ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বেটার লেট দ্যান নেভার

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বেটার লেট দ্যান নেভার

Better late than never- ইংরেজী ভাষার এই প্রবাদ বাঙালী সমাজেও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। অর্থাৎ একটি বিষয় একেবারেই অর্জিত না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভাল। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো (UNESCO) দেরিতে হলেও বাঙালী জাতির অমর মহাকাব্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্য বা গ্লোবাল হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, গ্রহণ করেছে। এই ভাষণের ওপর বহু কলাম, রিপোর্ট রচনা করেছি। এটি এতই গভীরভাবে উপলব্ধির যে, মন ভরে না। একাত্তরের দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে ৭ মার্চ সেদিনের রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মাত্র ১৯ মিনিটের ১০৯৫ শব্দের একটি ভাষণে বাঙালীর হাজার বছরের স্বপ্ন-সাধ স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ঘোষণা দেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এভাবে জয়বাংলা বলে ভাষণটি শেষ করেন। এই ভাষণ লিখিত ছিল না, সম্পূর্ণ এক্সটেস্পোর একটি ভাষণ, যাতে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস যেমন বর্ণনা করেছেন, তেমনি আগামী দিনের লড়াই কি হবে তাও অবলীলায় বলে দিয়েছেন। আজ যে জায়গায় স্বাধীনতা স্তম্ভ মাথা উঁচু করে চারদিকে আলো ছড়াচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে সেদিন যখন ভাষণটি দিচ্ছিলেন তখন রেসকোর্স ময়দানের চারদিকে পাকিস্তান মিলিটারি অনেকগুলো গান ক্যারেজ এবং আকাশে হেলিকপ্টার গানশিপ ঘুরছিল। রেসকোর্সে সেদিন ১০ লাখ লোক জমায়েত হয়েছিল এবং তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্টুডেন্ট এবং ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। আজও সেই চিত্র চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়, নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই। কি ছিল না সেই ভাষণে? স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই থেকে শুরু করে স্বাধীন দেশ কিভাবে চলবে সবই বললেন। ৪৭ বছর হতে চলল। বঙ্গবন্ধু ভাষণটি এমন এক মহাকাব্য, যার স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। তবু বিশ্বসংস্থার এই স্বীকৃতির মাধ্যমে দুনিয়াব্যাপী গবেষণা হবে, বিশেষ করে জ্ঞানান্বেষী তরুণ সমাজের মনে এটি স্থান পাবে। কেননা, এই ভাষণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ আব্রাহাম লিংকনের ‘গেটিসবার্গ এডরেসের’ মতোই বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম রাজনৈতিক ভাষণ হিসেবে গৃহীত ও সমাদৃত এবং শ্রুত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে আজ অব্দি বিগত ৪৭ বছরে এটি যতবার বাজানো হয়েছে, যত মানুষ যত জায়গায় শুনেছে, যত মানুষ পড়েছে, তার তুলনা বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে নেই। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর হাজার বছরের বিচ্ছিন্ন সংগ্রাম-আন্দোলনকে একই মোহনায় প্রবাহিত করিয়ে কিভাবে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক মিলিটারি জান্তাকে পরাভূত করে স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড, স্বাধীন পতাকা, স্বাধীন জাতীয় সঙ্গীতকে নিরঙ্কুশ করতে হবে ভাষণে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিক দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার সামরিক জান্তা কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন- This may be my last message, from today Bangladesh is independent, I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to risist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved. (হয়ত এটাই আমার শেষ বাণী। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলার প্রিয় জনগণের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা যে যেখানে যেভাবে আছেন, যার কাছে যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে হানাদার মিলিটারি বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকেও বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার মাধ্যমেই কেবল যুদ্ধ শেষ হবে) বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণাটির পূর্বে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা ২৫ মার্চ কালরাতে ট্যাংক-কামান নিয়ে হায়েনার মতো নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর পরপরই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআর (বিজিবি)-এর ওয়ারলেস, টেলিফোন, টেলেক্স, টেলিগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে ‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে নিরস্ত্র বাঙালী রাতারাতি সশস্ত্ররূপে সজ্জিত হয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননকে মুজিবনগর ঘোষণা করে ’৭০-এর নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ পার্লামেন্ট বসিয়ে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ (১০ এপ্রিল ১৯৭১) এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে (গ্রেফতার হওয়ায়) তাঁরই ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান প্রমুখের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় (১৭ এপ্রিল ১৯৭১)। এই সরকারের রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হন স্বাধীনতার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। এই সরকারেরই নেতৃত্বে, পরিচালনায় ও কমা-ে সাধারণ মানুষ, নারী, সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, আনসার, বিএলএফ, ইউওটিসি ক্যাডেট, এফএফ, স্বাধীন বাংলা সংগ্রামী ৯ মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদ ও ৬ লাখ মা-বোনের জীবন ও ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয় এবং বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত ‘পাকিস্তানী হানাদার শেষ মিলিটারিটিকে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ভারত, রাশিয়াসহ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষ আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করে। বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মহীয়সী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান বাঙালী জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। অগ্নিঝরা মার্চ এক. মার্চ মাস অগ্নিঝরা অবিধায় ভূষিত হওয়ার কারণ হলো পুরো মার্চ মাসই ছিল অসহযোগ আন্দোলনসহ ঘটনাবহুল। এ সময় বঙ্গবন্ধু যা বলতেন বা বঙ্গবন্ধু ভবন ধানম-ি ৩২ নম্বর থেকে যা নির্দেশ দেয়া হতো ক্যান্টনমেন্টবাসী আর্মি ছাড়া আর সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। এমন নজির পৃথিবীতে আর কোথাও নেই। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ ছিল অনেক বেশি সফল এবং কার্যকর। অর্থাৎ মার্চ মাসব্যাপী যা যা ঘটেছে সবই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও নামে। দুই. স্বাধীনতা ঘোষণার একমাত্র নিয়মতান্ত্রিক বৈধ এখতিয়ার ছিল বঙ্গবন্ধুরই। কেননা ৭০-এর নির্বাচনে বাংলার জনগণ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন উপহার দেয়- ১৬৯টি আসন পায় আওয়ামী লীগ। তিন. পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা হয়। কিন্তু ১ মার্চ পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তা প্রধান ইয়াহিয়া পার্লামেন্টের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। ইয়াহিয়ার হুংকার Mujib is a traitor (?) This time he will not go unpunished (মুজিব বিশ্বাসঘাতক (?) এবার শাস্তি ভোগ করা ছাড়া বাঁচতে পারবে না)। সঙ্গে সঙ্গে গোটা বাংলাদেশ এবং প্রবাসী বাঙালীরা ফুঁসে ওঠে। চার. ২ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গাড়ি বারান্দার ওপরে ওঠে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ.স.ম আবদুর রব ‘বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত’ লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পাঁচ. ৩ মার্চ, তৎকালীন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ পল্টনের বিশাল ছাত্র-গণসমাবেশে স্বাধীন বাংলার ইশতেহার পাঠ করেন। ইশতেহারের অন্যতম অঙ্গীকার হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা ঘোষণা। ছয়. ৭ মার্চ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ১০ লাখ মানুষ ২০ লাখ হাত উত্তোলনের মধ্যে এবং জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সাত. ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। আট. ২৩ মার্চ, ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে দিলে তিনি তা উত্তোলন করেন। সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে স্বাধীনতার পতাকা উড়ে। দিনটি ছিল পাকিস্তানের ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ এবং ঐদিন ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উড়েনি। নয়. ২৫ মার্চ, কালরাতে পাকিবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে। দশ. ২৬ মার্চ, প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য এক. ভাষণটি ছিল ১০৯৫ শব্দের এবং অলিখিত বা এক্সটেস্পোর। ভাষণে প্রথমে তিনি পাকিস্তানের ইতিহাস ও সমসাময়িক পরিস্থিতি, পাকিস্তানী মিলিটারি জান্তার নির্যাতন তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা করেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই।’ দুই. প্রশাসনিক ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল এবং তোমাদের যা আছে তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাক। তিন. গেরিলা যুদ্ধের নির্দেশনা : (ক) গরিব মানুষের কর্মক্ষেত্র ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন, (খ) প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, (গ) তোমাদের যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে, (ঘ) রাস্তাঘাট যা যা আছে, আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে, (ঙ) আমরা ভাতে মারব, (চ) আমরা পানিতে মারব, (ছ) সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। চার. বঙ্গবন্ধুকে যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদীর অপবাদ দিতে না পারে তাই উপরোক্ত নির্দেশনাবলীর সঙ্গে সঙ্গে ৪টি দাবি দেন ‘১. সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে, ২. সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে এবং ৪. জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’ ৭ মার্চকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত এক. মিলিটারি জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশুপার্ক বানান, যাতে এটি আর ভাঙ্গা না যায়, কারণ বাচ্চাদের ব্যাপার। স্পর্শকাতর। দুই. শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাদুঘর নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। সেদিন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অংশ নেন ইয়াসির আরাফাত, নেলসন ম্যান্ডেলা ও সোলেমান ডেমিরেল (তুরস্ক)। ৬০% কাজ হওয়ার পর খালেদা জিয়া ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে কাজ বন্ধ করে দেন। ২০০৮-এ নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা পুনরায় ক্ষমতায় এসে বাকি কাজ সম্পন্ন করেন। আজ স্বাধীনতা স্তম্ভ তথা গ্লাস টাওয়ার রাতের বেলা দিগন্তব্যাপী আলো ছড়িয়ে চলছে। দুর্ভাগ্য হলো, এতদিন হয়ে গেল, এত সংবাদপত্র, এত টেলিভিশন, জনকণ্ঠ ছাড়া কেউ একটা ফিচার রিপোর্টও প্রকাশ করেনি। অথচ এই ৭ মার্চের ভাষণস্থলেই পাকিস্তানী আর্মি নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করেছিল। ভারতের মহান নেত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে (মার্চ ১৯৭২) এখানেই মঞ্চ করা হয় এবং তিনি সেই মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন ও বক্তৃতায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর শেষ সৈন্যটিও স্বাধীন বাংলার মাটি থেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। এই একই স্থানে ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ সর্বজন শ্রদ্ধেয় কবি বেগম সুফিয়া কামাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের (নেপথ্যে শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে গণআদালত বসিয়ে গোলাম আযমের প্রতীকী ফাঁসির হুকুম দেয়া হয়। তিন. সর্বশেষ চক্রান্তে লিপ্ত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ.কে খন্দকার বীর উত্তম। শেখ হাসিনার বদান্যতায় এমপি, মন্ত্রী হয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে শেষে একখানা কেতাব রচনা করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু নাকি ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে- মতলববাজ। এই খন্দকার তখন ছিলেন ক্যান্টনমেন্টে। রেসকোর্সে ছিলেন না। আমরা ছাত্রলীগ কর্মীরা মঞ্চের কাছে ছিলাম। মাঠে ছিল ১০ লাখ মানুষ। সবাই শুনলাম বক্তৃতা শেষ করেছেন ‘জয় বাংলা’ বলেই। কোন পর্যায়েই ‘জয় পাকিস্তান’ বলেননি। তারপরও তিনি কোত্থেকে শুনলেন জানি না। তিনি জিয়ার পথ ধরেছেন সত্য, তবে জিয়ার মতো কৌশলী হতে পারেননি। বোকার মতো বিকৃত করে করে ধরা খেলেন। ঢাকা ॥ ২ নবেম্বর ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×