পথ চলার গান
হেঁটেছো তো তুমি বহু যোজন,
শাল, তমালের হাত ধরে।
নিয়ে লাল নুড়ির অভিবাদন।
নির্জন দিগন্তকে সঙ্গী করে।
কিংবা ধু ধু প্রান্তরে,
একেবেঁকে ছুটে চলা পথ।
একলা অশ্বত্থের কোটরে অপেক্ষায়
থাকা জীবনের রথ।
দেখেছো তো পথের ধারে কচি কিশলয়ের হাসি।
সাজানো বয়মের সারে সারে
ছেঁড়া ঠোঙায় পোড়া রুটি বাসি।
ম্যাকে কামড় দেয়া দাঁত,
উঠে যায় ঠাণ্ডা গাড়ির কাঁচ।
কাঁচ নামে, ম্যাকের এঁটো বাক্স রাস্তায়।
ভিখিরির উলঙ্গ শিশু তাই হাতড়ায়।
কিংবা লজ্জা জড়ানো দেহ,
আঁধার গলির মুখে।
আসার প্রতীক্ষায় কেহ,
জীবনের তাৎক্ষণিক সুখে।
ছেঁড়া ত্রিপল দিয়ে ঘেরা,
প্রেম, ঘেন্না, ভয়।
তবু স্বপ্ন দেখে ওরা,
ঠিক রাত শেষে আসবেই জয়।
কংক্রিটের জঙ্গল পেরিয়ে,
দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া।
ছোট চাওয়ার দঙ্গল সরিয়ে,
নিজেকে ফিরে পাওয়া।
সেই পথ ধরে হাঁটছ কি তুমি?
দুরন্ত বারিধারায়
যেখানে ভূমি সলিল সমাধির বিসর্জন।
সেই পথ চলাতেই তোমার আমার নিমর্জন।
** মনে পড়ে
যখন ঝাপসা বৃষ্টি খেলা করে
সামনের খোলা মাঠে,
দমকা স্মৃতির ঝড় খুলে দেয় বন্ধ জানালা,
অতীত কড়া নাড়ে,
কলেজের ফেলে আসা এ্যালবামের ছবিরা কথা বলে।
মন খারাপ করা বাতাস খোঁজে হারিয়ে যাওয়া শীতের দুপুর।
কিংবা চোখে চোখ রেখে না বলা কথার দীর্ঘশ্বাস।
পাতাঝরা রাস্তা ধরে বিকেলের পথ চলা।
কিংবা নির্জন পুকুড় পাড়ের ঘাসের আদূরে কথা বলা।
ক্লাস শেষ হওয়া হঠাৎ বিষণœতা,
দিন শেষের মধুর পেলবতা
সব নিয়ে চলে তার চলে যাওয়া,
পড়ে থাকে কাল ধোয়ার হতাশা।
কিংবা ক্লাসের ফাকে তাকে একবার দেখার লোভে খালি লনের সবুজ দেখা।
সে আসবে বলে
ক্যান্টিনের চেয়ারকে বৃথা সঙ্গী করা।
অথবা কখন শেষ হয়ে যাওয়া
চায়ের ভাড়া নিয়ে উদাসীন একা।
দূর থেকে নীরবতার ইথারে স্বপ্নের জাল বোনা।
কিংবা হঠাৎ তাকে সামনে দেখে
মনে মনে বলতে চাওয়া
এতদিনের জমানো পাণ্ডুলিপি,
যার একটা অক্ষরও সে কোনও দিনও পড়ল না।
না বলা গল্পেরা
তাই হাতছানি দেয়,
এ্যালবাম বন্ধ হয়।
** জানালায় বৃষ্টির স্মৃতি
কত কথা বলা হয়নি এখনও,
কত শব্দ অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছে,
কত বিস্ময় চিহ্ন মনে মনে বসানো হয়নি।
তবু তুমি শেষ হয়ে গেলে।
কত মাঝরাত দেখা বাকি রইল,
কত স্বপ্নের পথ হাঁটা বাকি,
কত চাঁদের চুপিসাড়ে মেঘের আড়াল থেকে বেরনো হলো না,
তার আগেই তুমি চলে গেলে।
রাস্তার দুধারে সার দেওয়া
কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়ার রঙের হোলি দেখলে না,
নিচে জমা হলুদ শবের গালিচা দেখলে না,
শুধু অবুঝের মতো চলে গেলে।
সকালের আধো কুয়াশার ঠাণ্ডা চাদর গায়ে দিলে না,
সাঁঝের ডানা ঝাপটানোও কানে এল না,
আলো আঁধারের পথটা পেরিয়ে
সেই কোন আঁধারেই মিলিয়ে গেলে।
অথচ নির্জন দুপুর ছিল তোমার পথ চেয়ে,
নদীর ঢেউ আছড়ে পড়েছে তোমার জন্য,
পাইন, দেবদার কথা বলতে চায়,
কিন্তু তুমিই তো নেই।
রাতের ঝিঁঝি পোকার একটানা ডাক হয়ে,
নিঝুম চাঁদনি রাতের নির্জন সৈকত হয়ে,
কিংবা জানালায় বৃষ্টির স্মৃতি বয়ে,
তুমি মিশে গিয়েছো
কালের কৃষ্ণ গহবরে।
** হলুদ পাতারা বড্ড জ্বালায়
জানালাটা খুলে দিলে ভালো হতো,
কত আলো আসত অন্ধকার মনে,
কত হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যেত
জমে থাকা আবর্জনা স্তূপ স্মৃতি।
হলদে হয়ে যাওয়া,
চুর চুর ভেঙ্গে পড়ার কথা ছিল
যাদের, তারা আশ্চর্যের মতো আজও আছে,
স্মৃতির সরণীর কোনও নাম না জানা, মাইল ফলকে
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে,
বর্তমানের কোনও গাড়িতে লিফ্ট নেওয়ার আশায়।
আর পেলেই হইহই করে
এসে পড়বে আজকের শোওয়ার ঘরে।
ফটোফ্রেমের মানুষ পাল্টে দেবে,
একরাশ প্রশ্ন ছুটে আসবে, কি,
কিভাবে, কেন, কবে, কখন,
দেওয়ালের রং যাবে বদলে,
ডিসটেম্পারের বদলে চুনকামের গন্ধ।
আর আজকের নীরবতাকে খান খান করে
ভেঙে ফেলে একরাশ হাসির উল্লাস।
তাই ওই আপদের দরকারই নেই।
দাও বিদেয় করে।
কি লাভ
কবে কি হয়েছিল আর কি
হতে পারতো তার হিসেব করে?
যা হয়েছে তা পাল্টানো যাবে না।
আর যা হতে পারতো
তা তো আর হবে না।
জানালা খুলে দাও না।
দমকা হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে যাক
পুরনো দিনগুলোকে,
হলদে হয়েও শেষ হয় না যে।
হলুদ পাতারা খালি প্রশ্ন করে।
বড্ড প্রশ্ন করে।
সবুজ পাতারা ভাল।
প্রশ্নের তোয়াক্কাই করে না।
আজ তো খালি নিজস্বি তোলে,
আশপাশ নিয়ে ফালতু মাথা ঘামায় না।
হলুদ পাতা বড্ড জ্বালায়।
একেবারে জ্বালিয়ে দেওয়া যায় না?
শীর্ষ সংবাদ: