ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাডভোকেট চিত্রা রায়;###;সুপ্রীমকোর্ট, বাংলাদেশ

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ নভেম্বর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : বহু কষ্টে বাবা মা পড়ালেখা শিখিয়েছিল। গরিব ঘরের চার মেয়ে সন্তানের মধ্যে সবার বড়। সমাজকল্যাণ থেকে অনার্স পাসের পর চাকরির সুযোগ খুঁজছিলাম। ব্যর্থ হয়ে দুই বছর ধরে ঢাকায় যাওয়ার চিন্তা করছিলাম। আমাদের গ্রামের অনেকেই ঢাকায় গিয়ে আজ বেশ ভাল অবস্থানে আছে। এখানেও বেশ বড় বড় বাড়ি করেছে। শুনেছি সেখানে ১০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ লাখ-কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করি। আবার অনেকেই নিষেধ করে। যারা উৎসাহ দেয় তারা নিশ্চিত সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখায়। কত আনন্দের কত সুখের সেই আধুনিক জীবন অবশেষে চাকরির অনেক চেষ্টার পর দু’দিকের দোলাচল থেমে যায়। সিদ্ধান্ত নেই ঢাকা যাওয়ার। গাড়ি ভাড়ার ৫১০ টাকাও সঙ্গে ছিল না। একজন থেকে দুই হাজার টাকা ধার করে ঢাকায় রওনা দেই। যাত্রা শুরু হলো অজানা ভয়। কোন ভাল মানুষের সন্ধানে ছিল মন এবং আমার দুই চোখ। পাশে বসা লোকটিকে মনে হলো ভাল না। তাই তাকে কিছু প্রকাশ করিনি। তবে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল কাকে পাই। কে আমাকে একটা চাকরি দেবে। কি হবে কে দেখাবে পথ? যাত্রাপথে বাস যখন ফেরিতে থামল তখন এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হয়। লোকটিকে ভাল মনে হলো। নাম বলল সুমন। বলল তিনি ঢাকায় থাকেন। আমি কোথায় থাকি জিজ্ঞাসা করাতে মোটামুটি আমার কথা সব বললাম। বিভিন্ন কথা বলার পর তার পরিচিত কিছু গার্মেন্টস আছে, সেখানে কিছু মেয়ের প্রয়োজন। ওই এক পরিচিত বোনের বাসায় অনেক কষ্ট করে খোঁজাখুঁজির পর পেলাম। এক রুমের ছোট বাসা। তাদের চারটি বাচ্চা কয়েকদিন থাকলাম। হাতের টাকাও ফুরিয়ে আসতে লাগল। চাকরির কোন কূল কিনারা করতে পারলাম না। আমর মনপ্রাণ যেন আধমরা হয়ে গেল। পরে নিজেই ওই লোকের নম্বরে ফোন দিলাম দোকান থেকে। তার পর তার বাসা গাবতলীর আশপাশে বলার পর, আমি ওদের বাসা থেকে বের হয়ে গাবতলীতে যাই। আর খুঁজে পাই না। তখন আবার দোকান থেকে ফোন দিলে সুমন নিজেই আসে। তারপর ঈঘএ করে তার বাসায় নিয়ে আসে। খাওয়া দাওয়া করার পর আস্তে আস্তে পরিবেশটা ভিন্ন রকম মনে হতে লাগল। ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেখি এক রুমে ৭-৮ জন মেয়ে এবং ওদের কথাবার্তা অন্য রকম মনে হতে লাগল। পরদিন নিশ্চিত হলাম। যখন আমাকে পর পরুষের সঙ্গে সময় কাটাতে হলো। নিশ্চিত হলাম যে আমি ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। এখান থেকে মুক্তির কোন পথ নেই। তাদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু, বেরুনো নিষেধ। ফোন করা নিষেধ। চিৎকার করতে চাইলে মুখ বেঁধে খাবার না দিয়ে দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। নিজেকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এক লাশ মনে হতে লাগল এভাবে ৬ মাস চলে যায়। পরে কিছুটা ওদের সঙ্গে স্বাভাবিক হই। দিন যেতে থাকে। মন বড় অধৈর্য হতে থাকে। একবার এক পর পুরুষের কাছে বলে ফোন করলাম বাড়িতে। পরবর্তীতে ৫-৬ দিন পর কেন যেন আমাকে প্রচ- রকম মারল। বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বের হতে লাগল। এর পর থেকে কৌশলে কোথায় চাবি থাকে, তা বের করলাম। এর কিছুদিন পর অনেক জল্পনা-কল্পনার পর কৌশলে রাতে চাবি নিয়ে ঘরের দরজা খুলে সাহস করে বেরিয়ে পড়ি এবং এ গলি ও গলি করে। গভীর রাতে যা পথে দু’ একজন মানুষ পাই তাদের জিজ্ঞাসা করতে কিছুদূর এসে একটা ভাল বয়স্ক রিক্সাওয়ালা পেয়ে যাই। সে আমাকে বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে যায়। তারপর বহু ভেবেচিন্তে বাড়ি ফিরে আসি। খুব খারাপ সময় পার করছি। মনে হচ্ছে জীবনের সবই হারালাম। দোকানে সদাই কিনতে গিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে আপনার লেখাটি পড়ে মনে হলো আপনি আমার জন্য যদি কিছু করতে পারেন। আমি কি করতে পারি মাথায় আসছে না। শেষে আপনার দ্বারস্থ হলাম। পরিচয় গোপন রাখতে চাই উত্তর : আপনার ঘটনাটি পড়ে খুব খারাপ লাগছে। জীবনের কিছু সিদ্ধান্ত এমন ভুলভাবে আমাদের জীবনে হাজির হয়, সেখানে আর নিজেকে মাফ করা যায় না। তবে জীবনে উত্থান পতন থাকে, সুখ ও দুঃখ একে অপরের নিত্য সঙ্গী। তাই জীবন তো আর থেমে থাকবে না। জীবন সময়ের গতিতে চলতেই থাকবে। মাঝে মাঝে অতীত ভুলে গিয়ে সামনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। তাই অতীতকে আঁকড়ে না থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন। রাতের আঁধারকে পেছনে ফেলে নতুনভাবে সূর্যের মতো আবার প্রতিদিন জেগে উঠুন। আপনার সমস্যাটিও মানব পাচার আইনের আওতায় পড়বে। আপনার এই সমস্যাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমনের আইনের অধীনে নির্যাতন মনে হলেও আসলে উক্ত অপরাধের জন্য বর্তমানে বলবতযোগ্য আইন হলো মানব পাচার আইন ২০১২। আপনি উক্ত আইনের অধীনে আপনার সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ে রকতে পারেন। উক্ত আইনের ৩ ধারার বিধান মোতাবেক কেউ কাউকে প্রতারণামূলকভাবে বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বল প্রয়োগের বা প্রলুব্ধ করে বা অর্থের বিনিময়ে অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে যদি যৌন শোষণ বা নীপিড়নের উদ্দেশ্যে ক্রয় বা বিক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ নির্বাসন বা চালান বা আটকিয়ে বা লুকিয়ে রাখে বা আশ্রয় দেয়, তবে তা উক্ত আইনের মানব পাচার হিসেবে গণ্য হবে। উক্ত অপরাধের জন্য অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অন্যূন সাত বছর কারাদণ্ড বা আর্থিক দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
×