ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার ফাঁদে পা রাখি বারবার

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩ নভেম্বর ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার ফাঁদে পা রাখি বারবার

এই ধরুন, আপনার জ¦র এলো, কবিতা পড়লেন সাময়িক আরোগ্য লাভ করলেন। শত ক্লান্তি কিংবা হাই ব্লাড প্রেসার- কবিতা পড়লেন, সুস্থের হাওয়ায় ভাসলেন। কবিতা ব্যাপারটাই এমন, তাছাড়া আর কি! কবিতা একদিকে সমসাময়িকতাকে ধারণ করে ঘটনায়, অন্যদিকে প্রকাশে থাকে নতুনত্ব। ইচ্ছে করেই আমি কবিতার ফাঁদে পা রাখি বার বার রক্তাক্ত হওয়ার লোভে। আমার অনেক আনন্দ, শখ এই কবিতাই খেয়ে ফেলেছে, তাই রক্তাক্ত হওয়ার মাঝ দিয়ে প্রতিটি কবিতায় বুঝতে চাই কবিতার আলাদা আলাদা টেস্ট। তুষার ঝড় সাইবেরিয়ার তুষার ঝড়ে পাখা ভেঙে ডাবিং হয়ে পৌঁছলো একটি গান, টুপি পরা ঘাসের নিকট বরফ খাওয়া গাছের ডালে; জিব বের করে দেখে, কতগুলো বরফের গ্রাম কেউ এসে ইন্দ্রিয় জাগাও, উফ ধ্বনি দাও তিরতিরিয়ে গিটারে প্রজাপতিগুলো উড়তে উড়তে উড়োজাহাজ হয়ে যাক। দুই-তিনটি বন রাতসব- আপডাউনরত, ঝিলিক ভাসে হালকা হালকা, টসটসে রঙের হাহাকার, গোলাপেরটাই বুঝে নাও, সিগন্যাল হয়ে পৌঁছে কাটা চামচ ঢুকিয়েছে স্মৃতিতে এইমাত্র সেই শেয়ারহোল্ডার, পাক ঘুরে তেরো প্রকার- লোকাল বাসে উঠে গেলো, পায়ের খোসা ধুলোয় আঁকিয়ে; যেমন- একটি খোসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাঘ, ঝাঁক ঝাঁক ছুটন্ত বুনো কাঁকড়ার দিকে এমনকি অন্যসব থেকে লাঠি, বল্লম, লাটিম, কাঠের ঘোড়া, লিঙ্গ, দুই-তিনটি বন পেরিয়ে লো ভোল্টেজের সূর্য প্রত্যেক শীতে লো ভোল্টেজে সূর্য রোদ ছড়ায় আমাদের নারিকেল গাছ লম্বা, আর বেঁটে আমগাছ পাতা বাড়িয়ে রোদ শোষে মা যেদিন বউ হয়ে এলো বাবার- খড়ের ঘর থেকে দৌড়াদৌড়ি দূরত্বে, নাড়া কেটে কাঁচা ধান শুকাতে দেন আর রোদ এসে মুঠজালে ঘেরে, তাকে ধান পাহারায় দেখেনি কেউ তার বিশ্বাস রোদ ছাড়া ওসব মোরগ, পাখি ধানটান খায় না। পৃথিবী ফেসবুক টাইপের সফটওয়্যার পৃথিবী ফেসবুক টাইপের সফটওয়্যার, এখানে সবার একেকটি একাউন্ট একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নাম, বয়স, ফোন নম্বর এন্ট্রি দিতে দিতে শুনি তোমাদের প্রেগন্যান্সি এন্ট্রির মাস আর জানি লোডিংয়ের ১০ মাস ১০ দিন পর প্রিন্ট আউট আমাকেও বাবা এন্ট্রি দিয়েছিলেন মায়ের পেটে ‘নিশীথ দাস’ একাউন্ট হ্যাক হলো একটি অসুখের, ভাইরাসের নিটোল ক্লিকে...তারপর ব্লক চুরমারে জেগে আছি ঝড়েরও পর সই, কারও ড্রয়ারের পিনের নখে, ধৈর্য সটান দাঁড়িয়ে ব্লটিং পেপার না হওয়ায় বমিতে ভাসাই- জায়নামাজের পৃথিবী, ডোবে ডোবে যদি ভাবি ধনেপাতার সমান অপরাধী আমি, পৃথিবীকে নিমিষে ব্লক মেরে দেব উড়াল... উড়ন্ত পাখির ডানার কাঁপন লাগিয়ে- বিল্ডিং গল্প জুড়ছিলাম দুটি বিল্ডিং- শহুরে রক্তশূন্যতার, স্যালাইনের... এবং হাফ শার্টপরা বাতাসের- পাঁচ তলার এই সিঁড়ির স্তরে স্তরে চুনকালি, দেয়ালে শুকনো কফ এটাই পানপাতার বেড়ে ওঠা জীবন, ভেজা কাঠের কু-লি পাকানো ধোঁয়া; ফোঁটা ফোঁটা কচুরিপানা দুহাতে আলগোছে সরিয়ে দারুণ গল্প করে, মশকরা করে অদ্ভুত একটা হাত তোমার সিঁড়ি টেনে ধানভর্তি মাচা কিছু পাপ করি স্বেচ্ছায়, সদিচ্ছায় কিছুটা তোমার অনুমতি পেলে আমার সবটা, আমি থাকি না, থাকি না সর্বনামে ভেঙে মিছেমিছি, একটি খুঁটি এগোয় পেঁপের বাগানে, লাউশাকের আগা ভেবে উঠিয়ে দাও মাচায়, ধানভর্তি মাচা তুমি নিজেও, এ কথা কি ভেবেছ কখনো? স্বপ্রণোদিত জাহান জলেশ^রী আমাকে হত্যা করার সে রাতটি মনে পড়ে, বিড়াল কান্নার মতো সে রাত ছিলো এমনই আকাশ কান্নার সারথি। তুমি এতো হেসেছিলে! ঘটা করে শোনাচ্ছিলে নাগরিক রাস্তার পাশে কত কবর ঘুমায় কোনো বিলাসিতা ছাড়া। শোনাচ্ছিলে কমলা কৃষ্ণচূড়ার নিচে কাকে বিসর্জন দিয়েছিলে চতুর ছলনায়, বরাবরের মতো নির্লিপ্ত আমার চোখের নায়াগ্রাও সেদিন ডুবেছিলো বুকের প্রাসাদে। সে রাত ছিল আমার একার, আমার দৈনন্দিন জীবনের মতো। সে রাত ছিল পুরুষ তালের গাছে বাবুই পাখির বাসাকে ফল ভাবা। সে রাত ছিলো, শৈশবের ঘুমভাঙ্গা ভোরে পুকুর পাড়ের পাকা খেজুর কুড়িয়ে আনা আমার বোবা খেলার সাথীর প্রসব বেদনার মৃত্যু চিৎকার, তারপর ফজরের আজানে তার আত্মার শান্তিকামনা। সে রাতে হত্যার আগে কিছুই মনে পড়েনি আমার, আমি ভুলে থেকেছি আমার হুড়হুড়ে জন্ম, প্রশান্ত শৈশব, অনির্বাণ কৈশোর, আমার সদ্য নুড়ি দেওয়া যৌবনগন্ধের মাটির উঠোন, তোমার চোখের টাইমমেশিনে। এত আয়োজনের এ পরিপাটি হত্যা- আমাকে এনে দিলো মেঘের গর্জনে নির্জন রাতের সমুদ্রবিলাস। আমাকে হত্যার পর তুমি স্বীকৃতি পেলে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর, আর আমি পেলাম অমরতার শাস্তি।
×