর সামনে ছুটি নেয়া বা পদত্যাগ করা ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না বিধায় তিনি প্রথমটিই বেছে নিয়ে বিদেশে চলে যান। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন পদত্যাগ করলে সঙ্গে সঙ্গেই দুদক ধরবে। তিনি ভান করে দেশ ছেড়ে চলে গেলেন দুর্নীতির মামলা এড়াতে। এরপর প্রশ্ন ওঠে, দুর্নীতির জন্য তার বিচার হবে কিনা। এরই মধ্যে তার নির্দেশনায় জনৈক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তদন্ত বন্ধ করার জন্য দুদকে যে চিঠি একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরে পাঠানো হয়েছিল, হাইকোর্ট বিভাগ সে ব্যাপারে একটি রুল ইস্যু করে, যার প্রতিক্রিয়া সিন্হা পর্যন্ত গড়াতে বাধ্য। দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন অভিযোগসমূহ দুর্নীতি সংক্রান্ত হওয়ায়, এগুলোর তদন্ত দুদকেরই কাজ। এরপর কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হতে পারে কিনা। তাদের ধারণা, ১৮৫০ সালের জুডিশিয়াল অফিসার্স প্রটেকশন এ্যাক্টের কারণে তা সম্ভব নয়। তারা মনে করেন সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যতিরেকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কিছুৃ করা সম্ভব নয়। তাদের প্রতি সম্মান রেখে যা না বলেই পারছি না তা হলো, ১৮৫০ সালের আইনটি কোন বিচারককে ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে নিষ্কৃতি দেয় না। এটি একান্তই একটি দেওয়ানি বিষয়ক আইন যার মূল প্রতিপাদ্য এই যে, কোন বিচারক যদি নিষ্ঠার সঙ্গে মনে করেন তিনি ঠিক বিচার করেছেন এবং তার এখতিয়ারের মধ্যেই করেছেন, তাহলে তিনি ভুল করলে বা এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ করলেও তার বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানি প্রতিকার চাওয়া যাবে না সোজা কথায় টর্ট আইনে মামলা করা যাবে না। সুতরাং কোন বিচারক দুর্নীতি করলে বা কোন ফৌজদারি অপরাধ করলে এই আইন মোটেও তার সহায়ক হবে না, হতে পারে না। যারা এমন ধারণা পোষণ করেন যে, দুর্নীতির জন্য কোন সাংবিধানিক পদের ধারকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা যায় না, তাদের ধারণা ঠিক হলে যা দাঁড়াবে তা হলো এ শ্রেণীর কোন ব্যক্তি খুন করলেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত হতে পারে না। রাষ্ট্রে দুই ধরনের ব্যক্তি আদালতের বিচার ক্ষমতা থেকে নিষ্কৃতিপ্রাপ্ত। একজন হলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি যিনি সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী এ নিষ্কৃতি ভোগ করেন ততদিন যতদিন তিনি মহামান্য পদে বহাল থাকেন। ইংল্যান্ড গধীরস রায় করহম পধহ ফড় হড় ৎিড়হম. সেই গধীরস কে অনুসরণ করেই এই বিধানকে আমাদের সংবিধানে স্থান দেয়া হয়েছে লিখিতভাবে। অন্য শ্রেণীটি হচ্ছে বিদেশী কূটনীতিকগণ যারা কূটনৈতিক প্রতিরক্ষায় ১৯৬৪ সালে ভিয়েনা কনভেনশনের বলে আদালতের আওতা এড়াতে পারে। তবে ততদিন যতদিন তিনি কূটনীতিক পদে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত। অনেকে ভাবছেন, কোন বিচারপতি বা অন্য সাংবিধানিক পদে ধারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার একমাত্র পন্থা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। অনেক প্রজ্ঞাবান আইনজ্ঞের মতে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সে প্রশ্নে কোন বিতর্কে না গিয়েও অত্যন্ত স্পষ্ট বলা যায় কোন বিচারপতি বা একই ধরনের সাংবিধানিক পদাধিকারী ব্যক্তি কোন অপরাধ করলে তাদের তদন্ত প্রাথমিকভাবে শুধু সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই করতে পারবে, অন্য কেউ পারবে না; এটা যারা মনে করেছেন তারা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এবং অন্য আইন প্রয়োগকারীদের ভূমিকার পার্থক্য পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারছেন বলে আমার মনে হয় না। তাদের কাছে যদি প্রশ্ন রাখা হয়, একজন সাংবিধানিক পদাধিকারী খুন করলে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে কি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? এক্ষেত্রে তারা কি জবাব দেবেন? সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল (যদি বর্তমান থেকেও থাকে, যার বর্তমান অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।) সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় কাউন্সিল হলেও এটি কোন ফৌজদারি আদালত নয় এবং এর কাজ দোষী ব্যক্তিকে দন্ড দেয়া নয়, এই কাউন্সিলের কাজ হলো এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়া যে অভিযুক্ত সাংবিধানিক ব্যক্তি স্বীয় পদে বহাল থাকার দাবি হারিয়েছেন কিনা? হারিয়েছেন বলে প্রমাণিত হলে কাউন্সিল মহামান্যের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন এবং মহামান্য তাকে অপসারণের আদেশ দেবেন। অন্যদিকে দুদক বা অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব হচ্ছে এটা তদন্ত করা যে কোন ব্যক্তি, সে যেই হোক না কেন, আমলযোগ্য কোন অপরাধ করছে কিনা এবং প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে বিচারের সম্মুখীন করা। এ দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে না। এমনকি সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের রায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে হলেও দুদক বা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সিদ্ধান্ত অন্যবিধ হতে পারে। দুইয়ের আইনগত, তত্ত্বগত, ভাষাগত, গন্তব্যগত এবং আঙ্গিক, উদ্দেশ্য, বিধেয় এবং রায়ের পরিণতি সবই ভিন্ন। বেশ কয়েক বছর আগে একজন কর্মরত নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করেছিল সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছাড়াই। অন্যদিকে, একই কারণে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস বলে রায় দিলেও দুদক বা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং পরবর্তীতে ফৌজদারি আদালত ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এমনকি কোন দুর্নীতির বা অন্য ফৌজদারি মামলায় কোন পক্ষ সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এই বলে সংশ্লিষ্ট আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না যে, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এক ধরনের রায় দিয়েছে। আরও মনে রাখা প্রয়োজন, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফৌজদারি আদালত হলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার কোন ফৌজদারি আদালতে হতে পারত না সংবিধানে উল্লিখিত dual yeopardy-র বিরুদ্ধে বিধানের কারণে। সুতরাং প্রধান বিচারপতি সিন্হার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে দুর্নীতি তদন্তে বিন্দুমাত্র আইনী বাধা নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং আপীল বিভাগের বাকি ৫ বিচারপতির ভূমিকার যথার্থতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। তাদের কথা রাষ্ট্রপতির উচিত ছিল তার কাছে প্রধান বিচারপতি সিন্হার বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ এলো তখন সেগুলো সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানো। কেউ কেউ আবার এটাও বলছেন যে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কথা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন এবং দুর্নীতির কথা সবার আগে প্রধান বিচারপতিকেই জানানো উচিত ছিল। সকলেই জানেন ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অস্তিত্বের প্রশ্ন নিয়ে চলছে তুমূল বিতর্ক। কয়েকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের মতে এই মুহূর্তে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অস্তিত্বহীন, কেননা শুধু পার্লামেন্টই তা পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তদুপরি সরকার ষোড়শ সংশোধনী রায়ের রিভিউ চেয়ে দরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিসহ অন্যান্য সাংবিধানিক পদের ধারকদের অপসারণের জন্য কোন আইন নেই বলে একটি জোরালো যুক্তি বিরাজমান। এহেন পরিস্থিতিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যা করেছেন, সেটা ছাড়া তাঁর কোন বিকল্প ছিল না। রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের তিনটি অঙ্গেরই প্রধান। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের কার্যকলাপই তাঁকে পর্যবেক্ষণ করতে হয় এবং কোথাও চিড় ধরলে সেটা যথাযোগ্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের নজরে আনাও তার সাংবিধানিক দায়িত্বের অংশ। কোন সমস্যা, বিশেষ করে সেটি যদি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি চোখ বন্ধ করে রাখতে পারেন না। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিশ্চিতভাবে একটি অশনিসঙ্কেতসম বিষয়। এতে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থা রাষ্ট্রপতিকে সংবাদ সরবরাহ করেন বিধায় তার কাছে এমন তথ্য থাকে যা অন্যদের কাছে নাও থাকতে পারে। তিনি যদি এ ধরনের তথ্য পান যা বিচার অঙ্গকে পঙ্গু করে দিতে পারে তখন সেটির বিরুদ্ধে যথার্থ ব্যবস্থা নেয়া তার মৌলিক দায়িত্বের অন্যতম। সুতরাং সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল নিয়ে বিতর্কিত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আপীল বিভাগের বাকি বিচারপতিদের বিষয়টি জানিয়ে দেয়া ছিল অপরিহার্য; উদ্দেশ্য ছিল তারা যেন প্রধান বিচারপতির কার্যকলাপ সম্পর্কে সজাগ থাকেন যাতে প্রধান বিচারপতি তার স্থায়িত্বকালে আর দুর্নীতিতে গা ভাসাতে না পারেন। সোজা কথায় আপীল বিভাগের অন্য বিচারকরা যেন ‘ধিঃপযফড়ম এর’ ভূমিকায় থাকেন। একই কারণে সংশ্লিষ্ট বৈঠকে বিচারপতি সিন্হাকে ডাকলে বৈঠকের উদ্দেশ্যই বিঘ্নিত হতো। বাকি ৫ বিচারপতি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রধান বিচারপতির দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পেয়ে স্বভাবতই শঙ্কিত এবং আড়ষ্ট হয়ে পড়েন এ কারণে যে তারাও সর্বোচ্চ আদালতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ায় সে আদালতের ভাবমূর্তি তারা বিনষ্ট হতে দিতে পারেন না। যেহেতু প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তাদের নেই সেহেতু প্রধান বিচারপতির থেকে সদুত্তর না পেলে তার সঙ্গে না বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছাড়া তাদের কাছে কোন বিকল্প ছিল না সুপ্রীমকার্টের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে। তারাও বহুদিন বিষয়টি চেপে রেখে অবশেষে সেই পরিস্থিতিতে ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন যখন বিচারপতি সিন্হার অস্ট্রেলিয়া ত্যাগের প্রাক্কালে দেয়া বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার পরে। যারা মনে করেন বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য বিচারপতি সিন্হার বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ নিয়ে কোন কথাবার্তা ঠিক হয়নি, তারা উট পাখির পন্থাই বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ সমস্যা হলে বালুতে মুখ ঢেকে রাখাই শ্রেয় বলেন তারা অবান্তর নীতিরই ধারক। এই নীতি বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষা তো করবেই না বরং এ বিভাগকে অতলে ঠেলে দেবে। চোখ বুজে কি প্রলয় বন্ধ করা যায়? বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে যদি এই বিভাগকে দুর্নীতিবাজমুক্ত করা যায়, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে হতে হবে ধোয়া তুলসীপাতার মতোই পবিত্র। কেননা, তার পদ একটি প্রতিষ্ঠান। বহু বছর আগে যখন ডধঃবৎমধঃব কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান নিক্সনের নাম, তখন কিন্তু কেউ বলেনি রাষ্ট্রপতির পদটি যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান সেহেতু এ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে অভিযোগটি প্রকাশ্যে না এনে ধামাচাপা দেয়াই শ্রেয়। সেদিন নিক্সনের বিদায়ের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল বলে মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধানের পদের ভাবমূর্তি রক্ষা পেয়েছিল, অন্যথা হলে এ পদের ভাবমূর্তি কলঙ্কিতই হতো। লেখক : আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি
×