ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘প্রবাসী স্বামীর জমি দখল করতেই বিউটিকে মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়ানো হয়’

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ নভেম্বর ২০১৭

‘প্রবাসী স্বামীর জমি দখল করতেই বিউটিকে মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়ানো হয়’

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী ॥ বিউটি বেগমের স্বামী প্রবাসী আব্দুস সালামের ভিটেবাড়ি ও জায়গা জমি দখল করার হীন উদ্দেশ্যেই আজিজা হত্যা মামলায় তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে এবং মিথ্যা মামলায় বিউটি বেগমকে আসামি করে তাকে এবং তার পরিবারকে বাড়িঘর ছাড়া করে তার বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট, নগদ টাকা, ৪টি গাভী, ৫টি ছাগল লুট করে নেয়ারও অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলনে। তারা মিথ্যা মামলা থেকে বিউটি বেগমসহ অন্যদের অব্যাহতিদানের আবেদন জানান এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নরসিংদী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আজিজা হত্যা মামলার ১ নং আসামি বিউটি আক্তারের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিউটি আক্তারের পিতা বাচ্চু মিয়া, ভাই আমজাদ হোসেন এবং এলাকার ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান খান ও বিউটি আক্তারের নিকটাত্মীয় শাহরিয়ার সিদ্দিকী শওকত প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় বিউটি আক্তার নিহত আজিজার আপন চাচি। কয়েক দিন পূর্বে বিউটি আক্তারের ঘর থেকে একটি মোবাইল ফোন ও ৩০ হাজার টাকা চুরি হয়। গ্রাম্য কুসংস্কার মতে বিউটি আক্তার কবিরাজের মাধ্যমে আয়না পড়া দিলে তাতে আজিজার নাম ভেসে আসে। পরবর্তীতে আজিজার চাচি বিউটি আক্তার তাকে কোন প্রকার চাপ না দিয়ে মোবাইল ফোন ও টাকা নিয়ে থাকলে তা দিয়ে দেয়ার জন্য বলে। এ ঘটনায় আজিজা ৩ দিন উধাও থাকার পর সে নিজ ইচ্ছাই বাড়িতে ফিরে আসে। ঘটনার দিন গত ২৭ অক্টোবর আজিজা মুদি দোকানদার মিজান ফরাজির দোকান থেকে কেরোসিন ক্রয় করতে যায়। এ সময় দোকানদার তাকে কেন একা দোকানে এসেছে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আড়ালে আমার মা দাঁড়িয়ে আছে। এর পর পরই রহস্যজনক মৃত্যুর সন্ধান পাওয়া যায়। আসলে এটা কি হত্যা না আত্মহত্যা তা এখনও তারা বুঝে উঠতে পারেননি। আজিজার বাবা আব্দুস সাত্তার এক ১ নং আসামি বিউটি আক্তারের স্বামী আব্দুস সালামের আপন ভাই। আব্দুস সালাম বর্তমানে মালয়েশিয়ায় চাকরিরত। আব্দুস সাত্তার সব সময় এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত থেকে অশান্তি সৃষ্টি করে আসছে। তার বিরুদ্ধে একটি খুনের মামলায় ১২ বছর জেল খাটার অভিযোগও রয়েছে। নরসিংদী পৌরসভাধীন ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার কাজল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ রোমান হোসেনের সঙ্গে নিহত আজিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পুলিশ সেই সূত্র ধরে রোমান ও তার বন্ধু সদর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার আলম মিয়ার ছেলে সুজন (২১) ও নাগরিয়া কান্দি গ্রামের মনু মোল্লা বাড়ির ভাড়াটিয়া জহু মিয়ার ছেলে রেজাউল করিমকে গ্রেফতার করে। তাদের নিকট থেকে বিউটি বেগমের চুরি যাওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা আজিজাকে নরসিংদী সদর উপজেলার বালুসাইর সøুইসগেটে একটি বাড়িতে আটকে রেখে শ্লীলতাহানি করে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেছিল বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। নরসিংদীর পুলিশ সুপারও গত ১ নবেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আমেনা বেগম বিপিএম ঘটনার দিন দুপুর বেলায় কিশোরী আজিজা তার প্রেমিক রোমানের মোবাইলের ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য পরিবারের লোকজনকে কিছু না বলে নরসিংদী শহরে আসে। রোমানের সঙ্গে দেখা হবার পর আজিজার পরিবার তাকে জোরপূর্বক বিয়ে ঠিক করেছে বলে প্রেমিক রোমানকে জানায় আজিজা। এ বিয়েতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে একটি ঘর ভাড়া করে এখানেই রাখার দাবি জানায়। আজিজা স্কুলে অধ্যয়নরত ছাত্রী ছিল না। আজিজার বয়স বর্তমানে ১৭ বছর বলে তারা জানান। ২০১১ সালে সে খৈনকুট প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক পরীক্ষা শেষ করে সে আর স্কুলে আসেনি। অপর দিকে কিশোরী আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত পুলিশ বলতে পারছে না ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবপুর মডেল থানায় উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, মামলার এজাহারভুক্ত ৩ আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী আবদুস সাত্তারের দাবি এজাহারভুক্ত আসামিরাই তার মেয়ে আজিজাকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
×