ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানির দাম যৌক্তিক করলে বিদ্যুতের মূল্য কমানো সম্ভব ॥ ক্যাবের শুনানি

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ৩ নভেম্বর ২০১৭

জ্বালানির দাম যৌক্তিক করলে বিদ্যুতের মূল্য কমানো সম্ভব ॥ ক্যাবের শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জ্বালানির দাম সমন্বয়ের সঙ্গে উৎপাদন খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বদলে উল্টো কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম কমানোর বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) একটি শুনানি করে কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগও পৃথক একটি সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানেও বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে বিদ্যুতের মূল্য কমানোর বিষয়ে ক্যাবের যুক্তি শোনা হয়। ক্যাব বলছে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হিসেবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যা প্রচার করছে সেখানে অন্তত ৬৬ পয়সা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। কিভাবে অতিরিক্ত এই দর দেখানো হচ্ছে তার উদাহরণ তুলে ধরে সেমিনারে বলা হয়, কৃষির সেচ ও প্রান্তিক গ্রাহকদের কম দামে বিদ্যুত দেয়ায় ৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। সরকার বলে আসছে এই লোকসান ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হচ্ছে। অথচ সরকার বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি না দিয়ে ঋণ দিচ্ছে, ওই ঋণের ওপর আবার সুদও নিচ্ছে। এতে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি সাড়ে ২৬ পয়সা ঘাটতি থাকছে। এ ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে যা অযৌক্তিক। সরকার যদি বলে দেয় এই অর্থ ভর্তুকিই থাকবে তাহলে উৎপাদন ব্যয় অন্তত ২৬ পয়সা কমে যাবে। এছাড়াও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিপরীতে যুক্তি তুলে ধরে সেমিনারে বলা হয় উৎপাদন ব্যয়হারে বিদ্যুত উন্নয়ন তহবিল বাবদ ২৬ পয়সা, ভর্তুকির সুদ বাবদ ২১ পয়সা, পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার ঘাটতি ৫ পয়সা, মেঘনাঘাট আইপিপিতে ফার্নেস অয়েলের পরিবর্তে ডিজেল ব্যবহারে আরও অতিরিক্ত ১৪ পয়সা ব্যয় বেড়েছে। যা বিদ্যুতের মূল্যহারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এভাবে উৎপাদন ব্যয়কে ৬৬ পয়সা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু এবার প্রস্তাব পর্যালোচনা করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ৫৭ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরালেই ইউনিটপ্রতি ৯ পয়সা দাম কমানো সম্ভব। এর বাইরে জ্বালানি তেলের বাজার দর সমন্বয় করলে আরও দাম কমানো যায়। যেহেতু পাইকারি দর বাড়ানোর সুযোগ নেই তাই বিদ্যুতের গ্রাহক পর্যায়ে দরও আর বাড়ে না। রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে ‘বিদ্যুতের দাম কমানোর প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে ক্যাবের পক্ষে যৌথভাবে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষক ফাহিম-আল-দ্বীন ও মোঃ সানোয়ার হোসেন। ওই উপস্থাপনায় বিদ্যুত খাতে করা জরুরী ও জ্বালানি আইন দ্রুত প্রত্যাহার করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ার পরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বেশি দামে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তেল বিক্রি করছে সে কারণে পিডিবির বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়েরও সুপারিশ করা হয়। গত আগস্ট মাসে শুরু হওয়া পাইকারি ও গ্রাহক পর্যায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি চলে যা সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়। এখন কমিশন বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। ক্যাবের উপস্থাপনার ওপর সেমিনারে অন্যদের মধ্যে মতামত দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাবেক জ্বালানি সহকারী ও বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ কৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ম. তামিম, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। সরকারের পক্ষে বক্তব্য দেন বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালিদ মাহমুদ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেইন ছাড়াও বিদ্যুত বিতরণ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান। ড. ম. তামিম, ড. এম শামসুল আলম দাম কমানোর প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। এই দুই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামে তেল কিনছে বিপিসি তার চেয়ে অনেক বেশি দামে তেল বিক্রি করছে তারা পিডিবির কাছে। জ্বালানি তেল আন্তর্জাতিক বাজার দরে পাওয়া গেলে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব।
×