ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে প্রকল্প প্রণয়নে সমন্বয়হীনতা

দুর্ভোগ বাড়বে পৌরবাসীর

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ নভেম্বর ২০১৭

দুর্ভোগ বাড়বে পৌরবাসীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর, ২ নবেম্বর ॥ ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার দায় নিয়ে চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত নাটোরের উন্নয়নমুখী প্রকল্প সড়ক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার নির্মাণ কাজ। সড়ক ও জনপদ বিভাগ নাটোর পৌর কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন ও সুপরিকল্পিতভাবে প্রকল্প প্রণয়ন না করেই সড়ক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার নির্মাণ কাজ করায় শহরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা এই প্রকল্পের জন্য অন্যতম প্রধান অন্তরায় ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাটোর পৌরসভা ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে প্রকল্প সংশোধন করে ড্রেন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে। তবে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য প্রকল্প সংশোধন করে অতিরিক্ত প্রায় কোটি টাকার প্রকল্পের বাজেট চাওয়া হচ্ছে বলে সড়ক ও জনপদ বিভাগ জানিয়েছে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রকল্প শহরের বড় হরিশপুর বাইপাস মোড় থেকে শহরের মধ্য দিয়ে বনবেলঘরিয়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিমি. সড়ক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। প্রকল্প অনুযায়ী ৬২ ফুট প্রস্থ মধ্যে আপাতত ৪৮ ফুটের রাস্তা, ড্রেনের কাজ চলমান আছে। যারমধ্যে ৪ ফুটের একটি ডিভাইডার, তার দুই পাশে ১৮ ফুট করে মোট ৩৬ ফুটের রাস্তা এবং দুই পাশে ৪ ফুট করে মোট ৮ ফুটের ড্রেন থাকবে। তবে, রাস্তা ও ড্রেনের মাঝে বাকি জায়গায় আপাতত ফাঁকা রাখবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। আর এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল তড়িঘড়ি করেই সড়ক প্রশস্ত ভাইডার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ নাটোর পৌরসভা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যথাযথভাবে পরিকল্পনা ও সমন্বয় সাধন না করেই চালু রাখা হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প অনুয়ায়ী রাস্তা উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুই পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও একটু উঁচুতে করা হচ্ছে। তাছাড়া, রাস্তার দুই পাশে আর কোন জায়গা না থাকায় নাটোর পৌরসভার অধীনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণে দেখা দিয়েছে জটিলতা। ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা সড়ক প্রশস্তকরণ ও ডিভাইডার নির্মাণ কাজের মূল অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রকল্প অনুয়ায়ী রাস্তার দুইপাশে ড্রেন উঁচু করে নির্মাণ করলে বর্ষায় শহরের পানি পৌরসভার ড্রেন দিয়ে নবনির্মিত ড্রেনে পড়বে না। বরং ড্রেনের পানি উল্টো পৌরসভায় ঢুকে পড়বে। এতে করে শহরে জলাবদ্ধাসহ পৌরবাসী নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। এছাড়া, রাস্তার দুইপাশে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় যেসকল স্থাপনা অপসারনেও সমন্বয়হীনতা ও ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনা দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে স্থাপনা অপসারণের কাজ শুরু হয়নি। কিছু স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হলেও এখন অনেক স্থাপনা অপসারণ বাকি আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কনট্রাক্টর জানান, এই প্রকল্পের জন্য নাটোরবাসী অনেক খুশি। কিন্তু শুধু নিরীহ অসহায় লোকের বসতবাড়ি, স্থাপনা অপসারণ করলে হবে। শহরের অনেক প্রভাবশালীর স্থাপনাও সরাতে হবে। নইলে হিতে বিপরীতই হবে। নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত একটি উন্নয়ন কাজ নাটোরে হওয়ায় আমরা আনন্দিত। কিন্তু সড়ক ও জনপদ বিভাগ পৌরসভা ও অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় না করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে কাজ করায় পৌরবাসী ভবিষ্যতে নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। আমরা ইতোমধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ড্রেন নির্মাণের জন্য দাবি উত্থাপান করেছি। প্রকল্প পাশ হওয়ার পূর্বে রাস্তার দুইপাশে পানি সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প পাশের পর পৌরসভার পানি সরবরাহের লাইন না রেখেই প্রকল্পের কাজ শুরু করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, পৌরসভার পানি সরবরাহ ও ড্রেন নির্মাণের জন্য আলাদা জায়গা নেই। সড়ক বিভাগের নির্ধারিত জায়গায় ডিভাইডার, দুইপাশে দুটি রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে পৌরসভার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থার নিরসন করতে প্রকল্প সংশোধন করে প্রায় এক কোটি টাকার অতিরিক্ত বাজেট চাওয়া হচ্ছে।
×