ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩ নভেম্বর ২০১৭

জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে

ফিরোজ মান্না/মামুন-অর রশিদ, রাজশাহী থেকে ॥ ‘তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি’ এই দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করতে প্যারা কমান্ডোদের প্রতি আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে প্যারা কমান্ডোদের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার কথাও বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ আজ আর কোন একটি দেশ বা জাতির সমস্যা নয়। ধনী-গরিব, উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে বিশ্বের সকল দেশের জন্যই সমস্যা। বিশ্ব শান্তির জন্যও মারাত্মক হুমকি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এ ব্যাটালিয়নের প্রতিটি সদস্যকে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় সেই ঐতিহাসিক দিন থেকে শুরু করে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সেনাবাহিনী আজ কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেনাবাহিনী আজ চৌকস ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আজকের এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যারা আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেন। দেশমাতৃকার জন্য তাদের অবদান জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তিনি বলেন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। বর্তমান সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’র ধারাবাহিকতায় এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০’র আলোকে সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ফর্মেশন ও সমরসজ্জার অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি প্রতিষ্ঠিত ও গ্রহণযোগ্য বাহিনী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। স্পেশাল ফোর্স তথা কমান্ডোদের আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে তাদেরকে আধুনিক অস্ত্র ও সমরসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। বিদেশে সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স ১ প্যারা কমান্ডো সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সদস্য তথা কমান্ডোরা দেশের চৌকস, সুশৃঙ্খল ও দুঃসাহসী সেনানী। মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তারা জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ ও আত্মোৎসর্গ করার সংকল্পে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিদেশে শান্তি মিশনে সেনাসদস্যরা সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। এটা দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করছে। সাম্প্রতিক দুটি জঙ্গীবিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আবদুল হামিদ বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সফল জিম্মি উদ্ধার অভিযান ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিচালনা করে নিজেদের কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ১৩ দেশী-বিদেশী নাগরিককে উদ্ধার করে দেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে। পরবর্তীতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় আতিয়া মহলে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সাহসিকতার সঙ্গে পরিচালনা করে। সেনাবাহিনীর এই প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ শুরু হয় ১৯৯২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাটালিয়নটি আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমান সরকার ব্যাটালিয়নের জনবল বৃদ্ধি করে গত বছর এ্যাডহক প্যারাকমান্ডো ব্রিগেড এবং এ্যাডহক প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করে। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, সামরিক জীবনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত হয় এবং নৈপুণ্য নিশ্চিত করা যায়। সঠিক প্রশিক্ষণ পেশাগত মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের প্রশিক্ষণের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রশিক্ষণের সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন বাঙালী জাতির সুনাম সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিম-লে যৌথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ ও পারস্পরিক সৌহার্দের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতার প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি। সাম্প্রতিক পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধস, উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সেনাবাহিনীর কর্মযজ্ঞের প্রশংসা করেন আবদুল হামিদ। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোটর শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে রাজশাহী সেনানিবাসের শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক তাকে স্বাগত জানান। পরে রাষ্ট্রপতি খোলা জীপে প্যারেড পরিদর্শন করেন। ১ প্যারাকমান্ডো ব্যাটালিয়নের চৌকস সদস্যরা মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করেন। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিম-লে যুদ্ধ অথবা শান্তিকালীন বীরত্বপূর্ণ কৃতিত্ব বা বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় পতাকা প্রদান করা হয়ে থাকে; জাতীয় পতাকা অর্জন কোন ইউনিটের জন্য দক্ষতা, মর্যাদা ও সুনামের স্বীকৃতি। জাতীয় পতাকা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি তার সম্মানে আয়োজিত প্রীতিভোজে অংশ নেন। প্রীতিভোজের আগে রাষ্ট্রপতিকে প্যারাকমান্ডোদের একটি পেন্টিং ও প্যারাকমান্ডোদের পক্ষ থেকে একটি ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়। প্রীতিভোজ ও প্যারেড অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার, বগুড়ার এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোশফেকুর রহমান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি, আবদুল ওয়াদুদ দারা এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, আক্তার জাহান এমপি, সিলেটের মাহমুদুস সালাম এমপি উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রাজশাহী সেনানিবাসে অবস্থিত শহীদ কর্নেল আনিস প্যারেড গ্রাউন্ডে ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড (জাতীয় পতাকা) প্রদান অনুষ্ঠান উপলক্ষে পুরো গ্রাউন্ড সাজানো হয় রং-বেরঙের পতাকা দিয়ে।
×