ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ নভেম্বর ২০১৭

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান জনকের বুক থেকে তখনও রক্ত ঝরছে। সেই রক্ত নদী পায়ে মারিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসে গেছে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মুশতাক। সেনা নৌ বিমান বাহিনীর প্রধানরা সাহসী হন। বীরের মতো দাপিয়ে বেড়ান সর্বত্র। অথচ সেদিন তারা অস্ত্র ফেলে হাতভর্তি করে চুরি পরেছিলেন। রেডিওতে ঘোষণা দিয়ে ঘাতকদের দলে ভিড়েছিল নির্লজ্জ কাপুরুষের দল। এভাবে একে একে খসে পড়ছিল সব মুখোশ। হ্যাঁ, ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছিল বটে। বিরুদ্ধ সময়। কিন্তু এ সময়ই দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের অগ্নিপরীক্ষায় বিজয়ী হয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন জাতীয় চার নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে এক চুল সরানো যায়নি তাঁদের কাউকে। চারটি দুর্ভেদ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের মুজিবপ্রেম নীতি-আদর্শ ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল জাতীয় বেইমানদের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-ের পর জাতীয় চার নেতাকে পাশে পাওয়ার সব চেষ্টা করে খুনী চক্র। কিন্তু চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়। এ অবস্থায় ৩ নবেম্বর তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় খুন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরদের। আপস নয়, মৃত্যুকে হাসিমুখে আলিঙ্গন করেছিলেন জাতীয় চার নেতা। বছর ঘুরে আবারও এসেছে সেই দিন। আজ শুক্রবার ইতিহাসের কালো অধ্যায় জেল হত্যা দিবস। কী যে বেদনা! কী যে ব্যথা! নতুন করে সামনে এসেছে। তবে শুধু বেদনা নয়। শোক করা নয় শুধু। বাঙালীর গর্ব করার দিন ৩ নবেম্বর। এদিন দেশ জয়ী হয়েছিল। যার জন্য দেশ পাওয়া সেই নেতা শেখ মুজিবের আদর্শ জয়ী হয়েছিল। পরাজয় মেনে নিতে হয়েছিল মৃত্যুকে। আজ নানা আয়োজনে ইতিহাসটি স্মরণ করবে শহর ঢাকা। সকালে কারাস্মৃতি জাদুঘরের সামনে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন পরিবারের সদস্যরা। দিনভর চলবে সভা সেমিনার। তার চেয়ে বড় কথা, সাধারণ মানুষের মনে, প্রকৃত নেতাকর্মীদের মনে বেঁচে থাকবেন জাতীয় চার নেতা। তাঁদের আত্মত্যাগের ইতিহাস আগামী দিনের বাংলাদেশকে পথ চেনাতে সহায়তা করবে। এবার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের কথা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণ দিয়েছিলেন বাঙালীর নেতা শেখ মুজিব, আজ তা নতুন করে সামনে এসেছে। গত কয়েকদিন আগে ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তথ্যভিত্তিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে খোলা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশের মহান নেতার বজ্রকণ্ঠ। সংস্থার ওয়েবসাইটে ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক ঐতিহ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দারুণ এ খবরে সারাদেশের মতো ঢাকায়ও এক ধরনের উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নানাভাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে সেই অমর বাণী এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। মাত্র ১৭ মিনিটের ভাষণ স্বাধীনতার গোলাপ হয়ে ফুটছিল। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক বিশ্বখ্যাত জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে এই ভাষণ। একই ভাষণ আজ এবং আগামীকালের বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোর প্রধান ভিত্তি। আর তার পর বিশ্ব সম্পদ হিসেবে অর্জন করল আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। যে কোন বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এই অর্জন। ৭ মার্চ এভাবেই ফিরে ফিরে আসুক। চেতনায় বেঁচে থাকুক। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×