ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চার মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২ নভেম্বর ২০১৭

চার মাসে রেমিটেন্স বেড়েছে ২৯ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) দেশে রেমিটেন্স এসেছে ৪৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪২৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। সে হিসেবে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ একক মাস হিসেবে অক্টোবরে রেমিটেন্স এসেছে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার; যা সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ডলার বা ৩৫ শতাংশ বেশি। এটি গেল অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার বা সাড়ে ১৪ শতাংশ বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই রেমিটেন্সের প্রবাহে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত অর্থবছরেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। এর পিছনে কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এতে তারা দেশে কম পরিমাণের অর্থ পাঠাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে। তৃতীয়ত মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারে হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ উপায়ে টাকা দ্রুত প্রবাসীর আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা উর্ধমুখী ধারায় ফিরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে। তবে সেপ্টেম্বরে রেমিটেন্স আসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। আর অক্টোবরে এসেছে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। মূলত ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুসহ বাড়তি কেনাকাটার কারণে আগস্ট মাসে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ৪৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪২৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। সে হিসেবে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে ২৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রীয় খাতের ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ২৮ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। এ মাসে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংক দুটির মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৫ লাখ ডলার। তথ্যে আরও দেখা যায়, বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে অক্টোবরে ৮৫ কোটি ১১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ দেশে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ডলার; যা গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনি¤œ ছিল। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১৪ শতাংশ কম ছিল। আগের অর্থবছরে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। এদিকে প্রবাসী আয়ে মন্দাভাবে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ। তাই প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে সম্প্রতি নানান উদ্যোগও নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল গত মার্চে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবে গিয়েছিল। তিন দেশেই দলটি দেখেছে, বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের নামে রেমিটেন্সের অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ হিসাবে ওই টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় ডাচ-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের নামেও দেয়া হচ্ছে এই সেবা। এদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে সেবার মান বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিটি শাখায় রেমিটেন্স হেল্প ডেস্ক, বৈধপথে রেমিটেন্স আনার সুযোগ-সুবিধা প্রচার ও জরুরী ভিত্তিতে প্রবাসীদের অভিযোগ নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থাসহ ছয়টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর সুফল পাওয়া যাবে অচিরেই। ইতোমধ্যে রেমিটেন্স বাড়তে শুরু করেছে।
×