ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ইতিহাসের মহানায়কদের নিয়ে নাট্যোৎসব শুরু কাল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ নভেম্বর ২০১৭

ইতিহাসের মহানায়কদের নিয়ে নাট্যোৎসব শুরু কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ব্যতিক্রমী এক নাট্যোৎসব। মঞ্চনাটকের মাধ্যমে উঠে আসবেন ইতিহাসের মহানায়কেরা। কালোত্তীর্ণ চরিত্ররা আবির্ভূত হবেন দর্শকদের সামনে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাউলসাধক লালন সাঁই, ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সূর্যসেন, মহাত্মা গান্ধী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও গৌতম বুদ্ধ ইতিহাসের এই সাত মহানায়কের জীবননির্ভর নাটক মঞ্চস্থ হবে। কাল শনিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে শুরু হচ্ছে নাট্যোৎসব ‘ইতিহাসের মহানায়কেরা’। ঢাকার পাঁচটি, চট্টগ্রামের একটি এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটিসহ সাতটি নাট্যদলের ৭টি নাটক নিয়ে উৎসবটির আয়োজন করেছে ইউনিভার্সেল থিয়েটার। উৎসবের মঞ্চস্থ হবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, বাউলসাধক লালনকে নিয়ে থিয়েটারের নাটক ‘বারামখানা’, বিপ্লবী সূর্যসেনকে নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরির নাটক ‘সূর্যসেন’, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লোকনাট্য দলের ‘মুজিব মানেই মুক্তি’, ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধীর নোয়াখালী সফর নিয়ে ইউনিভার্সেল থিয়েটারের নাটক ‘মহাত্মা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে নিয়ে আরণ্যক নাট্যদলের প্রযোজনা ‘এবং বিদ্যাসাগর’ এবং গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী নাট্য ভাবনার নাটক ‘শ্রমণ’। কাল শনিবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি থাকবেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট (আইটিআই) বিশ্বকেন্দ্রের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। সভাপতিত্ব করবেন উৎসব আহ্বায়ক পুলক রাহা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঞ্চস্থ হবে পালাকারের প্রযোজনা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল।’ বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির মিডিয়া সেন্টারে ইউনিভার্সেল থিয়েটার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ইউনিভার্সেল থিয়েটারের সভাপতি আজিজুল পারভেজ। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উৎসব আহ্বায়ক পুলক রাহা, সদস্য সচিব শওকত আলী মনসুর, সাংগঠনিক সম্পাদক দীন ইসলাম শ্যামল, নাট্যশিল্পী আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে ১০ নবেন্বর পর্যন্ত চলবে এ উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নাটকের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে সেমিনারের আয়োজন থাকবে উৎসবের শেষদিন ১০ নবেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় একাডেমির সেমিনার কক্ষে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন বিপ্লব বালা। কবি বিমল গুহর জন্মদিনের আনন্দ আয়োজন ॥ মুক্তিযুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশে সাহিত্যকাশে আবির্ভূত হয়েছিলেন একঝাঁক নবীন কবি। তাদেরই একজন সত্তরের দশকের বিশিষ্ট কবি বিমল গুহ। কবিতার বিষয় ও প্রকরণে এই কবি নির্মাণ করেছেন স্বতন্ত্র রীতি ও সক্রীয় পরিচয়। গত ২৭ অক্টোবর ছিল কবির জন্মদিন। সেই সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার উদ্্যাপিত হলো ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। কবিকে নিবেদিত কবিতাপাঠ, চিত্রশিল্পীর ছবি আঁকা, কবিদের জমাট ও তার কবিতা কীর্তি নিয়ে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় সাজানো আয়োজন। জন্মদিনের সে আয়োজনে ভক্ত-শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় সিক্ত হলেন কবি বিমল গুহ। হেমন্তের বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে আয়োজন করে কবি বিমল গুহ জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদ। শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই কবির শতবর্ষী জীবন কামন করে বক্তারা বলেন, তার দীর্ঘ জীবন প্রসারিত করবে বাংলা কাব্য ভুবনকে। তার কলমের সচলতায় সমৃদ্ধ হবে স্বদেশের কবিতার আঙিনা। কবি হিসেবে তিনি যেমন মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন তেমনি অমায়িক ব্যবহার ও জনদরদী মানুষ হিসেবেও তিনি সবার কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি তরুণদের কাছে শুধু ভাল কবি হিসেবেই পরিচিত নন এক হিতাকাঙ্খী চরিত্র তার মাঝে সদা বিরাজমান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের সাহিত্য জগতে স্থান করে নেয়া নবীন কবিদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। বক্তারা আরও বলেন, কবির পরিচয়টি প্রধান হলেও বিমল গুহ ছড়াকার ও এবং গবেষক হিসেবেও রেখেছেন উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক ও কলেজ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাবন্ধিক হায়াৎ মামুদ ও কবি শ্যামলকান্তি দাশ। কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কবি রুবী রহমান, কবি নাসির আহমেদ, কবি ঝর্না রহমান, অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, অধ্যাপক মুহিতুল আলম, রফিকুল হক দাদু ভাই, ড. শুধাংশু শেখর রায়, কবি মোহন রায়হান, কবি জাহিদ হায়দার, নুরুল করিম নাসিম প্রমুখ। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কবির স্ত্রী মীনা গুহ। সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকাশক খান মাহবুব। কবিতার সঙ্গে চিত্রাঙ্কনের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে উচ্চারিত বিমল গুহের কবিতা। ‘ভোরের পাখি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ ॥ ভাষাসংগ্রামী শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ১৩১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে স্মারক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বৈকালিক এ অনুষ্ঠানে ‘ভোরের পাখি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন লেখক-গবেষক ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী আরমা দত্ত উপস্থিত ছিলেন। নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একটি ভেদ-বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ মানবিক সমাজ গড়ার সংগ্রামে অনাগতকাল ধরে ধ্রুবতারা হয়ে আমাদের পথ দেখাবেন। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সংবিধান সভায় পাকিস্তানের ভাষা বিতর্কের সূচনা করেন কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উপনেতা ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। পাকিস্তানের সংবিধান সভা গণপরিষদে কোন ভাষা ব্যবহার হবে, এই প্রসঙ্গে সরকারী মুসলিম লীগ দলের প্রস্তাব ছিল উর্দু ও ইংরেজী। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত তার প্রস্তাবের পক্ষে গণপরিষদে যে ভাষণ দেন তাতে তিনি দৃঢ়ভাবে বাংলাকে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকের ভাষা হিসেবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানের দাবি জানান। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সাহস ও প্রজ্ঞার সঙ্গে সংবিধান সভায় এই দাবিটি তুলে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার বংশীবাদকের ভূমিকা পালন করলেন। ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু এই গৌরবোজ্জ্বল অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে তাকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিলেন। আমরা পেলাম বাঙালীর ইতিহাসের প্রথম জাতি-রাষ্ট্র, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, একাত্তরে পুত্রসহ বর্ষীয়ান ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী কুমিল্লা সেনানিবাসে দিনের পর দিন নিষ্ঠুরতম নির্যাতন করে হত্যা করে। এভাবে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সালের প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদাররা শারীরিকভাবে এই বরেণ্য বীরকে হত্যা করতে সক্ষম হলেও তার কালজয়ী আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি।
×