ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা ॥ স্থানীয়রা অতিষ্ঠ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ নভেম্বর ২০১৭

নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা ॥ স্থানীয়রা অতিষ্ঠ

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা, যার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে স্থানীয়রা। সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিলেও সেই মানবিক আচরণের মূল্য রোহিঙ্গারা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ এখন স্থানীয়দের। অথচ, শুরুতে স্থানীয়রাই এ জনগোষ্ঠীর দুর্দশা দেখে আবেগ আপ্লুত হয়েছিল। বর্তমানে নতুন ও পুরনো মিলে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে টেকনাফ ও উখিয়ায়। দিন যতই যাচ্ছে এদের চাপ ততই অনুভূত হচ্ছে স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা এবং জীবিকায়। অনেক বাংলাদেশীই বেকার সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। কেননা, ত্রাণ পাওয়া রোহিঙ্গারা যে মজুরিতে কাজ করে সে স্বল্প মজুরিতে বাংলাদেশীদের কাজ করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন এনজিও এবং ঠিকাদাররা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের নিয়ে ঠিকাদারি কাজ পরিচালনা করছে। বাড়ছে খুন ডাকাতি ॥ অনুপ্রবেশের দুই মাসের মাথায় রোহিঙ্গারা খুন, ডাকাতি, ইয়াবা ও মানবপাচার, হামলা এবং বনভূমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা বসতিতেই রয়েছে নিজেদের মধ্যে মারামারি এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। পুলিশ প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলেও তাদের করতে হচ্ছে সালিশ বিচারের কাজও। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের হাতে হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের একজন এসআই। ছুরিকাঘাত করে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে টেকনাফের লেদা এবং রামুর খুনিয়াপালং এলাকার দুই যুবককে। রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফে উজাড় হয়েছে বনভূমি, ধ্বংস হয়েছে বন্যহাতির আবাস ও বিচরণস্থল। লাখ লাখ মানুষের বর্জ্য বিষিয়ে তুলছে এলাকার পরিবেশ। রোহিঙ্গাদের আক্রমণের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। ভবিষ্যতে রোহিঙ্গারা চরম বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কুতুপালং ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকান্ড নজরে রাখতে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বেদখল হচ্ছে স্থায়ী বাসিন্দাদের কৃষি জমি ॥ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে হুমকির মুখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা এবং উপার্জনের উৎস। উখিয়া-টেকনাফে স্থানীয় অধিবাসীদের কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রথমে তাদের যে সহমর্মিতা ছিল, তা এখন ক্রমেই রোষে পরিণত হচ্ছে। তাদের এখন নিজেদের জীবন-জীবিকার জন্য হুমকি মনে করছে স্থানীয়রা। ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির আগে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। এ কাজে যতই বিলম্ব হতে থাকবে, স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরোধ ততই বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় হাজারো রোহিঙ্গা ॥ সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরও হাজারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে। দরিদ্র রোহিঙ্গারা অর্থাভাবে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারছে না। নৌকার মাঝিরা রোহিঙ্গা পারাপারের জন্য মাথাপিছু আদায় করছে ৬০ হাজার কিয়েত। নৌকা ভাড়া না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে নাফ নদীর ওপারে প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষমান। নৌকার ভাড়া যাদের ছিল তারা বাংলাদেশ পৌঁছতে সক্ষম হলেও গরিব রোহিঙ্গারা আটকা পড়ে আছে সীমান্তের বেড়িবাঁধে।
×