ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আয়কর মেলা

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৪ নভেম্বর ২০১৭

আয়কর মেলা

আয়কর প্রদানে বাংলাদেশের বহু মানুষের অনীহা একটি সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। এ অনীহার জন্য দায়ী কিছুটা আয়কর ব্যবস্থাও। আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিও কম দায়ী নয়। সুনাগরিকরাও আয়কর প্রদানের বিদ্যমান পদ্ধতিতে অস্বস্তি বোধ করেন। বর্তমান সরকারের আমলে আয়কর ব্যবস্থায় গতি আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও পদ্ধতিগত জটিলতা এখনও পুরোপুরি দূর করা যায়নি। আয়কর মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা একবার বলেছিলেন, আয়কর রিটার্ন ফরমের অনেক কিছু তিনিও ভাল বোঝেন না। এ কারণে তাকেও মধ্যস্বত্বভোগী কর আইনজীবীদের শরণাপন্ন হতে হয়। অনেক সময় কর আইনজীবীরা কাগজপত্র ঠিক করতে কর অফিসের বাড়তি খরচের দোহাই দেন। সরকারের মন্ত্রী মর্যাদার একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার দৃষ্টিতে কর প্রদানের পদ্ধতি কঠিন হলে সাধারণ করদাতাদের অবস্থা কি দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। ২০০৮ সালে দেশে প্রথম আয়কর দিবস পালন শুরু হওয়ার পর বহু করদাতা কর বিষয়ে সচেতন এবং উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। আয়করের প্রতি দেশের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে আয়করদাতাদের সংখ্যাও। বুধবার রাজধানীর নির্মাণাধীন রাজস্ব ভবনে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার উদ্বোধনের পর মেলা প্রাঙ্গণে করদাতাদের ভিড় লক্ষণীয়। মেলায় করদাতারা আয়কর রিটার্ন পূরণ করে জমা দেয়া ও প্রযোজ্য কর পরিশোধ করতে পারছেন। নতুন করে করের খাতায় নিবন্ধিত হয়ে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) নেয়াসহ সব ধরনের কর সেবা নেয়ার সুযোগ রয়েছে মেলায়। ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে এ মেলা চলবে সাতদিন। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে ১৬১টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আয়কর মেলার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় এই মেলা নতুন করদাতার সংখ্যা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। স্বীকার করতে হবে, নাগরিকদের মধ্যে আয়কর দেয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। তারপরও কর প্রদানের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে এখনও কেন ভীতি কাজ করছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। আয়কর বাড়ানোর জন্য এনবিআর ও আয়করদাতার মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক জরুরী। ভয়ভীতি দেখিয়ে আয়কর আদায়ের চেষ্টা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয় না। আমরা মনে করি কর প্রদান পদ্ধতি আরও সহজ ও যুগোপযোগী করা হলে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে। বলাবাহুল্য, দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য তা হবে ইতিবাচক। আয়করের গুরুত্ব বোঝাতে অর্থমন্ত্রীর একটি কথাই যথেষ্ট। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে দেশে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। তা না হলে বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’ এখন বিবেচ্য হলো করদাতার সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো সম্ভব। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে জনগণের দেয়া কর। আয়কর রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। বছরের পর বছর সরকার কর্তৃক কর থেকে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও আয়কর দেয়ার পদ্ধতি সহজ ও জনবান্ধব না করাটা দুর্ভাগ্যজনক। একজন নাগরিককে করদাতা হওয়ার জন্য বিশাল গাইডলাইন পড়ে পূরণ করতে হয়। এর পরিবর্তে সীমিত আকারে কেবল করদাতার নাম-ঠিকানা, গাড়ি-বাড়ি, আয়-ব্যয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদ ও আয়ের অন্যান্য উৎস জানানোই যথেষ্ট হতে পারে। একই সঙ্গে বারবার একই ফর্ম পূরণ বাধ্যতামূলক না করে একবার পূরণ করা ফর্ম প্রয়োজনে পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আয়কর মেলায় আয়কর কার্ডসহ কিছু ইতবাচক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ থেকে সত্যিকার অর্থে করদাতা সুফল পেলেই আয়কর মেলার তাৎপর্য বোঝা যাবে।
×